বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের অকথ্য ভাষায় কল রেকর্ড ভাইরাল, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নিন্দার ঝড়
শুক্রবার ১৫ এপ্রিল ২০২২ ১৭:১৪
:: রাসেল শেখ, গাজীপুর প্রতিনিধি ::
প্রায় মাসখানেক ধরে আলোচনার শীর্ষে গাছা উচ্চ বিদ্যালয় ও বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ। মার্চ মাস পুরোটা জুড়ে ওই বিদ্যালয়ে ঘটে যাওয়া শ্লীলতাহানীর অভিযোগে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক কায়েদে মিল্লাতের বিরুদ্ধে তেমন কোন ব্যবস্থা প্রথম অবস্থায় না নিয়েই নির্দোষ বলায় আলোচনায় শীর্ষে ছিলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ। সেই সময় বিদ্যালয়ের ক্লাস বন্ধ করে অভিযুক্ত শিক্ষক ও প্রধান শিক্ষকের শাস্তির দাবিতে বিদ্যালয়ের প্রধান ফটক ও বিদ্যালয় চত্বর অবরুদ্ধ করে আন্দোলন করে শিক্ষার্থীরা।
এবার নতুন করে আবারও আলোচনায় এসেছেন ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। গতকাল বুধবার দিনভর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ওই প্রধান শিক্ষকের সাথে এক নারীর মুঠোফোনে কথোপকথনের একটি অডিও ক্লিপ ভাইরাল হয়।
ভাইরাল হওয়া সেই অডিও ক্লিপে শোনা যায় মধ্যবয়সী এক নারী প্রধান শিক্ষককে ভাই বলে সম্বোধন করছেন আর বলছেন আমি আপনার খালি রুমটিতে থাকতে চাই, আমাকে একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই দেন। আমি তো আপনার আপন মার পেটের ছোট বোন।আপনি আমারে জায়গা না দিলে আমি কোথায় গিয়ে দাড়াবো। কিন্তু এসব কথা শুনে ক্ষিপ্ত হয়ে প্রধান শিক্ষক হারুনুর রশিদ মহিলাটিকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকেন। ভাইরাল সেই কল রেকোর্ডের শেষের দিকের কথোপকথন সোনা জায় ওই নারী গাছা উচ্চ বিদ্যালায়ের প্রধান শিক্ষক হারুনর রশীদ কে ভাই বলে সম্বোধন করছেন এবং বলছেন নিজের আপন মার পেটের ছোট বোনকে কেউ এসব ভাষায় কথা বলতে পারে না। আপনি যে ভাষায় গালি দিচ্ছেন তার প্রতিটা গালি আমার এবং আপনার গর্ভধারিণী মাকে নিয়ে উল্লেখ করে দিচ্ছেন। এই সমস্ত বকা গুলা আপনার মার উপরে পোড়ছে! একথা শুনে ও প্রধান শিক্ষক আরও ক্ষিপ্ত হয় আরো জঘন্যতম ভাষায় কথা বলতে থাকে একপর্যায়ে প্রধান শিক্ষক কলটি কেটে দেন।
এদিকে কল রেকর্ড ভাইরাল হওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধান শিক্ষককে নিয়ে শুরু হয়েছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়। কেউ ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডটি শেয়ার করে ক্যাপশনে লিখছেন যে শিক্ষক ঘরের মানুষের সাথে এমন বাঝে ব্যবহারে কথা বলে তার কাছ থেকে ছাত্র ছাত্রী কেমন আচার আচরণ শিক্ষা পাবে? কেউ আবার লিখছেন গর্ভধারিনী মাকে নিয়ে যে আপন ছোট বোনকে গালি দিতে পারে সেই শিক্ষক দেশের শিক্ষা ব্যবস্থার জন্য হুমকি। আবার অনেকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক হারুনর রশীদের ছবি দিয়ে শাস্তির দাবি জানাচ্ছেন।
ভাইরাল অডিও রেকোর্ডের বিষয় স্থানীয় একটি স্কুলের সহকারী শিক্ষক শারমিন আক্তার মন্তব্য করেন, শিক্ষা জাতীর মেরুদণ্ড আর শিক্ষক সেই মেরুদণ্ড শক্ত করার কারিগর। একজন শিক্ষকের কাছ থেকে শিক্ষার্থীরা বই-পুস্তকের বাইরেও অনেক কিছু শিক্ষা নেন যেমনঃ সামাজিক চলাফেরা, বড়দের সম্মান করা ছোট দের স্নেহ করা, বাবা মা কে সম্মান করা সহ সামাজিক আচার-আচরণ নীতি-নৈতিকতার আর যে বিদ্যালয়ের প্রাধন শিক্ষক এমন বাজে ভাষায় কথা বলতে পারে এমন নিজের আপন ছোট বোনকে পতিতা বলে কথা বলতে পারে তার শিক্ষকের মতো এমন মহান পেশা থাকার কোন অধিকার নেই আমার এমন শিক্ষকদের তীব্র নিন্দা ও ধিক্কার জানাই।
ভাইরাল হওয়া অডিও রেকর্ডিং এর বিষয় জানতে গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হারুনর রশীদ সাথে মুঠোফোন যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ভাইরাল হওয়া অডিও ক্লিপটি বছরখানেক আগের। নারী কন্ঠি ওই নারী আমার আপন ছোট বোন কাজল আক্তার নিশি। তিনি বছরখানেক আগে স্বামীর সাথে অভিমান করে আমার বাসায় উঠতে চায় আমিও তাকে প্রথম বুঝাই স্বামীর বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য।কিন্তু সে ফিরে যাবে না বলে মনস্থির করে জোরপূর্বক আমার এখানে থাকতে চাইয়। এতে রাগান্বিত হয়ে একটু গালমন্দ করেছিলাম। কল রেকর্ডের অডিও ক্লিপটি কিভাবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হলো আর কারাই বা পুড়াতন এই কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমার সম্মান ক্ষুন্নের উদ্দেশ্য এটিকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করলো সেই বিষয় আমি আমার ছোট বনের সাথে কথা বলে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
এবিষয়ে গাছা উচ্চ বিদ্যালয়ের গভর্নিং বডির সভাপতি রাশিদুজ্জামান জুয়েল মন্ডল বলেন, অডিও ক্লিপটি আমিও বেশ কয়েক বার শুনেছি। আমার কাছে অডিও ক্লিপের কথোপকথন গুলো শুনে মনে হচ্ছে পুরষ কন্ঠের লোকটি আমাদের বিদ্যালয়ের প্রাধান শিক্ষক। অডিও ক্লিপ যদি সত্যি তার হয় তাহলে এমন জঘন্য ভাষায় কথোপকথন এর জন্য অবশ্যই তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করা উচিৎ । অডিও ক্লিপ বিশ্লেষণ করা হচ্ছে এবং অডিও রেকর্ডে উল্লেখিত জায়গা ঘর এমন যতগুলো বিষয় কথা বলেছেন ওই নারী সেই সব বিষয়ও তদন্ত করছে গবর্নিং বডির সদস্যরা। রেকর্ডটি সত্যি যদি ওই শিক্ষকের হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হবে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাদের কাছে।
এমএসি/আরএইচ