পাঁচবার ফলন দেওয়া 'পঞ্চব্রীহি' সারাদেশে ছড়িয়ে দিতে চান আবেদ চৌধুরী

শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪ ১২:১৭


বিশেষ প্রতিনিধি:
'আমরা কৃষির ওপর খুব নির্ভরশীল। তবে ধান চাষ করে উন্নত জীবনযাপন করা কঠিন। এটা আমার জন্য খুব পীড়াদায়ক ছিল। কারণ কৃষিনির্ভর পরিবারের মানুষ দেশে খুব অবহেলিত। কৃষকেরা ধানের মূল্য পাচ্ছে না। তাই আমি চেষ্টা করলাম, কৃষিতে কীভাবে ব্যয় কমিয়ে আয় বাড়ানো যায়। এ জন্য এমন ধান উৎপাদনের চেষ্টা করি,যা একবার রোপণ করে একাধিকবার ফসল পাওয়া যাবে। এতে কৃষকের উৎপাদন খরচ কমবে,বাড়বে আয়। আমি এই জিনিসটাই করতে চেয়েছি। অত্যন্ত আনন্দের বিষয়,সেটা করতে পেরেছি';-পঞ্চব্রীহি ধান নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আয়োজিত গত বুধবার (২৪ এপ্রিল) সকাল ১১.৩০টায় সেন্টার ফর অ্যাডভান্সড রিসার্চ ইন সায়েন্সেসের কনফারেন্স রুমে (২য় তলা) এ সেমিনারে জিনবিজ্ঞানী ও ধান গবেষক আবেদ চৌধুরী।
উক্ত সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবক জিনবিজ্ঞানী ও ধান গবেষক আবেদ চৌধুরী,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর সীতেশ চন্দ্র বাছার,কুলাউড়া উপজেলার মৌলভীবাজার-২ আসনের সংসদ সদস্য শফিউল আলম চৌধুরী এবং  সাবেক শিক্ষা সচিব মো. নজরুল ইসলাম খান। 
পঞ্চব্রীহি ধানের উদ্ভাবক জিনবিজ্ঞানী ও ধান গবেষক আবেদ চৌধুরী শনিবার (২৭ এপ্রিল) বলেন,' বছরের যে কোনো সময়ে এ ধান রোপণ করা যায়। এখন পরের ধাপগুলোতে কিছুটা কম উৎপাদন হচ্ছে। আমার চেষ্টা থাকবে আরও বেশি ফলন বের করার। এ ধানের বীজ সংগ্রহ সহজ। কৃষকরা নিজেরাই তা করতে পারবেন। অন্য ধানের মতো বীজতলায় রোপণের পর চারা তুলে চাষ করতে হয়। এর আগে আমি অন্য ধানের জাত উদ্ভাবন করেছি। দুবার ফসল হয়, এমন ধানও উদ্ভাবন করেছিলাম; যাকে আন্তর্জাতিক মিডিয়া ‘রাইস টোয়াইস’ বলেছে। আবার অনেকে জীবন বর্ধিত ধান বলেছে। এই প্রথম সারা বছর আমার অন্য আরেকটি ধানের জাত মাঠে থাকল। এ ধানের চারা ২৫ সেন্টিমিটার দূরত্বে রোপণ করতে হয়। ফলে গাছটি মাটি থেকে ভালোভাবে শক্তি নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে এবং একটি ধান গাছ থেকে আরও বেশ কয়েকটি ধান গাছ গজাতে থাকে।’
আবেদ চৌধুরী একজন জিনগবেষক। একদল অস্ট্রেলীয় বিজ্ঞানীর সঙ্গে তিনি ফিস (ইন্ডিপেনডেন্ট সিড) জিন আবিষ্কার করেন। লাল রঙের চাল ও রঙিন ভুট্টাও উদ্ভাবন করেছেন। তাঁর ডায়াবেটিস ও ক্যান্সার প্রতিরোধক রঙিন ভুট্টা বিশ্বব্যাপী আলোচিত। বর্তমানে তিনি অস্ট্রেলিয়ায় উচ্চ ফলনশীল ধান উৎপাদন ও ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে গবেষণা করছেন।
কুলাউড়ার কানিহাটি গ্রামের সন্তান আবেদ চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রে কৃষি বিষয়ে উচ্চশিক্ষা শেষে চাকরি নিয়ে চলে যান অস্ট্রেলিয়ায়। সেখানকার জাতীয় গবেষণা সংস্থার প্রধান ধানবিজ্ঞানী হিসেবে ধানের জিন নিয়ে গবেষণা করে কাটিয়েছেন ২০ বছর। এ পর্যন্ত তিনি প্রায় ৩০০ রকম নতুন ধান উদ্ভাবন করেছেন। গ্রামের বাড়ি কানিহাটিতে তুলেছেন কৃষি খামার। তাঁর নামে আবেদ ধানও এলাকায় চাষ করে সফলতা পেয়েছেন কৃষকরা।

এমএসি/আরএইচ

সর্বশেষ