২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে ইশ্বরগঞ্জে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি

সোমবার ৬ মে ২০২৪ ১৮:৫৮


এহছানুল হক,ঈশ্বরগঞ্জ (ময়মনসিংহ) 
তীব্র তাপপ্রবাহের পর কালবৈশাখী ঝড়ের সঙ্গে ২০ মিনিটের ব্যাপক শিলাবৃষ্টি হয়েছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। এতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে ফসলি জমি  ও ঘরবাড়ির। বিশেষ করে বোরোধান, মরিচ, বেগুন, চাল কুমড়া,মিষ্টি কুমড়া,শসা, করলা, ডাটা, আম ও লিচুর ক্ষতি হয়েছে। এসময়ে ক্ষেতে থাকা পাকা ধানের ক্ষতি সবচেয়ে বেশি হয়েছে।উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের ভাটিচরনওপাড়া(বনপাড়া),
উজানচর-নওপাড়া(ফকিরপাড়া) বেশ কয়েকটি গ্রামে শিলাবৃষ্টি হয়েছে। এছাড়া উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের 
নওশতি গ্রাম এবং উচাখিলা ইউনিয়নের কয়েকটি গ্রামেও শিলাবৃষ্টির খবর পাওয়া গেছে। 
স্থানীয়রা জানান, গতকাল(৫ মে) রবিবার বিকাল ৫টার  দিকে শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া। সন্ধ্যারপর বাতাসের গতি বাড়তে থাকে।পরে আনুমানিক রাত বারোটার দিকে ঝড়ের সাথে শুরু হয় বৃষ্টি। এরপর থেমে যায় বৃষ্টি। রাত দুইটার দিকে হঠাৎ ফের শুরু হয় ঝড়ো হাওয়া সঙ্গে  শিলাবৃষ্টি। মাত্র ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে শেষ হয়ে যায় কৃষকের স্বপ্ন।
এলাকাবাসী বলছেন,বিগত ৩০ বছরেও এমন শিলাবৃষ্টি তারা দেখেনি। শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ে  ফসলের ক্ষেত  ও টিনের ঘরবাড়িতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। শিলাবৃষ্টিতে অনেকের ঘরের টিন ছিদ্র হয়ে যায়। ভেঙে ক্ষতিগ্রস্ত হয় অনেক কাঁচা ঘরবাড়ি। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে বোরো ফসলের। শিলাবৃষ্টির আঘাতে ঝড়ে পড়েছে জমির পাকা ধান,মরিচ ও বেগুনসহ বিভিন্ন জাতের সবজি। এতে  ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়বে বলে শঙ্কা কৃষকদের।
উপজেলা কৃষি অফিসের তথ্যমতে, উপজেলার ২ হেক্টর ফসলি জমির বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। বিভিন্ন ধরনের সবজির ক্ষতি হয়েছে ৪.৯ হেক্টর জমির। ফলে শিলাবৃষ্টিতে ধান ও সবজির আনুমানিক ক্ষতির মোট পরিমাণ ১৬ লক্ষ ৭২ হাজার টাকা। 
রাজিবপুর ইউনিয়নের উজানচর-নওপাড়া গ্রামের কৃষক 
আল-মামুন বলেন, 'আমার ৬০ শতাংশ জমিতে প্রতিবছর ধান ৪২-৫০ মণ পেতাম। এছাড়া ৩৫ শতাংশ জমিতে মরিচ করে গত বছর ১ লাখ টাকার ওপর বিক্রি করেছিলাম। এবার ফসল ভালো হয়েছিল। আশা করেছিলাম ফলন ভালো পাবো, কিন্তু শিলাবৃষ্টিতে সব হয়ে গেছে। অনেক কৃষক ঋণ করে এবং ধারদেনা করে এসব ফসল চাষ করেছে। সরকারের কাছে আমাদের একটাই দাবি- আমাদের কৃষিঋণ মওকুফ করে  কৃষিকাজে সার্বিক সহযোগিতা কামনা করছি। 
একই গ্রামের আরেক কৃষক আবুল কাশেম বলেন, মাত্র ২০ মিনিটের শিলাবৃষ্টিতে আমার মরিচ ক্ষেতের ব্যাপক  ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। সব মরিচ ঝরে পড়ে গেছে, শুধু গাছ দাঁড়িয়ে আছে। দাঁড়িয়ে থাকা গাছগুলোও হয়তো মারা যাবে।
ওই গ্রামের এক গৃহবধূ  শামীমা আক্তার সীমা বলেন,  প্রচণ্ড গরমের মধ্যে হঠাৎ শিলাবৃষ্টি শুরু হয়। আমার ঘরের অধিকাংশ টিন ছিদ্র হয়ে ঘরের ভেতরেও শিলা পড়ে।এখন পরিবার নিয়ে কোথায় যাবো। এই ভাঙা ঘরে কীভাবে থাকবো বুঝতে পারছি না।   আমার আশপাশের কয়েকটি বাড়িঘরে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। 
তফাজ্জল হোসেন নামে অপর এক কৃষক বলেন, আমার ১৫০ শতাংশ জমিতে ঝিঙা,চিচিঙ্গা, করলা,শসা ও মিষ্টি কুমড়াসহ বিভিন্ন জাতের সবজি চাষ করেছিলাম। এই সবজি গুলো চাষ করতে প্রায় ৩ লাখ টাকা খরচ  হয়েছে। ভেবেছিলাম মৌসুম শেষে ৪-৫ লাখ টাকা লাভ হবে। এখন শিলাবৃষ্টি সব শেষ করে দিলো। 
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রিপা রানী চৌহান বলেন,শিলাবৃষ্টিতে উপজেলার রাজিবপুর ইউনিয়নের বোরোধান ও সবজির কিছু ক্ষতি হয়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মাঠ পর্যায়ে আমরা কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছি। সরকারিভাবে যদি কৃষকদের সহযোগিতা করার কোন সুযোগ আসে তাহলে ব্যবস্থা  গ্রহণ করা হবে। 
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, 'ইতোমধ্যে কৃষি ডিপার্টমেন্ট ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করে আমাকে জানিয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিভাগের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের  প্রণোদনা দেওয়ার কোন সুযোগ থাকলে  পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। এছাড়া ঝড়ে  ঘরবাড়ির কোন ক্ষতি হলে ভোক্তভোগীরা আবেদন করলে  প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে'।
 

এমএসি/আরএইচ