শতশত শিক্ষার্থী ও পথচারির ভরসা যখন সাঁকো

বৃহস্পতিবার ১৭ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:১৪


জুলহাস আহমেদ, বরগুনা:
বরগুনার আমতলী ও তালতলী উপজেলার সীমানা সংলগ্ন ২১টি গ্রামের কয়েক হাজার বাসিন্দাদের চলাচলের একমাত্র ভরসা একটিমাত্র বাঁশের তৈরী সাঁকো। তাও আবার নড়বড়ে। বহুবছর আগে এই স্থানে খেয়া পারাপার থাকলেও ২৫ বছর আগে খেয়াও বন্ধ হয়ে যায়। তাই প্রতিদিন ঝুঁকি নিয়েই এই সাঁকো দিয়েই চলাচল করছে আড়পাঙ্গাশিয়া ও পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ২১ টি গ্রামের শতশত শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ।

জানা যায়, আমতলীর আড়পাঙ্গাশিয়া ইউনিয়নের চরকগাছিয়া এবং তালতলীর পচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নে কলারং গ্রামের সীমানা ঘেষে বয়ে খালের উপর নির্মিত হয় এই সাঁকোটি। চরকগাছিয়া, পচাকোড়ালিয়া, কলারং, আড়পাঙ্গাশিয়া, ঘোপখালী, চান্দখালীসহ আশপাশের ২১টি গ্রামের মানুষের উপজেলা সদর এবং অন্যান্য ইউনিয়নের সাথে যোগাযোগে একমাত্র মাধ্যম এই সাঁকোটি। দৈনন্দিন প্রয়োজন, কর্মসংস্থান ও লেখাপড়ার কারণে সাঁকো দিয়েই যাতায়াত করতে হয় স্থানীয় বাসিন্দাদের। এতে মারাত্মক ভোগান্তিতে পরতে হয় গ্রামগুলোর নারী-শিশু, রোগী, গর্ভবতী ও বৃদ্ধদের। এই খালে পূর্বে একটি খেয়া নৌকা থাকলেও ২৫ বছর আগে তা বন্ধ হয়ে যায়। পরে এই দীর্ঘ বাঁশের সাঁকোটি নির্মান করে গ্রামবাসীরা। প্রতিবছর বর্ষার আগে সাঁকো টি মেরামত করে নেয় স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, গ্রামের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সাঁকো পেরিয়ে স্কুল, কলেজ ও মাদ্রাসায় যাতায়াত করছে। এ সাঁকো পার হয়েই প্রতিদিন কলারং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চড়কগাছিয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাহলান বাড়ি কওমি মাদ্রাসা এবং শহিদুল ইসলাম কলেজের ৫ শতাধিক শিক্ষার্থীকে যাতায়াত করতে হয়। এছাড়াও ভোগান্তি পোহাতে স্থানীয় কৃষক, ব্যাবসায়ীসহ অন্যান্য পেশার মানুষদের।

স্থানীয়রা জানান, এই বাঁশের তৈরী সাঁকো পারাপারে যেমব রয়েছে ঝুঁকি তেমনি প্রতিদিন ঘটছে দূর্ঘটনা। নির্বাচনের আগে সকল জনপ্রতিনিধিরা আস্বস্ত করলেও পরে এবিষয়ে তারা কোন হস্তক্ষেপ করেনা৷

কলারং গ্রামের কৃষক আখতার হোসেন বলেন, আমার জমি খালের ওপার। চাষাবাদের জন্য রোজ সাঁকো পার হয়ে জমিতে আসা যাওয়া ও ফসল আনা নেওয়া করতে হয়। গত শীতে খড়ের আটি নিয়ে সাঁকো পারাপারের সময় দুই বাঁশের ফাকে পা আটকে গিয়েছিলো আমার। আল্লাহ সহায় ছিলো তাই পা ভাঙেনি।

চরকগাছিয়া গ্রামের খলিল মৃধা বলেন, ছোট বেলা থেকেই এখানে সাঁকো দেখে আসছি। গ্রামবাসী খুব কষ্টে এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করে। বেশী কষ্ট হয় অসুস্থ্য, বয়ষ্ক ও গর্ভবতীদের। এখানে ব্রীজ নির্মাণ করা হলে আশপাশের কয়েক গ্রামের লোকজন উপকৃত হবে।

কলারং প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক মিজানুর রহমান বলেন, খালের দুপাশে দুই উপজেলা হওয়ায় ব্রীজ নির্মাণে কোনো কোন উপজেলাই উদ্যোগ নিচ্ছে না। শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের কথা ভেবে দ্রুত এখানে একটি ব্রীজ নির্মাণের জোর দাবি জানাচ্ছি। ব্রীজ না হলে যেকোন সময় ঘটতে বড় ধরনের দূর্ঘটনা।

তালতলীর উপজেলার পঁচাকোড়ালিয়া ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জাফর মিয়া বলেন, সাকোটি আমি পরিদর্শন করেছি। তালতলী ও আমতলীর বেশকয়েকটি গ্রামের মানুষ এই সাঁকোর উপর নির্ভরশীল। আমি ওপাড়ের চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে যৌথভাবে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে সুপারিশ করা হবে, যাতে দ্রুত এই সেতুটি নির্মাণ করা যায়।

আমতলী উপজেলার আরপাঙ্গাশিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহেলী পারভীন বলেন, আমার স্বামী চেয়ারম্যান থাকাকালীন সময় এই স্থানে ব্রিজ নির্মাণের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছিলেন। সেটা এখন কি অবস্থায় আছে তা খোঁজ নিয়ে দেখব। তাছাড়া পঁচাকোড়ালিয়ার চেয়ারম্যানের সঙ্গে আলোচনা করে দ্রুত ব্যবস্থা নেবো।

এব্যাপারে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, বাঁশের সাঁকোর বিষয়টি আমার জানা ছিলনা। এই গ্রামগুলোর বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথাও কেউ কখনও বলেনি আমাকে। আমি ওখনকার ইউ চেয়ারম্যানদের এলজিইডিতে আবেদন করতে বলব এবং সুপারিশ করব। আমিও চেষ্টা করব যাতে ওখানে একটি ব্রীজ হয়।

এমএসি/আরএইচ