সাতক্ষীরার রানা কিংসের মিডফিল্ডের কিংস

শুক্রবার ৩ ডিসেম্বর ২০২১ ১১:৫৯


সাতক্ষীরার কৃতি সন্তান বাংলাদেশ ফুটবল প্রিমিয়ার লীগ বিপিএলে এক দশকের বেশি সময় ধরে খেলছে জাতীয় ফুটবল দল ও বসুন্ধরা কিংসের অ্যাটাকিং মিডফিল্ডের কিংস শেখ আলমগীর কবির রানা। জেলার শ্যামনগর উপজেলার এই কৃতি সন্তান কৃতিত্বের সাথে তার সুনাম অর্জন করেছেন। তার ইচ্ছা বর্তমান ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংসের হয়ে এশিয়ান ফুটবল কনফেডারেশন এএফসি কাপ ঘরে আনা। এরই মধ্যে চলতি স্বাধীনতা কাপের প্রথম ম্যাচেই বাংলাদেশ নেভীকে ৬-০ গোলে পরাজিত করে মিশন শুরু করেছে রানার ক্লাব বসুন্ধরা কিংস। ভবিৎষতে একজন ভাল মানের কোচ হয়ে দেশের তথা সাতক্ষীরা জেলার ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। তাছাড়াও ক্রীড়া সংগঠক হয়েও এই জেলার ক্রীড়ার উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা আছে ফুটবলার রানার।  


সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার অজপাড়াগা হায়বাতপুর গ্রামে পিতা মৃত্যু শেখ লুৎফার রহমানও  মাতা করিমন নেছা দম্পতির ঘরে জন্মগ্রহন করে শেখ আলমগীর কবীর রানা। এক বোন ও তিন ভায়ের মধ্যে রানা দ্বিতীয়। বড় বোনের বিয়ে হলেও বাকিদের দ্বায়িত্ব এখনও রানার ঘাড়েই। মাঠে যতটা সফল রানা,মাঠের বাহিরে তার চেয়ে একটুও কম নয়। সেই ২০০৯-১০ মৌসুমে মোহামেডানের জার্সিতে প্রিমিয়ার লিগে যাত্রা শুরু করে বিকেএসপির সাবেক ছাত্র ফুটবলার রানা। এরপর একে একে দেশের আরও তিন শীর্ষস্থানীয় ক্লাব শেখ জামাল, ‍মুক্তিযোদ্ধা সংসদ এবং শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে কয়েক মৌসুম করে খেলেছেন। এতগুলো ক্লাবের জার্সিতে খেলার পরও তার মন,সত্তা জুড়ে আছে বর্তমান ফুটবল ক্লাব বসুন্ধরা কিংস।

গেল বছরের অক্টোবরে-২০২০ এএফসি কাপে মালদ্বীপের ক্লাব মাজিয়া স্পোর্টসের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে মাঠে ফেরার কথা ছিল দেশসেরা বর্তমান লীগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসের। কিন্তু করোনার কারণে সেটা হয়নি। চলতি মৌসুমে তারা লীগ চ্যাম্পিয়ন হয়ে এএফসি কাপে অংশগ্রহন করে। গেলবছর এএফসি কাপ খেলতে না পারলেও কিংস তাদের ঘরোয়া টুর্নামেন্ট ও লীগ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। ব্যস্ততা বেড়ে যায় সাতক্ষীরার শ্যামনগরের গর্ব ফুটবলার রানারও। এরই মধ্যে ক্লাবের হয়ে ফেডারেশন কাপ জেতেন রানারা। প্রিমিয়ার লীগের প্রথম লেগ শীর্ষ থেকে শেষ করে।

দেশের এই শীর্ষ ক্লাব বসুন্ধরা কিংস প্রথমবারের মতো এএফসি কাপ খেললেও দলের অন্যতম প্রান ভোমরা রানার আগেও এএফসি কাপে খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে। শেখ জামালের হয়ে ২০১৫-১৬ মৌসুমে এএফসি কাপে খেলেছেন এ ফুটবলার। সেই অভিজ্ঞতা কিংসেও কাজে লাগান। ঘরোয়া আসরগুলোতে যেমন দাপুটে পারফরম্যান্স উপহার দিয়ে একের পর এক শিরোপা ঘরে তুলেছে কিংস। সেই প্রিয় ক্লাবকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও সাফল্যে রাঙাতে চাইছিলেন রানা। কিন্তু তার স্বপ্ন ভঙ্গ হয় সদ্য সমাপ্ত এএফসি কাপে দাপটের সাথে খেলেও।  ভারতীয় ক্লাব মোহনবাগানের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করায় পরবর্তী রাউন্ডে খেলার স্বপ্ন ধূলিসাৎ হয়েছে বাংলাদেশ চ্যাম্পিয়নদের। ড্রয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে পরবর্তী রাউন্ডের টিকিট নিশ্চিত হয়েছে মোহনবাগানের।

একজন ফুটবলার হিসেবে রানা যতটা অসাধারন তারচেয়েও বেশি অতুলনীয় ।মাঠে ফুটবল খেলে সবার মন জয় করে নিয়েছেন অনেক আগেই। সাতক্ষীরায় নিজের টাকায় ফুটবল একাডেমী করেছেন। যেখান থেকে প্রতিবছর অনেক ফুটবলার ঢাকায় খেলতে আসে বিভিন্ন ক্লাবে। তাছাড়াও বিকেএসপিতে ও চান্স পেয়েছে অনেক ফুটবলার । এছাড়াও রানা অসহায় গরীব মানুষের পাশে থাকেন সবসময়। করোনাকালীন সময়ে বহু পরিবার কে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন তিনি । করোনাকালে কিছুদিন ঘরবন্দি থাকলেও এখন দুই বেলাই মাঠের অনুশীলন চলছে রানার। সঙ্গে ফিটনেসের ওপরও কাজ করছেন। কিংসের কোচ অস্কার ব্রুজোনের দেয়া নির্দেশনা মেনেই সমস্ত অনুশীলন প্রক্রিয়া চালিয়ে যাচ্ছেন রানা।

বর্তমানের অন্যতম সেরা মিড ফিল্ডার রানা নিয়মিত কাজ করছেন শ্যামনগর ফুটবল একাডেমির জন্য । ২০১০ সাল থেকে একাডেমির কার্যক্রম শুরু হয়। তবে ২০১২ সালে একাডেমির সাথে যুক্ত হন রানা। রানার একাডেমির শিক্ষার্থীরা বেশ মেধাবী। বর্তমানে একাডেমিতে ছেলে-মেয়ে ফুটবলার মিলে ১০০ জন আছে। তার মধ্যে মেয়ে আছে ১৫-২০ জন । এই একাডেমি থেকে অনেক ফুটবলার বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি), যশোর শামসুল-হুদা ফুটবল একাডেমিসহ ঢাকা মহানগরী লিগ কমিটির আওতাধীন পাইওনিয়ার থেকে প্রথম বিভাগে খেলছেন। জাতীয় বয়সভিত্তিক দলেরও অংশগ্রহন করছে। কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রখ্যাত সুব্রত কাপেও রানার একাডেমির ছাত্রের খেলার অভিজ্ঞতা রয়েছে।

ফুটবলার শেখ আলমগীর কবির রানা জানান, কোনো ধরনের আর্থিক প্রণোদনা, অনুদান ছাড়া আমি এবং আমার একাডেমির সাধারণ সম্পাদক রোকন ও ফুটবল কোচ শেখ আক্তার হোসেনের চেষ্টায় চলছে শ্যামনগর ফুটবল একাডেমি। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে) দেশের ১২১টি একাডেমিকে নিজেদের আওতায় নিয়ে সহযোগিতা করবে। সেঅনুযায়ী বাফুফের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছেন রানা।

রানার অনুরোধ, তার একাডেমি থেকে যেহেতু ভালোমানের ফুটবলার প্রতি বছর বিভিন্ন জায়গাতে খেলার সুযোগ পাচ্ছে, সাফল্য পাচ্ছে সেহেতু শ্যামনগর একাডেমিকে বাফুফে যেন ১২১টি একাডেমির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করেন। একই সঙ্গে একাডেমিকে ফুটবলসহ অন্যান্য কিটস দিয়ে সহায়তারও অনুরোধ রেখেছেন। তাছাড়া বাফুফের প্রশিক্ষিত কোচ দিয়ে একাডেমির কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করারও অনুরোধ জানান তিনি।

বয়স এবং ফর্ম-ফিটনেস অনুকূলে থাকায় আবারো জাতীয় দলে খেলার স্বপ্ন দেখেন আলমগীর কবির রানা। খেলাধুলার পাশাপাশি পড়াশুনাটাও চালিয়ে যাচ্ছেন রানা। ঢাকার বেসরকারি গ্রীন ইউনির্ভাসিটি থেকে সমাজ বিজ্ঞানে অনার্স শেষ করেছেন তিনি। তার আশা ভবিৎষতে একজন ভাল মানের কোচ হয়ে দেশের তথা সাতক্ষীরা জেলার ফুটবলের উন্নয়নে কাজ করতে চায়। তাছাড়াও ক্রীড়া সংগঠক হয়েও এই জেলার ক্রীড়ার উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা আছে ফুটবলার রানার।

উল্লেখ্য , ২০০৯ সালে বাড্ডা জাগরণীর হয়ে প্রথম বিভাগে শুরু তার। দেশ সেরা কোচ মারুফুল হকের অধীনে বাড্ডার জার্সিতে খেলেন। বাড্ডা জাগরণীর হয়ে ভালো খেলার সুবাদে মারুফই রানাকে নিয়ে আসেন মোহামেডানে।  ক্লাবের পাশপাশি জাতীয় দলেও ছিল সেরা পছন্দ। লাল-সবুজ জার্সিতে ২০১১ এবং ২০১৩ সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ খেলেছেন। জাতীয় দলের রানার সবশেষ থাকা ২০১৬ সালে বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে।
 

এমএসি/আরএইচ