রাজাকার পুত্র তোফায়েলকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবী

শনিবার ৭ মে ২০২২ ১৫:১৬


মোসাদ্দেকুর রহমান সাজু, ডোমার ::
নীলফামারীর ডোমারে ফ্রিডম পার্টির সাবেক নেতা, ডোমার উপজেলা আ" লীগের অব্যাহতি প্রাপ্ত সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কুখ্যাত রাজাকার পুত্র তোফায়েল আহমেদকে স্থায়ী বহিষ্কারের দাবীতে উপজেলা আ"লীগ কার্যালয়ে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

গত বুধবার ৪ মে সকাল সাড়ে দশটায় বাংলাদেশ আ"লীগ ডোমার উপজেলা শাখার আয়োজনে এই কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

উপজেলা আ"লীগের সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খায়রুল আলম বাবুলের সভাপতিত্বে কর্মী সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, উপজেলা আ" লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি মনছুর আলী, ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক চৌধুরী, বিঞ্জান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, পৌর আ" লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি হাফিজুল হক রবি, উপজেলা তাঁতী লীগের সভাপতি শাহজাহান সরকার বুলু প্রমুখ।

এসময় উপজেলা মহিলা আ"লীগের আহবায়ক উম্মে কুলসুম, উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের যুগ্ম আহ্বায়ক রফিকুজ্জামান রুবেল, গনেশ কুমার আগরওয়ালা, যুব মহিলা লীগের  সভাপতি আসমা সিদ্দিকা বেবি, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ডোমার নাট্য সমিতি মিলনায়তনের সভাপতি সহিদার রহমান মানিক এবং উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার আ"লীগসহ সকল সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

উপজেলা আ"লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মঞ্জরুল হক চৌধুরী বলেন, ফ্রীডম পার্টির সাবেক নেতা রাজাকার পুত্র তোফায়েল আহমেদ বিভিন্ন সময় দলের নাম ভাঙ্গিয়ে নানা রকম অপকর্মে জড়িত ছিল। ৩১ মার্চ রংপুর বিভাগের দ্বায়িত্বে নিয়োজিত আ" লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক কেন্দ্রীয় সভানেত্রীর নির্দেশনায়  তোফায়েলকে দলীয় পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান করার পর থেকে ডোমার উপজেলা আ"লীগ কলঙ্ক মুক্ত হয়েছে। এবং দলীয় নেতাকর্মীদের মাঝে প্রান চাঞ্চল্যতা ফিরে এসেছে। 

এখন আর দলের মধ্যে কোন বিভক্ত বা দ্বিধা দন্দ নাই। এখন আমরা সবাই একসাথে দলীয়সহ সকল কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দর ভাবে পরিচালনা করছি। 

কর্মী সমাবেশে উপজেলা আ" লীগের সভাপতি শিক্ষাবিদ অধ্যাপক খায়রুল আলম বাবুল তার বক্তব্যে বলেন, ফ্রীডম পার্টির সাবেক নেতা কুখ্যাত রাজাকার পুত্র তোফায়েল আহমেদ ছাত্র জীবনে ১৯৮৮ সালের সংসদ নির্বাচনে ফ্রীডম পার্টির কুড়াল প্রতীকে নুরননবী (বিশ্ব দুলাল) ডোমার- ডিমলা আসনে নির্বাচন করলে সেই নির্বাচনে তোফায়েল আহমেদ ডোমারে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সমন্বয়ক হিসেবে দ্বায়িত্ব পালন করেন। ফ্রীডম পার্টির হালুয়া রুটি খাওয়া শেষে পরবর্তীতে জাসদে যোগদান করেন, ১৯৯২ সালে জাসদ করা অবস্থায়  তৎকালীন চয়ন হত্যা হলে সেই হত্যাকান্ড মামলায় জাসদ নেতা তোফায়েল আহমেদ জড়িত থাকায় ২৭ জন আসামীর মধ্যে তাকে ১৮ নম্বর আসামী করে। 

এর পরে ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশ আ"লীগ সরকার গঠনের পর ১৯৯৭ সালে সে চয়ন হত্যা মামলা থেকে অব্যাহতি পাওয়ার জন্য তৎকালীন সংরক্ষিত নারী আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ফরিদা রউফ আশা ও সাবেক হুইপ আব্দুর রউফের হাত পা ধরে এবং নানান ফন্দি ফিকির করে বাংলাদেশ আ" লীগে যোগদান করেন। 

১৯৯৯ সালে তোফায়েলের ছোট ভাই মনজুর আহমেদ ডন ডোমার ভিত্তি বীজ আলু উৎপাদন খামারে চাঁদাবাজী করতে গিয়ে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হন এবং সংরক্ষিত নারী আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য ফরিদা রউফ আশা সেই মামলায় ডনের পক্ষে  সুপারিশ না করায় তোফায়েল আহমেদ তার সন্ত্রাসী বাহিনী নিয়ে মহিলা সংসদ সদস্য ফরিদা রউফ আশাকে লাঞ্ছিত করে আ"লীগ কার্যালয় হামলা ভাংচুরসহ লুটতরাজ করে।

এর কিছুদিন পরে ডোমার বাজারস্ত বাটার মোড়ে বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি ও তৎকালীন ভূমি প্রতিমন্ত্রী রাশেদ মোশারফের জনসভায় হামলা চালায় ও গাড়ি ভাংচুর করে এবং সেই হামলার ঘটনায় রাজাকার পুত্র তোফায়েল ও তার ছোট ভাই মনজুর আহমেদ ডনের বিরুদ্ধে ডোমার থানায় মামলা হয়েছিল। 

শুধু তাই নয় গত ২৬ মার্চ ২০২২ইং মহান স্বাধীনতা দিবসের জাতীয় পতাকা উত্তোলন বিষয়কে কেন্দ্র  উপজেলা আ"লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদ জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অসৌজন্য মূলক আচরণ এবং লাঞ্ছিত করা বিষয়টি বিভিন্ন গন মাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় বিষয়টি  বাংলাদেশ আ.লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টিগোচর হয় এরই ধারাবাহিকতায় গত ৩১ মার্চ নীলফামারী জেলা আ"লীগের ডাকে বিশেষ বর্ধিত সভায় কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় রংপুর বিভাগের দ্বায়িত্ব প্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক শাখাওয়াত হোসেন শফিক ডোমার উপজেলা আ. লীগের সাধারণ সম্পাদক তোফায়েল আহমেদকে উপজেলা আ. লীগের দলীয় সাধারণ সম্পাদক পদ থেকে অব্যাহতি প্রদানের ঘোষণা দেন এবং তা বাস্তবায়নের জন্য নীলফামারী জেলা আ"লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে নির্দেশ প্রদান করেন, তারই ধারাবাহিকতায় গত ১ এপ্রিল নীলফামারী জেলা আ" লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক স্বাক্ষরিত তোফায়েল আহমেদকে ডোমার উপজেলা আ" লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা কমিটির কার্যকরী সদস্য পদ থেকে অব্যাহতি প্রদান পত্র উপজেলা আ"লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর প্রেরণ করেন।

তিনি আরও বলেন, ২০১৯ সালে তোফায়েল আ" লীগের নৌকা প্রতিক নিয়ে উপজেলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে এলাকার মানুষকে চাকুরী দেওয়ার নামে কোটি টাকা আত্নসাত এবং নানা রকম অপকর্মের সাথে সম্পৃক্ত হন। 

এতে করে আ" লীগের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে তিনি জানায়,পরিশেষে বাংলাদেশ আ"লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে তোফায়েল আহমেদকে আজীবনের জন্য বাংলাদেশ আ"লীগ থেকে বহিষ্কারের দাবী জানিয়েছেন।

এমএসি/আরএইচ