সিরাজদিখানে অসহনীয় শব্দদূষণে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী

শনিবার ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৭:৪২


আহসানুল ইসলাম আমিন, মুন্সীগঞ্জ:

মুন্সীগঞ্জের সিরাজদিখান বিপদজ্জনক শব্দদূষণের এলাকায় পরিণত হয়েছে। প্রতিদিন মাইকে নানামুখী প্রচারের শব্দে জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। মাইকের যন্ত্রণায় সিরাজসিখান উপজেলার মানুষ অতিষ্ঠ। বিষয়টি এখন এলাকাবাসীর কাছে অসহনীয় পর্যায়ে চলে গেছে। বিশেষ করে শিশু, অসুস্থ রোগীদের বেশি সমস্যা পোহাতে হচ্ছে। যানবাহনে কখনো একটি মাইক বেঁধে আবার কখানো দুটি মাইক বেঁধে উচ্চ শব্দে প্রচারণায় দীর্ঘ সময় ধরে মাইকিং করতে এখন আর দরকার পড়েনা ঘোষকের। ঘোষণাটি একবার রেকর্ড করে মোবাইলের মেমরি কার্ডে নিয়ে যানবাহনে মাইক বেঁধে চলতে থাকে বিরতিহীন ঘোষণা। ইজিবাইক, রিকশা ও পিকআপ ভ্যানে মাইক বেঁধে উচ্চশব্দে দীর্ঘ সময় ধরে বিভিন্ন পণ্যের প্রচারণা চালানো হয়। বেসরকারি ক্লিনিক ও ডায়গনেস্টিক সেন্টারের প্রচার, বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরিচয়, কোনো প্রতিষ্ঠানে বিশেষ ছাড়, মোবাইলের সিমকার্ড, মেলাসহ বিভিন্ন প্রচারে ব্যাবহার করা হচ্ছে উচ্চ সব্দের মাইক। এ ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানের নামে প্রায়ই সারা রাত উচ্চ শব্দে অ্যামপ্লিফায়ারে গান চলানো হয় ।

শব্দদূষণ নিয়ন্ত্রণ বিধিমাল ২০০৬ অনুযায়ী, এলাকাভেদে শব্দের মানমাত্রা নীরব এলাকায় দিনে ৫০ ডেসিবেল ও রাতে ৪০ ডেসিবেল, আবাসিক এলাকায় দিনে ৫৫ ডেসিবেল, ও রাতে ৪৫ ডেসিবেল। মিশ্র এলাকায় দিনে ৬০ ডেসিবেল ও রাতে ৫০ ডেসিবেল। বাণিজ্যিক এলাকায় দিনে ৭০ ডেসিবেল ও রাতে ৬০ ডেসিবেল এবং শিল্প এলাকায় দিনে ৭৫ ডেসিবেল ও রাতে ৭০ ডেসিবেল। এখানে দিন বলতে ভোর ছয়টা থেকে রাত নয়টা এবং রাত বলতে রাত নয়টা থেকে ভোর ছয়টা পর্যন্ত নির্ধারণ করা হয়েছে এবং শব্দের সর্বোচ্চ সহনীয় মাত্রার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। শব্দদূষণ (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা ২০০৬ এর ১৮ ধারায় বলা আছে, কোনো ব্যক্তি বিধিমালার বিভিন্ন ধারা লঙ্ঘন করে দোষী সাব্যস্ত হলে তিনি প্রথম অপরাধের জন্য অনধিক এক মাসের কারাদণ্ড বা অনধিক পাঁচ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে এবং পরবর্তী অপরাধের জন্য অনধিক ছয় মাস কারাদণ্ড বা অনধিক ১০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ডে দণ্ডনীয় হবেন। বিধিমালায় শব্দের মানমাত্রা অতিক্রম না করার শর্তে মাইক, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার করতে হলে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমতি নেওয়ার বিধানও আছে। কিন্তু সিরাজদিখানে মাইক, অ্যামপ্লিফায়ার ব্যবহার এর ক্ষেত্রে এ বিধান মানা হয় না। আইন থাকলেও

মালখানগর ইউনিয়নের যুবরাজ তালুকদার জানান, প্রতিদিন অ্যামপ্লিফায়ার আর মাইকের শব্দে অতিষ্ঠ হয়ে পড়ছি। এরা স্কুল, কলেজ, হাসপাতাল, সরকারি অফিস কিছুই মানেনা। আশা করছি, এমন নির্যাতন থেকে এলাকাবাসীকে মুক্ত করতে প্রশাসন দ্রুত যথাযথ পদক্ষেপ নেবে। জৈনসার ইউনিয়নের বিকাশ ব্যার্নাজী জানান, শুধু মাইক নয়, সাউন্ড বক্সের শব্দেও মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে উঠছে।

বালুচর ইউনিয়নের ফরিদ জামান বলেন, ওয়াজ মাহফিল, রাজনৈতিক ও সামজিক অনুষ্ঠানে মাইক ব্যবহারের জন্যে প্রশাসনের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হয় কিন্তু রাতভর মাইকে বয়াতি গানের জন্যে কি অনুমতির দরকার হয়না, প্রশাসন এবং জনপ্রতিনিধিরা যদি এই নির্যাতন বন্ধে পদক্ষেপ নেয় তা হলে আমরা শান্তিতে রাতে ঘুম আসতে পারব।

বয়রাগাদী গ্রামের সাইফুল ইসলাম জানান , গতকাল সারারাত কুমরাখালি গ্রামে ওরশের নামে মাইকে উচ্চ শব্দে বয়াতি গান কান ঝালাপালা হয়ে গেছে। ঘুমানো যায় না। মাথাব্যথা করে, অতিষ্ঠ হয়ে গেছি। সারাদিন কাজ শেষে রাতে একটু শান্তিতে ঘুম আসতে চাইলেও এই মাইকের শব্দে পারি না, এছাড়াও বৃহস্পতিবার হলেই আশেপাশের কোথাও না কোথাও রাতে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠানে সাউন্ড বক্স এ সারা রাত উচ্চ শব্দে গান বাজে, কিছু বলতে গেলেও পারিনা সবাই কইবো মিয়া বিয়ে বাড়ী আইছো ভেজাল লাগাইতে, আমরা এই যন্ত্রণার থেকে মুক্তি চাই ।

স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তিরা মনে করে এসব বন্ধে প্রশাসনের পদক্ষেপ প্রয়োজন। প্রয়োজনে মোবাইল কোর্টসহ কঠোর নজরদারি না হলে এই উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাওয়া সম্ভব নয়। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সৈয়দ ফয়েজুল ইসলাম বলেন, উচ্চমাত্রায় শব্দ স্বাস্থের জন্য ক্ষতিকর। এই ব্যপারে স্থানীয় ভাবে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এলাকায় যদি কোথাও উচ্চ শব্দে গান বাজনা করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানাবেন আমি সকল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানদের এব্যাপারে পদক্ষেপ নিতে বলে দেবো।

তিনি আরো বলেন, রাতে উচ্চশব্দের ক্ষেত্রে লোকজনের বিবেচনাবোধ থাকা উচিত। সংশ্লিষ্ট থানাকে না জানিয়েই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে লাউড স্পিকার ব্যবহার হচ্ছে। সাধারণত রাত ১২টার পরে অভিযোগগুলো আসতে থাকে। কেননা সে সময় শব্দ অসহনীয় হয়ে উঠে। তারপরও যদি কেউ না শোনে তা হলে এবিষয়ে অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যাবস্থা নেওয়া হবে।

এমএসি/আরএইচ