ভারতীয়-বাঙালি বিপ্লবী ক্ষুদিরাম বসু ভারতে ব্রিটিশ শাসনের বিরোধিতা করেছিলেন।
ক্ষুদিরামের সহজ প্রবৃত্তি ছিলেন প্রাণনাশের সম্ভাবনাকে তুচ্ছ করে দুঃসাধ্য কাজ করবার প্রবল সাহসী এক ছেলে। আজ তার ১৩৩ তম জন্মজয়ন্তী।
ক্ষুদিরাম প্রফুল্ল চাকির সঙ্গে মিলে গাড়িতে ব্রিটিশ বিচারক,ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড আছে ভেবে তাকে গুপ্তহত্যা করার জন্যে বোমা ছুঁড়েছিলেন। ম্যাজিস্ট্রেট কিংসফোর্ড অন্য একটা গাড়িতে বসেছিলেন,যে ঘটনার ফলে দুজন ব্রিটিশ মহিলার মৃত্যু হয়,যারা ছিলেন মিসেস কেনেডি ও তার কন্যা। প্রফুল্ল চাকি গ্রেপ্তারের আগেই আত্মহত্যা করেন। ক্ষুদিরাম গ্রেপ্তার হন। দুজন মহিলাকে হত্যা করার জন্যে তাঁর বিচার হয় এবং চূড়ান্তভাবে তাঁর ফাঁসির আদেশ হয়।
ফাঁসি হওয়ার সময় ক্ষুদিরামের বয়স ছিল ১৮ বছর,৭ মাস এবং ১১ দিন,যেটা তাকে ভারতের কনিষ্ঠতম ভারতের বিপ্লবী অভিধায় অভিষিক্ত করেছিল। বাল গঙ্গাধর তিলক,তাঁর সংবাদপত্র কেশরীতে দুজন নবীন যুবককে সমর্থন করে আওয়াজ তোলেন অবিলম্বে স্বরাজ চাই। যার ফলে অবিলম্বে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক সরকার দেশদ্রোহিতার অপরাধে তিলককে গ্রেপ্তার করে।
ক্ষুদিরাম বসু ১৮৮৯ খ্রিস্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের বেঙ্গল প্রেসিডেন্সির অন্তর্গত মেদিনীপুর শহরের কাছাকাছি (বর্তমান পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা) কেশপুর থানার অন্তর্গত মৌবনী (হাবিবপুর) গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ত্রৈলোক্যনাথ বসু ছিলেন নাড়াজোলের তহসিলদার এবং মা লক্ষ্মীপ্রিয় দেবী। তিন কন্যার পর তিনি তাঁর মায়ের চতুর্থ সন্তান। তাঁর দুই পুত্র অকালে মৃত্যুবরণ করেন। অপর পুত্রের মৃত্যুর আশঙ্কায় তিনি তখনকার সমাজের নিয়ম অনুযায়ী তাঁর পুত্রকে তার বড়ো দিদির কাছে তিন মুঠো খুদের (চালের খুদ) বিনিময়ে বিক্রি করে দেন। খুদের বিনিময়ে কেনা হয়েছিল বলে শিশুটির নাম পরবর্তীকালে ক্ষুদিরাম রাখা হয়।
ক্ষুদিরামের বয়স যখন মাত্র পাঁচ বছর তখন তিনি তাঁর মাকে হারান। এক বছর পর তার পিতার মৃত্যু হয়। তখন তাঁর বড়ো দিদি অপরূপা তাকে দাসপুর থানার এক গ্রামে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান। অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায় ক্ষুদিরামকে তমলুকের হ্যামিল্টন হাই স্কুলএ ভর্তি করে দেন।
১৯০২ এবং ১৯০৩ খ্রিস্টাব্দে শ্রী অরবিন্দ এবং সিস্টার-নিবেদিতা মেদিনীপুর ভ্রমণ করেন। তারা স্বাধীনতার জন্যে জনসমক্ষে ধারাবাহিক বক্তব্য রাখেন এবং বিপ্লবী গোষ্ঠীগুলোর সঙ্গে গোপন অধিবেশন করেন,তখন কিশোর ছাত্র ক্ষুদিরাম এই সমস্ত বিপ্লবী আলোচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন। স্পষ্টভাবেই তিনি অনুশীলন সমিতিতে যোগদান করেন এবং কলকাতায় বারীন্দ্র কুমার ঘোষের কর্মতৎপরতার সংস্পর্শে আসেন। তিনি ১৫ বছর বয়সেই অনুশীলন সমিতির একজন স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন এবং ভারতে ব্রিটিশ শাসন বিরোধী পুস্তিকা বিতরণের অপরাধে গ্রেপ্তার হন। ১৬ বছর বয়সে ক্ষুদিরাম থানার কাছে বোমা মজুত করতে থাকেন এবং সরকারি আধিকারিকদেরকে আক্রমণের লক্ষ্য স্থির করেন। ১৯০৪ খ্রিস্টাব্দে ক্ষুদিরাম তাঁর বোন অপরূপার স্বামী অমৃতলাল রায়ের সঙ্গে তমলুক শহর থেকে মেদিনীপুরে চলে এসেছিলেন।