পঞ্চপল্লীর ঘটনায় খুলনা মহাসড়ক অবরোধ: টিয়ারশেল ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ

মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪ ১৯:১৫


ফরিদপুর প্রতিনিধি 
ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লীতে একটি মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধন শেষে বিক্ষুব্ধ জনতা ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করে।
এসময় সোমবার সকাল ১০টা থেকে দুপুর ৩ টা পর্যন্ত প্রায় পাঁচ ঘন্টারও বেশি সময় মহাসড়কে অবরোধের কারণে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিক্ষুব্ধরা ইটপাটকেল ছুড়তে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ টিয়ার শেল ও ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এতে প্রায় ১৫ জনেরও বেশি আহত হয়েছে বলে জানা গেছে। বেশ কয়েকজন শর্টগানের গুলিতে আহত হন। এছাড়া অনেক পুলিশ ও কয়েকজন সাংবাদিক ইটপাটকেলে আহত হন। খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ ও এপিবিএন পৌছে বিক্ষুব্ধদের হটিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার পরে ফরিদপুর-খুলনা মহাসড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে। 
জানা গেছে, পঞ্চপল্লীতে দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যা ও মন্দিরে অগ্নিসংযোগের অভিযোগের প্রতিবাদে সোমবার সকাল ৯ টার দিকে মধুখালী রেলগেটে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। 
মধুখালী ঈদগাহের সামনে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের পাশে সর্বস্তরের জনগণের ব্যানারে মানববন্ধনের আয়োজন করা হয়। এতে শত শত মানুষ অংশ নেন। প্রায় আধা ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভকারীরা দুই ভাইকে পিটিয়ে হত্যায় জড়িত ব্যক্তিদের শাস্তির দাবিতে ঈদগাহ ময়দানে বিক্ষোভ মিছিল করেন। পরে তারা মিছিল সহকারে মহাসড়ক দিয়ে ঘটনাস্থল পঞ্চপল্লী অভিমুখে রওনা হয়। এসময় পুলিশ তাদের বাঁধা দিলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পুলিশের বাধায় বিক্ষোভকারীরা খণ্ড খণ্ড হয়ে মিছিল করতে থাকেন। একাধিক ভাগে বিভক্ত হয়ে মহাসড়কের মালেকা চক্ষু হাসপাতালের সামনে, নোয়াপাড়ার মোড়, মাঝিবাড়ি, আড়কান্দি ও বাগাটের ঘোপঘাটসহ বিভিন্ন স্থানে অবস্থান নেয়। আড়কান্দিতে বিক্ষোভকারীরা সড়কে গাছের গুঁড়ি ফলে অবরোধ করে এবং ঘোপঘাটে টায়ারে গুঁড়িতে আগুন ধরিয়ে দেন। বিক্ষুব্ধরা মহাসড়কে উঠে অবস্থান নিতে চাইলে পুলিশ তাঁদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ও শটগানের গুলি ছোড়ে। তখন বিক্ষোভকারীরা পুলিশের দিকে ইট ছুড়তে ছুড়তে ছত্রভঙ্গ হয়ে যান। নওয়াপাড়ার মোড়ে একটি ইটভর্তি ট্রাক সড়কের মাঝখানে আড়াআড়িভাবে রেখে বিক্ষোভ করা হয়। 
খবর পেয়ে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে পৌছেন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সেখানে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার গিয়ে সব দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়ে বিক্ষোভ প্রত্যাহারের আহ্বান জানান। বিক্ষোভকারীরা তাঁদের ওপর পুলিশের গুলি ও হামলার প্রতিবাদ জানান। জেলা প্রশাসক এ ঘটনারও তদন্তের আশ্বাস দেন। বিক্ষোভকারীরা জেলা প্রশাসকের আহ্বানে সাড়া না দিলে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।
এ ঘটনায় আহতদের মধ্যে কামারখালীর উজানদিয়া গ্রামের সাহেব আলীর ছেলে সোহেল রানা (৪৫) নামে একজনকে এবং বিকেলে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন এপিবিএন সদস্য ওসমান (২৩), ফয়জুর (৩৭), ইবরাহিম (৪২) নামে তিনজনকে ফরিদপুরের বিএসএমএমইউ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া সংবাদ সংগ্রহ করতে যেয়ে স্থানীয় কয়েকজন সাংবাদিক আহত হন। 
এদিকে, দুপুর সোয়া ২ টার দিকে প্রথমে যান চলাচলের চেষ্টা করলে আবার মরিচের বাজারে মহাসড়কে আগুন ধরিয়ে দেয়া হয়। এসময় আড়কান্দিতে পুলিশ, এপিবিএন ও বিজিবি রাস্তা থেকে গাছের গুড়ি সরিয়ে যান চলাচল করতে গেলে সেখানে মহাসড়কের ঢালে লুকিয়ে থাকা বিক্ষুব্ধরা ঢিল ছুঁড়তে থাকে। পরে পুলিশ তাদের ধাওয়া করে হটিয়ে দেয়। এরপর বেলা সোয়া ৩ টার পর মহাসড়ক থেকে গাছের গুড়ি ও জ্বলন্ত টায়ার অপসারণ করার পরে যান চলাচল স্বাভাবিক হয়ে আসে।
মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিরাজ হোসেন বলেন, ডুমাইনের পঞ্চপল্লীর ঘটনাকে কেন্দ্র করে মধুখালী উপজেলার পাইলট স্কুল থেকে নওয়াপাড়া পর্যন্ত বেশ কয়েকটি স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে মহাসড়ক অবরোধের চেষ্টা করে। কোথায় বুঝিয়ে শুনিয়ে কোথাও টিয়ারগ্যাস ও ফাঁকা গুলি নিক্ষেপ করে তাদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা চালায় পুলিশ। একারণে মহাসড়কে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। যানজট নিরসণে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
ফরিদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন ও অপরাধ) মোহাম্মদ এমদাদ হুসাইন বলেন, বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে ম মহাসড়কে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করা হয়। তবে এ ঘটনায় কোনো ব্যক্তি হতাহত কিংবা জানমালের ক্ষতি সাধনের কোনো ঘটনা ঘটেনি।
এদিকে এ ঘটনায় রাত সাড়ে ৮ টায় জেলা পুলিশের সম্মেলন কক্ষে এক প্রেস ব্রিফিংয়ের আয়োজন করা হয়েছে।

এমএসি/আরএইচ

সর্বশেষ