শাবিপ্রবিতে তিন দশকে তিন সমাবর্তন; চতুর্থ সমাবর্তন কবে!

বৃহস্পতিবার ২ মে ২০২৪ ১৩:৩৯


শাবিপ্রবি প্রতিনিধি 
সমাবর্তন মানে মেলবন্ধন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষাজীবনের অর্জনের স্বীকৃতি প্রাপ্তির দিন। অন্যদিকে সমাবর্তনের আরেক নাম উল্লাস আর উদযাপন। এইদিনে কালো গাউন গায়ে দিয়ে হই-হুল্লোড়ে মেতে ওঠেন সবাই। অনেকে এইদিনটির অপেক্ষায় থাকেন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে তার পিতা-মাতা, পরিবার নিয়ে আসবেন এই আশায়। তাই স্নাতক পাস করা প্রতিটি শিক্ষার্থীর অন্যতম চাওয়া সমাবর্তন।
তেমনি চতুর্থ সমাবর্তনের দাবি জানিয়েছেন দেশের প্রথম বিজ্ঞান ও পযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবি) সাবেক শিক্ষার্থীরা। প্রতিষ্ঠার ৩৪ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়টি সমাবর্তনের মুখ দেখেছে মাত্র তিনবার। নিয়মিত সমাবর্তনের দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন মাধ্যমে দাবি জানিয়ে আসছেন। সর্বশেষ ২০২০ সালে তৃতীয় সমাবর্তন আয়োজন করলেও চতুর্থ সমাবর্তন নিয়ে কোনো অগ্রগতি দেখাতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে চরম ক্ষুব্ধ প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা। এ প্রেক্ষিতে দ্রুত সমাবর্তন আয়োজনের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, ১৯৯৮ সালের ২৯ এপ্রিল বিশবিদ্যালয়ের প্রথম সমাবর্তন আয়োজন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক এম হাবিবুর রহমান। প্রথম সমাবর্তনে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদ। এর ঠিক নয় বছর পর ২০০৭ সালের ৬ ডিসেম্বর দ্বিতীয় সমাবর্তন আয়োজন করেন তৎকালীন উপাচার্য অধ্যাপক আমিনুল ইসলাম। দ্বিতীয় সমাবর্তনে সনদ প্রদান করেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি ইয়াজ উদ্দিন আহম্মেদ। তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠিত হয় ২০২০ সালের ৮ জানুয়ারি। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০০১-০২ শিক্ষাবর্ষ থেকে ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেন। তৃতীয় সমাবর্তনে মোট ছয় হাজার ৭৫০ জনকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করা হয়েছিল। বিশ্ববিদ্যালয়ের তৎকালীন আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ এতে উপস্থিত থেকে গ্র্যাজুয়েটদের হাতে সনদ তুলে দিয়েছিলেন।
এরপর আর সমাবর্তন আয়োজন করতে পারেনি বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। মূলত বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সদিচ্ছা ও আন্তরিকতার অভাবকে দায়ী করছেন সাবেকরা।
ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড প্রোডাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী তন্ময় পালিত বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিভিন্ন সময়ে চতুর্থ সমাবর্তন আয়োজনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে কিন্তু বিগত কয়েক বছরেও তা বাস্তবায়ন করতে পারে নি। তাই সাবেকদের একটাই দাবী, দ্রুত চতুর্থ সমাবর্তনের আয়োজন করে সকল শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য সনদপত্র তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক।
এর আগে ২০১১-১২, ২০১২-১৩, ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও তৃতীয় সমাবর্তনে অন্তর্ভুক্ত না করায় চাপা ক্ষোভ প্রকাশ করেন ওই তিন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা। তৃতীয় সমাবর্তনে ওই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত না করায় গ্র্যাজুয়েট হওয়া সত্ত্বেও তাঁরা সমাবর্তন পাননি। এরপর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আরও নতুন পাঁচটি ব্যাচ স্নাতক শেষ করলেও পায়নি সমাবর্তন।
গণিত বিভাগের ২০১২-১৩ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী খালেদ সাইফুল্লাহ ইলিয়াস বলেন, তৃতীয় সমাবর্তনে তিনটি ব্যাচকে বাদ দিয়েছিলো বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। বলা হয়েছিলো পরের বছর সমাবর্তন দেওয়া হবে। সেই কাঙ্ক্ষিত সমাবর্তন  আজো হয়নি, প্রশাসন কথা রাখেনি। অতি দ্রুত চতুর্থ সমাবর্তনের আয়োজন করে প্রশাসন দায়মুক্ত হবে, এমনটাই আমাদের প্রত্যাশা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, চতুর্থ সমাবর্তন খুব দ্রুত সময়ের মাঝে আয়োজনের জন্য রাষ্ট্রপতি বরাবর আমরা আবেদন জানিয়েছি। আশা করছি আগামী সাত দিনের মাঝে আমরা এই বিষয়ে রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত জানতে পারবো।

এমএসি/আরএইচ