লেবুখালী সেতু উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী, প্রথম টোল দিলেন প্রধান প্রকৌশলী আঃ সবুর

রবিবার ২৪ অক্টোবর ২০২১ ২০:১৭


:: মো.সুমন মৃধা, দুমকি (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি ::
 
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের লেবুখালী পায়রা সেতুর উদ্বোধন করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।গতকাল রবিবার সকাল ১১টায় তিনি ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে পায়রা সেতু উদ্বোধন করেন। এসময় সেতু নির্মাণে দেশ ও বিদেশের যারা সহযোগিতা করেছেন তাদের ধন্যবাদ জানান। উদ্বোধনের পরই যান চলাচলের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয় দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম চার লেনের এই সেতুটি।
 
ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রী বলেন,‘করোনার কারণে আমরা সবাই ঘরে বন্দী।আমার খুব ইচ্ছা ছিল যে স্থান দিয়ে নদীপথে যাওয়া-আসা  করেছি সেই নদীপথের ওপর নির্মিত সেতুর ওপর গাড়ি চালিয়ে যেতে। সেখানে গাড়ি চালিয়ে যাব,গাড়ি থেকে নেমে সেতুর ওপর একটু দাঁড়াব। করোনার কারণে পারলাম না।সেটা হবে ইনশাআল্লাহ আমি আসবো।
 
বরিশাল পটুয়াখালীর দুমকি উপজেলার লেবুখালী ইউনিয়নের শুরুর অংশে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত পায়রা নদীর ওপর সেতুটির অবস্থান।পদ্মা সেতুর টোল প্লাজা থেকে এ সেতুটি ১৩৪ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
 
বরিশাল নগরের রূপাতলী থেকে ২৯ কিলোমিটার, পটুয়াখালী শহর থেকে ১১ কিলোমিটার এবং সাগরকন্যা কুয়াকাটার বাস টার্মিনাল থেকে ৭৯ কিলোমিটার দূরে এ সেতুর অবস্থান। সেতুর উত্তর দিকে ওজন স্কেল এবং দক্ষিণ দিকে ইলেকট্রনিক টোল প্লাজা নির্মাণ করা হয়েছে।
 
দক্ষিণাঞ্চলবাসীর স্বপ্নের লেবুখালী পায়রা সেতুতে প্রথম টোল দিয়ে গাড়ি নিয়ে পার হন সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সবুর।
 
লেবুখালী পায়রা সেতুর উদ্বোধন'কে কেন্দ্র করে পটুয়াখালী জেলা প্রশাসন এবং সড়ক ও জনপথ বিভাগ ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ করে।লেবুখালী পায়রা সেতুর দুমকি পটুয়াখালী প্রান্তে করা হয় অস্থায়ী মঞ্চ ও প্যান্ডেল,সেখান থেকেই প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ভিডিও কনফারেন্সে প্রধানমন্ত্রীর সাথে যোগ দেন। লেবুখালী পায়রা সেতুর উদ্বোধন উপলক্ষে পটুয়াখালীর দুমকির লেবুখালীতে গত দুইদিন ধরে ঈদের আমেজ বিরাজ করছিল। দৃষ্টিনন্দন সেতুটি এবং উদ্বোধনী অনুষ্ঠান দেখার জন্য সেতুটির দুই প্রান্তে উপস্থিত হয়েছিল কয়েক হাজার মানুষ।তাদের সকলের মাঝে ছিল বাঁধভাঙ্গা উল্লাস।
 
উল্লেখ্য থাকে যে ২০১২ সালে একনেক অনুমোদন হলেও সেতু নির্মাণের কাজ শুরু হয় ২০১৬ সালের ২৪ জুলাই। কুয়েতফান্ড ফর আরবইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট (কেএফএইডি) এবং ওপেকফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ওএফআইডি) যৌথ অর্থায়নে ১ হাজার ৪৪৭ কোটি ২৪ লাখ টাকা ব্যয়ে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান লংজিয়ান রোড অ্যান্ডব্রিজ কোম্পানি লিমিটেড। কার্যাদেশে সেতু নির্মাণে ৩৩ মাস সময় বেঁধে দেওয়া হলেও চার দফায় প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২২ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত।২০১৩ সালের ১৯ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পায়রা সেতুর ভিত্তিপ্রস্তর উদ্বোধন করেন।
 
পায়রা সেতুর প্রকল্প পরিচালক প্রকৌশলী মো.আবদুল হালিম জানান,লেবুখালী পায়রা সেতুতে কোনো ধরনের দুর্ঘটনা বা কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা যাতে না ঘটে সেজন্য পুরো সেতু সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। যেকোনো দুর্ঘটনায়ও সংকেত মিলবে। তিনি বলেন, এ সেতুর বিশেষত্ব হচ্ছে, দেশে প্রথমবারের মতো সেতুতে যুক্ত করা হয়েছে হেলথ মনিটরিং ও পিয়ার প্রটেকশন সিস্টেম। এর ফলে মাত্রাতিরিক্ত ভারি যান সেতুতে উঠলে সঙ্গে সঙ্গে সংকেত দেবে। একই ভাবে উচ্চমাত্রার ভূমিকম্প ও বজ্র পাতসহ বিভিন্ন ধরনের প্রাকৃতিক দুর্যোগ-যেগুলোতে সেতুর ক্ষতি হতে পারে, সেসব ক্ষেত্রেও সংকেত মিলবে।নদীতে কোনো কিছুর ধাক্কা থেকে রক্ষায় পিলারের চার পাশে নিরাপত্তা পিলার বসানো হয়েছে। এ ব্যবস্থার কারণে আশা করা হচ্ছে সেতুর স্থায়িত্ব বাড়বে।
 
বরিশাল-পটুয়াখালী মহাসড়কের ২৭ কিলোমিটারে পায়রা নদীর ওপর প্রায় এক হাজার ৪৭০ মিটার দৈর্ঘ্য ও ১৯.৭৬ মিটার প্রস্থোর লেবুখালী পায়রা সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে উপকূলের ৫০ লাখ মানুষের স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। সেতুতে যান চলাচল উম্মুক্ত হওয়ার ফলে পটুয়াখালী ও বরগুনা জেলাসহ উপকূলীয় অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বিশেষ পরিবর্তন ঘটবে। পদ্মা সেতু খুলে দেয়া হলে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি পর্যটনকেন্দ্র সমুদ্র সৈকত কুয়াকাটায় ঢাকা থেকে যাতায়াত করতে কোন ফেরী পারাপার হতে হবেনা।
 

এমএসি/আরএইচ