হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য ধানের গোলা
বুধবার ৮ জুন ২০২২ ১১:৫৯
কামরুজ্জামান, কুষ্টিয়া ::
গোলা ভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ’ গ্রাম নিয়ে প্রচলিত প্রবাদটি আজও মানুষের মুখে মুখে শোনা যায়। কিন্তু গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেও এখন দেখা পাওয়া যায় না তেমন একটা বাংলার ঐতিহ্য ধান, গমসহ ফসল সংরক্ষণের গোলার। মাঠের পর মাঠ ধানক্ষেত থাকলেও প্রত্যন্ত অঞ্চলের অধিকাংশ কৃষকের বাড়িতে এখন নেই গোলাঘর। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে চলেছে সব কিছু ।
গ্রামাঞ্চলে বাড়িতে বাড়িতে বাঁশ দিয়ে গোল আকৃতির তৈরি করা ধানের গোলা। গোলার মাথায় থাকত টিনের তৈরি পিরামিড আকৃতির টাওয়ারের মতো। যা দেখা যেত অনেক দূর থেকে। গোলা নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন এলাকায় আগে দক্ষ শ্রমিক ছিল। এখন আর গোলা নির্মাণ শ্রমিকদের দেখা মেলে না।
ধানের গোলা বসানো হতো উঁচুতে। প্রবেশপথ রাখা হতো বেশ ওপরে, যেন চোর বা ডাকাতে ধান নিতে না পারে। ধানের গোলায় ঢুকে ক্ষতি করতে পারতো না ইঁদুরও। গোলায় শুকানো ভেজা ধানের চাল হতো শক্ত। কৃষকের কাছে এটিই ছিলো ধান রাখার আদর্শ পন্থা।
এসব ধানের গোলায় ১০০ থেকে ১৫০ মণ ধান সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। প্রথমে বাঁশ-কঞ্চি দিয়ে গোল আকৃতির কাঠামো তৈরি করা হতো। এঁটেল মাটির কাদা তৈরি করে ভেতরে ও বাইরে আস্তরণ লাগিয়ে উপরে টিনের চালা দিয়ে বিশেষ উপায়ে তৈরি করা হতো এই ধানের গোলা।
মানুষের জীবন-মানের পরিবর্তনের ফলে আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে পারিবারের ব্যবহার্য উপকরণে। ফলে ঐতিহ্যবাহী বাঁশের ধানের গোলার জায়গা দখল করে নিয়েছে পাটের বস্তা আর টিন বা প্লাস্টিকের তৈরি ড্রাম। এগুলো তৈরি ঝামেলামুক্ত ও সহজে বাজারে পাওয়া যায় বলে মানুষ বাঁশের গোলার পরিবর্তে এসব আধুনিক উপকরণ ব্যবহারে দিন দিন অভ্যস্ত হয়ে পড়েছে। ফলে হারিয়ে যাচ্ছে বাঁশের গোলার কদর।
গ্রামবাংলার বাঁশের গোলার চাহিদা কমে গেলেও কিছুটা ব্যতিক্রম কুষ্টিয়া সদর উপজেলার মিনাপাড়া এলাকায় ও কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার মশান, বলিদাপাড়া গ্রামে এখনও চোখে পড়ে এসব ধানের গোলা। গ্রামের কৃষকরা বলছেন, তারা এখনো অনেকে গোলায় ধান রাখেন। আবার অনেকের গোলা পরিত্যক্ত। তবে তারা স্মৃতি হিসেবে রেখে দিয়েছেন।
প্রবাদের সেই গোয়াল ভরা গরু আর পুকুর ভরা মাছ এখনো আছে। দেশের প্রতিটি কৃষক পরিবারে রয়েছে কমপক্ষে একটা, দুটি গরু, পুকুরও আছে অনেকের। শুধু কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে গ্রামীণ ঐতিহ্য ধানের গোলা।
এমএসি/আরএইচ
