লোহাগাড়ায় লাইসেন্স বিহীন ওষুধের রমরমা ব্যবসা

শনিবার ১১ জুন ২০২২ ১২:১৪


মনির আহমদআজাদ, লোহাগাড়া ::
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে উঠেছে ফার্মেসি। আর এসব ফার্মেসি মালিকদের প্রাতিষ্ঠানিক কোন স্বীকৃতি না থাকলেও ডাক্তারদের মতোই চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। ফলে অনেক রোগীর জীবন হচ্ছে বিপন্ন। 

বিশেষ করে এই এলাকার পুরনো ফার্মেসি মালিকদের অনেকেই মুনাফার কারসাজিতে বেশ অভিজ্ঞ। সে কারণে চিকিৎসার নামে ঔষধ দিয়ে সাধারণ রোগীদের ‘পকেট কাটার’ নানা কৌশল অবলম্বন করে লাভও করতে পারছেন বেশি। দিন দিন এলাকায় নিয়মিত বাড়ছে ঔষুধের দোকান। 

উপজেলা নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের গাফিলতি ও কমিশন বাণিজ্যের কারণেই আমিরাবাদ ইউনিয়নের সুখছড়ী কালিবাড়ী, সুখছড়ী কামার দীঘির পাড় সহ সারা উপজেলা হাট-বাজারগুলোতে বাড়ছে ঔষুধের ফার্মেসি এমন অভিযোগ করেছেন অনেকেই। 

বর্তমানে লোহাগাড়ায় দু’শতাধিক ফার্মেসি রয়েছে, যার অধিকাংশের বৈধ কোনো কাগজপত্র নেই। বিভিন্ন ঔষুধ কোম্পানী থেকে বাকিতে ঔষধ ক্রয়-বিক্রয়ের সুযোগ থাকায় অনেকটা অল্প পুঁজিতেও ব্যবসা করতে পারছে ফার্মেসিগুলো। এ কারণে উপজেলার জনবহুল বিভিন্ন এলাকাগুলোতে খুব সহজেই গড়ে উঠছে নতুন নতুন ফার্মেসী। 

নিয়ন্ত্রক সংস্থা ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের লাইসেন্সধারী ওষুধের দোকান ৮০ টির কিছু বেশি হবে। তার মাঝে পাড়ায় পাড়ায়, হাটবাজারে প্রায় বেশিরভাগ ফার্মেসিগুলোতে ড্রাগ লাইসেন্স নেই। দু’ একটার থাকলেও অনেকের আবার নবায়ন নেই। উপজেলার কয়েকজন ফার্মেসি ব্যবসায়ীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওষুধ ব্যবসায় লাভ-লোকসান নির্ভর করে অভিজ্ঞতার ওপর। যে বেশি অভিজ্ঞ লাভ তার তত বেশি। 

অনুসন্ধানে জানা যায়, মফস্বল এলাকায় ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া সর্বরোগের ওষুধ বিক্রি করে। সুখছড়ী কামার দীঘির পাড় এলাকার ৫ম শ্রেণির ছাত্রী রাফা বলে, মা মেডিসিন সেন্টার এর মালিক তার কাছ থেকে  ৫টি নাফা ট্যাবলেটের মূল্য ১৪ টাকা রাখে।  নাফা রেপিড ১০টি ট্যাবলেটের মূল্য ৮ টাকা। অনেক মেয়াদোত্তীর্ণ ওষুধ  খুচরা কিনতে চাইলে কাঁচি দিয়ে এমনভাবে কাটা হয় যাতে উৎপাদন ও মেয়াদোর্ত্তীনের তারিখ চোখে না পড়ে। 

এক্ষেত্রে শিক্ষিত মানুষের পক্ষেও কারসাজি ধরা সম্ভব হয় না। ফার্মেসি কর্তাদের কারসাজিতে ৫ টাকার ওষুধ কিনতে হচ্ছে দ্বিগুন মূল্যে। ফলে ঔষধের কোন কার্যকারিতা পাওয়া যাচ্ছে না। আসল ওষুধের একটির বদলে নকল অন্যটি ক্রেতাকে গছিয়ে দিলে মুনাফা পাওয়া যায় চার-পাঁচগুণ। 

এটা বিশেষ করে গ্রাম-পাড়া-মহল্লার ফার্মেসিগুলোর চিত্র। এসব তদারকির কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেই বললেই চলে। ওষুধ বিক্রি এক সময় ‘অভিজাত ব্যবসা’ হিসেবে স্বীকৃত পেলেও এখন তা নেই। ভোক্তাদের প্রয়োজন আর চাহিদা বুঝে ফার্মেসি মালিকদের অনেকে প্রায় ঔষুধের অযৌক্তিক দাম আদায় করছেন। আবার অনেক রিপ্রেজেন্টেটিভরা দোকানিকে বিভিন্নভাবে প্রলুব্ধ করে নিজেদের ওষুধ বাজারজাত করতে তৎপর থাকেন। ফলে বাকিতে ঔষুধ রেখে বিক্রি করে টাকা দেওয়ার ব্যবস্থা থাকছে। 

এ জন্য কম পুঁজিতেও ওষুধের ব্যবসা জমিয়ে তোলা যায়। এসব কারণে লোহাগাড়া উপজেলায় দিনে দিনে ড্রাগ লাইসেন্সবিহীন ফার্মেসির সংখ্যা বাড়ছে।এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) শরীফ উল্যাহ বলেন, বিভিন্ন হাট-বাজারে নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে অবৈধভাবে গড়ে উঠা ফার্মেসিগুলোতে অচিরেই অভিযান পরিচালনা করে বন্ধ করে দেয়া হবে। 

এমএসি/আরএইচ