শিমুল ফুলের নতুন পাঁপড়িতে প্রকৃতি সেজেছে নতুন রূপে

শুক্রবার ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৫:২২


:: জুলহাস আহমেদ, বরগুনা ::
 
গ্রাম-বাংলার সৌন্দর্য শিমুল ফুলের রঙিন পাঁপড়িতে রাঙিয়ে তুলেছে প্রকৃতি। নতুন সাজে সেঁজেছে ঋতুরাজ বসন্ত। সেই সাথে বদলে গেছে বরগুনা জেলার পরিবেশ। ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই শিমুল ও পলাশ ফুলের স্বর্গীয় সৌন্দর্যে নান্দনিক হয়ে উঠেছে প্রকৃতি ও বরগুনার গাও-গ্রামের পরিবেশ। শিমুল ফুলের আভা জানান দিচ্ছে বসন্ত বুঝি এলো রে।
 
ছয় ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। প্রতিটি ঋতুই যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর। চারিপাশে নানা বর্ণের ফুলে ফুলে সাজানো। শীতের বিদায়লগ্নে আর ঋতুরাজ বসন্তের শুরুতেই গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্য শিমুল ফুলের রঙিন পাঁপড়িতে নতুন সাজে সেজে ওঠেছে প্রকৃতি। এতে সাহিত্যিকরা খুঁজে পায় সাহিত্যের কাব্যিক ভাষা। আর ঐতিহ্যপ্রেমীরা মুগ্ধ হয়ে ফুলের দৃষ্টিকাব্য উপভোগ করে থাকে।
 
জেলা ও উপজেলার গ্রামাঞ্চলের পথে-প্রান্তরে, নদী বা পুকুরপাড়ে, মাঠে-ঘাটে, বাড়ির আঙিনায় এবং অফিসের ধারে রক্তিম ফুলের নান্দনিক সৌন্দর্য ছড়িয়ে পড়ে প্রকৃতির কোলে। তবে আজ অম্লান অতীতের স্মৃতি। তেমন একটা চোখে পড়ে না ফাগুনের রঙে রাঙানো রক্তলাল শিমুলের গাছ। দিনদিন কমে যাচ্ছে মূল্যবান শিমুলের সংখ্যা। এক সময় প্রচুর শিমুল গাছ দেখা যেত। আর এই গাছের উৎপাদিত তুলা গ্রাম-গঞ্জে খুব জনপ্রিয় ছিল।
 
এছাড়া, ঔষধি গাছ হিসেবেও বেশ পরিচিত। গাও-গ্রামের মানুষ বিষ ফোড়া, আখের গুড় তৈরিতে শিমুলের রস এবং কোষ্ঠ কাঠিণ্য নিরাময়ে ব্যবহার করতো শিমুল গাছের মূল। এই শিমুল গাছের তুলা দিয়ে সুতা, বালিশ, লেপ-তোষকসহ হরেক রকমের বেডিং নিমার্ণে কোনো জুড়ি ছিল না। নিজের শিমুল গাছের তুলা বিক্রি করে সাবলম্বী হয়েছে অনেক মানুষ, এমন নজিরও আছে হাজার হাজার। আবার শিমুল তুলা কুড়িয়ে বিক্রি করে উপার্জনও করত অনেকে গ্রাম্য মানুষ।
 
ফাগুনের প্রথমেই লাল রঙের রঙিন পাঁপড়িতে রাঙিয়ে যেত শিমুল গাছ আর চৈত্রের শেষে ফুটন্ত তুলা। বাতাসের সাথে উড়ে উড়ে মাতিয়ে রাখতো প্রকৃতিকে। সাদা তুলায় ঢেকে যেত নীল আকাশ। তখন পরিবেশটাও হতো অন্যরকম। নানা ছন্দে ও গানের খোরাক যোগাতো কবি সাহিত্যিকদের। কিন্তু গ্রাম-বাংলার বুক থেকে কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে বসেছে মূল্যবান এই শিমুল গাছ। যা এক সময় অর্থনৈতিক সম্বৃদ্ধি এনে দিত।
 
যখন কোনো কিছু প্রকৃতি থেকে খোয়া যায়, তখন তার কদরও অনেকগুণ বেড়ে যায়। আর শিমুল গাছ ও ফুল হচ্ছে তেমনই। যা এখনো গাও-গ্রামে মান্দার গাছ হিসেবে বেশ পরিচিত। তাই আসুন সকলেই গাছ লাগাই এবং গাছের পরিচর্চা করি। একদিকে যেমন প্রাণ বাঁচবে অন্যদিকে তেমনই প্রকৃতির সৌন্দর্যও বাড়বে বলে ধারণা এলাকার প্রবীণ ও সচেতন মহলের।
 

এমএসি/আরএইচ