শিশু সাব্বিরকে স্কুলে ও পিতাকে দোকান দিলেন পুলিশ কর্মকর্তা

মঙ্গলবার ৭ জুন ২০২২ ১৭:৪৬


ঝিনাইদহ প্রতিনিধি ::
১১ বছর বয়সের শিশু সাব্বির আহম্মেদকে আর ভ্যান চালাতে হবে না। তাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়েছে পুলিশ। পিতা ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার পুড়াপাড়া গ্রামের আব্দুল জব্বার পক্ষাঘাতগ্রস্থ হয়ে পড়ায় ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতো শিশু সাব্বির। স্কুল ছেড়ে ভ্যানের হ্যান্ডেল ধরে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হতো তাকে। গত রোববার বিকালের ঘটনা। ভ্যান নিয়ে বের হয় শিশু সাব্বির। 

ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় এই অমানবিক দৃশ্য দেখে দত্তনগর পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ সাগর সিকদার বাচ্চাটির সঙ্গে কথা বলেন। পুলিশের ওই কর্মকর্তা শিশুটিকে স্কুলে ফেরাতে তার বাড়িতে একটি দোকান করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 

সোমবার সকালে শিশু সাব্বিরকে স্কুলে ভর্তি করে দেন। যুথি খাতুন নামে শিশু সাব্বিরের ১৪ বছরের একটি বোন রয়েছে, যে অষ্টম শ্রেণীতে পড়ে। 

শিশুটির পিতা আব্দুল জব্বার জানান, নিজের কোনো চাষযোগ্য জমি নেই। মাত্র এক কাঠা জমির উপর এক কক্ষের মাটির ঘরে বসবাস করেন তিনি। নিজে ভ্যান চালিয়ে সংসার চালাতেন। দুই বছর আগে তিনি স্ট্রোক করে তার ডান হাতটি চিরদিনের জন্য অকেজো হয়ে পড়ে। যখন তিনি আর পেরে উঠছিলেন না তখন ছেলের হাতে ভ্যানের হ্যান্ডেল তুলে দেন। এভাবে শিশু সাব্বির কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সংসার। 

আব্দুল জব্বার বলেন, গত শনিবার বিকালে হঠাৎ করে তার বাড়িতে দত্তনগর ফাঁড়ির কর্মকর্তা সাগর সিকদার ছেলেকে সঙ্গে নিয়ে আসেন। প্রথমে তিনি ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। ছোট মানুষ কোনো অন্যায় করেছে এই ভেবে। পরে পুলিশ কর্মকর্তা তার কাছে এসে জানতে চান কি করলে তিনি সংসার চলার মতো আয় করতে পারবেন। তার বাড়িতে পুলিশ দেখে প্রতিবেশিরাও এগিয়ে আসেন। সবাই মিলে ঠিক করেন বাড়িতে একটি দোকান করলে ভালো হয়। তাৎক্ষনিক ভাবে ওই পুলিশ সদস্য দোকান করতে ১০ হাজার টাকা দিয়ে সাব্বিরকে গ্রামের প্রাইমারি স্কুলে নিয়ে ভর্তি করে দেন। 

সাব্বির আহম্মেদের সহপাঠী রাকিব হোসেন জানায়, তারা একসঙ্গে পড়তো। মাঝে সাব্বির স্কুলে যেতো না। এটা তাদের কাছে খারাপ লাগতো। আবার যাবে শুনে ভালো লাগছে। 

প্রতিবেশি রফিকুল ইসলাম জানান, দরিদ্র হলেও একটা সাজানো সংসার এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল। পুলিশ কর্মকর্তার এই উদ্যোগে সংসারটা আবার সচল হবে। 

দত্তনগর পুলিশ ফাড়ির এএসআই সাগর সিকদার জানান, ৫ থেকে ৬ জন যাত্রী নিয়ে শিশুটির ভ্যান চালাতে দেখে তার খারাপ লেগেছিল। তাই দাড় করিয়ে পরিবারের খোজ নেন। সবকিছু জেনে তার পিতাকে একটি দোকান আর ছেলেটির স্কুলে ভর্তির ব্যবস্থা করেছেন। এটা করতে পেরে তার ভালো লাগছে বলে জানান।

এমএসি/আরএইচ