সেই ইউপি চেয়ারম‌্যানের পর এবার সচিবকে শোকজ

রবিবার ২৪ অক্টোবর ২০২১ ১৫:০৫


 
:: রাজু সরকার, গাইবান্ধা প্রতিনিধি ::
 
গাইবান্ধার সাদুল্লাপুরে ভূমি হস্তান্তর কর (১%) বরাদ্দের জমা দেওয়া সেই সাড়ে ১৮ লাখ টাকা আবারও ব‌্যাংক থেকে উত্তোলনের ঘটনা ঘটেছে। দামোদরপুর ইউপি চেয়ারম‌্যানের সঙ্গে যোগসাজসে টাকা জমার পরদিনেই পুুনরায় সমুদয় টাকা তুলে নেওয়ায় অভিযোগে এবার ইউপি সচিব নুরজামান মিয়াকে শোকজ করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
 
এরআগে একই অভিযোগে চেয়ারম‌্যান এজেডএম সাজেদুল ইসলাম স্বাধীন শোকজ জবাবে বিষয়টি ভুল স্বীকার ক্ষমা প্রার্থনা করেন। স্বাধীন সাদুল্লাপুর উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক পদেও আছেন। 
 
স্থানীয় সরকার বিভাগ গাইবান্ধার উপপরিচালক (উপ-সচিব) মোছা. রোখছানা বেগম স্বাক্ষরিত (গত ১৯ অক্টোবর) এই কারণ দর্শানো নোটিশে সচিব নুরজামান মিয়াকে সাত কার্যদিবসের মধ‌্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। তবে অভিযোগের বিষয় জানতে অভিযুক্ত সচিব নুরজামান মিয়ার মুঠফোনে কল করেও তাকে পাওয়া যায়নি।
 
সূত্রে জানা যায়, ভূমি হস্তান্তর কর (১%) বাবদ সাড়ে ১৮ লাখ টাকা সরাসরি উত্তোলনের কথা স্বীকার করে শোকজের পরিপ্রেক্ষিতে গত ৭ অক্টোবর লিখিত জবাব দেন ইউপি চেয়ারম‌্যান স্বাধীন। তবে গৃহীত প্রকল্পের তালিকা এবং বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কোন প্রমাণাদি সংযুক্ত করা হয়নি শোকজ জবাবে। এছাড়া ইউনিয়ন পরিষদের ব‌্যাংক ষ্টেটমেন্ট পর্যালোচনায় ৩ অক্টোবর ওই সাড়ে ১৮ লাখ টাকা জমার পরদিন অথাৎ ৪ অক্টোবর দুটি চেকে পুনরায় ব্যাংক থেকে উত্তোলনের তথ্য পাওয়া যায়।
 
এ থেকে প্রতিয়মান হয় যে, প্রকল্প বাস্তবায়ন না করেই চেয়ারম‌্যান ও সচিব উভয়ের যোগসাজসে সমুদয় টাকা উত্তোলন করেছে। ইউনিয়ন পরিষদ সচিব হিসেবে এই অর্থ ব‌্যয়করণ প্রযোজ‌্য নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ পূর্বক চেক প্রস্তুতের ব‌্যত‌্যয় ঘটেছে মর্মেও প্রতিয়মাণ হয়। এমন ব‌্যত‌্যয় ঘটানোর দায়ে কেন বিভাগীয় ব‌্যবস্থা গ্রহণ করা হবে না তার ব‌্যাখা চেয়ে সচিবকে শোকজ নোটিশ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। 
 
এদিকে, গোপনে সাড়ে ১৮ লাখ টাকা তুলে আত্মসাত চেষ্টার ঘটনা ফাঁসের পর চেয়ারম‌্যান স্বাধীনের বিরুদ্ধে মুখ খুলতে শুরু করেছে ইউপি সদস‌্য ও দলের নেতাকর্মীরা। এরমধ‌্যে মুরাদ, নুরুন্নবী, খোরশেদ, রশিদুল ও নারী সদস‌্য মিনারা বেগম অভিযোগ করেন, চেয়ারম‌্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই স্বাধীন ক্ষমতার অপব‌্যবহার করে নানা অনিয়ম-দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা করে আসছেন। সদস‌্যদের মতামত উপেক্ষা করে একক সিন্ধান্তে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন এবং প্রকল্প সভাপতি হিসেবে সদস‌্যদের স্বাক্ষর জাল করেও লাখ-লাখ টাকা তুলে আত্মসাত করেছেন তিনি।
 
এছাড়া তার বিরুদ্ধে ট্রেড লাইসেন্স, হাট-বাজার ও ট্রাক্স আদায়ের টাকা ব‌্যাংকে জমা না করার অভিযোগ রয়েছে। বছরের পর বছর পরিষদ কার্যালয়ে পরিবার নিয়ে বসবাস করলেও ভাড়া বাবদ দেননি একটি টাকা। বকেয়া রেখেছেন বিদ্যুৎ বিলের টাকাও। তিনি গত ৫ বছরে গাড়ি-বাড়ি ও জমি ক্রয় করাসহ অঢেল অর্থ সম্পদের মালিক হয়েছেন বলেও অভিযোগ করেন ইউপি সদস‌্যরা।  অনিয়ম-দুর্নীতি তদন্ত করাসহ তার সম্পদ অর্জনের উৎস এবং তথ্য অনুসন্ধানের জন্য দুদকসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের নিকট দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী। 
 
উল্লেখ, গত এক বছরে ৫টি বেয়ারার চেকে সাড়ে ১৮ লাখ টাকা উত্তোলন করে পকেটে তোলেন ইউপি চেয়ারম‌্যান স্বাধীন। অথচ ওই টাকার বিপরীতে কোন প্রকল্পই গ্রহণ হয়নি। টাকা জমা হয়নি ব‌্যাংক হিসেবে এবং তথ্য নেই পরিষদের ক‌্যাশ বইয়েও। শুধু তাই নয়, নির্দেশ সত্বেও ব‌্যাংকে জমা করা হয়নি ৩ বছর আগের ভ্যাট-আয়করের ২ লাখ ৪৯ হাজার টাকা। এতোদিন ঘটনা গোপন থাকলেও গত ১৪ সেপ্টেম্বর তা ধরা পড়ে গাইবান্ধা স্থানীয় সরকার বিভাগের উপপরিচালক রোখছানা বেগমের ইউনিয়ন পরিদর্শনকালে। এ নিয়ে গত ২৯ সেপ্টেম্বর চেয়ারম‌্যান স্বাধীনকে শোকজ নোটিশ করে স্থানীয় সরকার বিভাগ।
 
 
 

এমএসি/আরএইচ