লোহাগাড়ায় মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি

রবিবার ১০ এপ্রিল ২০২২ ১২:০০


মনির আহমদ আজাদ, লোহাগাড়া ::
বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে গত বছরের ডিসেম্বরের শুরুতে সারা দেশব্যাপী শুরু হয়েছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প (৬৪) জেলা। সারাদেশের ন্যায় চট্টগ্রামের লোহাগাড়ায়ও শুরু হয়েছে উপানুষ্ঠানিক শিক্ষার মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্প।

বাস্তবায়নে নারী উন্নয়ন শক্তি (নাস) নামের এনজিও দায়িত্ব নিয়ে লোহাগাড়া প্রোগ্রাম অফিসার জেনিফার ওরিয়নের অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা ও দূর্নীতে শুরুতেই মুখ তুবড়ে পড়েছে মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পটি। 

জানা যায়, সরকারী অর্থায়নে বাস্তবায়িত প্রকল্পটি দেখার জন্য উপজেলা পর্যায়ে একজন কর্মর্কতা নিয়োগ দেয়া হয়। তিনি প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ৩০টি কেন্দ্র পরিদর্শনের কথা থাকলেও লোহাগাড়ার নিয়োগকৃত প্রকল্প কর্মর্কতা জেনিফার ওরিয়ন নিয়মিত একটি কেন্দ্রও পরিদর্শন করেছেন না। তবে মাঝে মধ্যে তার অফিসের পিয়ন ২ থেকে ১টি কেন্দ্র দেখেন এবং প্রোগ্রাম অফিসারে নামে দস্তখত করে আসেন। 

উপজেলার সার্বিক অবস্থা নিয়ে ইউএনও’র সভাপতিত্বে সভা করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি। এমন দায়িত্বহীন কমর্কতার কারনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন বাস্তবায়নে ক্ষুধা ও নিরক্ষরতামুক্ত বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে বাস্তবায়িত সরকারী প্রকল্প আজ মুখ তুবড়ে পড়েছে। লোহাগাড়ায় এ প্রকল্পের সঠিক বাস্তবায়ন হলে সারাদেশের ন্যায় লোহাগাড়ায়ও নিরক্ষরতার হার কমানো এবং স্বাক্ষরতার হার বৃদ্ধির পাশাপাশি জীবন দক্ষতা উন্নয়নে এগিয়ে যেত এ উপজেলা। 

এ সুবর্ণ সুযোগ থেকে লোহাগাড়াবাসী আজ বঞ্চিত হলো একজন অসাধু, সেচ্ছাচারী ও দূর্নীতিবাজ প্রকল্প কর্মকর্তার কারনে। এব্যাপারে কোন সুপার ভাইজার কথা বললে তিনি তাদেরকে চাকুরী খেয়ে ফেলার হুমকি দেন এবং দুর্ব্যবহার করেন। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায় লোহাগাড়ার ৯ ইউনিয়নে ১৫জন সুপার ভাইজার, ৩ শতাধিক কেন্দ্রে ৬ শতাধিক শিক্ষক দিয়ে প্রতি কেন্দ্রে ১৫ থেকে ৪৫ বছর বয়সী ৩০ জন পুরুষ ও ৩০ জন মহিলা এ প্রকল্পের আওতায় স্বাক্ষরজ্ঞান শিখার কথা থাকলেও চরম্বা, পদুয়া, আমিরাবাদসহ প্রায় সব ইউনিয়নেই নিস্ক্রীয় হয়ে আছে কেন্দ্রগুলো।  

এ ব্যাপরে জানতে চাওয়া হলে লোহাগাড়া ইউনিয়নের সুপারভাইজার মাওলানা আশরফ বলেন, লোহাগাড়া প্রোগ্রাম অফিসার জেনিফার ওরিয়নের অনিয়ম, সেচ্ছাচারিতা, দূর্নীতি ও অবহেলার কারনে শুরুতেই মুখ তুবড়ে পড়েছে মৌলিক স্বাক্ষরতা প্রকল্পটি। তিনি মাষ্টার ট্রেইনার হিসাবে যে সম্মানি পাওয়ার কথা ওই টাকাও প্রকল্প কর্মকর্তা জেনিফার ওরিয়ন আত্মসাৎ করেন। এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করায় তিনি তার বেতন বন্ধের হুমকি দেন এবং তার সাথে খারাপ ও অশুভন আচরণ করেন। 

কেন্দ্র সিডিউল অনুযায়ী পুরুষ কেন্দ্র সন্ধ্যা ৭টা থেকে এবং মহিলা কেন্দ্র বিকাল ৩টার পর চালু রাখার কথা থাকলেও তিনি সিডিউলের বাইরে এসে যখন তখন তার অফিসের পিয়ন আবু বক্করকে পরিদর্শনে পাঠিয়ে সুপার ভাইজার ও শিক্ষকদের কেন্দ্রে থাকতে বাধ্য করেন।

অথচ এখানে সুপার ভাইজারের মাসিক নাম মাত্র ২৫শ আর শিক্ষকদের ২৪শ টাকা সম্মানি/বেতন ধার্য্য থাকলেও ৫ মাস অতিবাহিত হবার পর মাত্র ১ মাসের বেতন পায় তারা। অল্প টাকার এ চাকুরীতে প্রোগ্রাম অফিসার জেনিফার ওরিয়ন যেন সবার গলার কাঁটা হয়ে বিধছে। তিনি এনজিওর সাথে আতাঁত করে ভাগাভাগি হিসাবে নিজে কেন্দ্রে না এসে পিয়নকে পাঠান। 

পিয়ন পরিদর্শন করে প্রোগ্রাম অফিসারের নামে দস্তখত করেন। অথচ এনজিও কেন্দ্র যেসব মালামাল দেওয়ার কথা কোন কেন্দ্রে তা পুরাপুরি দেওয়া হয়নি। ১ মাসের খাতা কলম পুরাপুরি না দিয়েও ৫ মাস কেন্দ্র চালাচ্ছে। যে বই দেওয়া হয়েছে তার বেশিরভাগ উইপোকা ধরে খেয়ে ফেলেছে যা নষ্ট পড়ার অযোগ্য বই। কিন্তু প্রোগ্রাম অফিসার এ ব্যাপারে নিরব কারণ তিনি এনজিও থেকে উপরি মাইনে পাচ্ছেন। 

সুত্র মতে মাহমুদ নামের এনজিও (নারী উন্নয়ন শক্তি-নাস) এর দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার যোগ সাজসে লোহাগাড়ার প্রকল্প কর্মর্কতা জেনিফার ওরিয়নকে এসব ২ নম্বরী কাজে সহায়তা করছেন বলেও  জানা যায়। এদিকে কেন্দ্র ভিত্তিক শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করার জন্য পল্লী বাংলা উন্নয়ন সহযোগীতা সংস্থা দায়িত্ব পেলেও বাস্তবায়নকারী এনজিও নারী উন্নয়ন শক্তি (নাস) এর সাথে আতাত করে তারা সরেজমিনে কোন কেন্দ্রে না এসে উপজেলার আবাসিক হোটেলে অবস্থান করে মোবাইলে যোগাযোগের মাধ্যমে ভূয়া মূল্যায়ন জমা নিচ্ছে। 

বিভিন্ন কেন্দ্রের খবর নিয়ে জানা যায়, দেলোয়ার ও রাজিয়া নামে ২ জন পুরুষ /মহিলা শুরু থেকে কেন্দ্র পরিচালনা করে আসলেও তালিকায় নাম নাই বলে তাদের বেতন দেওয়া হয়নি। তারা দুঃখ করে বলেন এক/দেড় বছর পূর্বে থেকে এ প্রকল্পের কাজ আরম্ভ হয় করোনার কারনে তা পিছিয়ে গেলেও করোনাকালিন সময়ের পর তা চালু হয়। শুরু থেকে এ প্রকল্পের সাথে থেকেও আমরা বেতন পাইনি। তারা এ বিষয়ে ইউএনও বরাবরে অভিযোগ করার কথা বলেন। 

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন ঘুরে সব যায়গায় লোহাগাড়ার প্রকল্প কর্মর্কতা জেনিফার ওরিয়নের দূর্ব্যবহার, অনিয়ম, টাকা আত্মসাৎ, দায়িত্বহীনতা, এনজিওর সাথে ভাগাভাগিসহ  নানা অনিয়মের অভিযোগের পাহাড় দেখা যায়। বক্তব্যের জন্য অভিযুক্ত লোহাগাড়ার প্রকল্প কর্মর্কতা জেনিফার ওরিয়নের সাথে কথা বলতে চাইলে তিনি মুঠো ফোন কল কেটে দেন। 

এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে উপজেলা নির্বাহী কর্মর্কতা মো. আহসান হাবি জিতু প্রতিবেদককে বলেন, অভিযোগ পেয়েছি , শ্রীঘ্রই তদন্ত স্বাপেক্ষে  ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএসি/আরএইচ