যশোরে ব্যাংকে চাকরি দেয়ার নামে কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

বৃহস্পতিবার ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৩৬


 

:: বিল্লাল হোসেন, যশোর প্রতিনিধি ::

যশোরের চৌগাছায় সিটি ব্যাংকের তিনটি এজেন্ট শাখায় ২৪ জনকে নিয়োগের প্রতিশ্রুতি দিয়ে জামানত বাবদ এক কোটি ২০ লাখ টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়েছে দুই এজেন্ট ও তার প্রতিনিধি। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী ১৭ জন চৌগাছা থানায় লিখিত অভিযোগ  করেছেন। তারা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন। অভিযুক্ত দুই এজেন্ট ও তার প্রতিনিধির ফোন নম্বর বন্ধ থাকায় তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

অভিযোগে বলা হয়েছে, ২০১৯ সালের মার্চ মাসে যশোরের শার্শা উপজেলার যাদবপুর গ্রামের জহির উদ্দিন বাবর, যশোর সদর উপজেলার ইছালি গ্রামের আজিজুর রহমান ডেভিড ও চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুর গ্রামের তরিকুল ইসলাম সিটি ব্যাংকের চৌগাছা, পুড়াপাড়া ও ছুটিপুর এজেন্ট শাখায় চাকরি দেয়ার দেয়ার জন্য ভুক্তভোগী ১৭ জনসহ মোট ২৪ জনের সাথে যোগাযোগ করেন। তাদের মাসিক ১৪ হাজার টাকা করে বেতন দেয়া হবে বলা হয়।

ভুক্তভোগীরা তাদের কথায় প্রলুব্ধ হয়ে আজিজুর রহমান, জহির উদ্দিন বাবর এবং তরিকুল ইসলামের কাছে ব্যাংকের যশোর ও খুলনা জেলার এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের ব্যবস্থাপক আবু জাফরের উপস্থিতিতে পাঁচ লাখ টাকা করে জামানত দিয়ে ব্যাংকের এজেন্ট শাখায় যোগদান করেন। তাদের ব্যাংকটির মোট ১০টি এজেন্ট শাখার এজেন্ট আজিজুর রহমান ডেভিড ও জহির উদ্দিন বাবরের মালিকানাধীন তাজিমুল টেকনোলজি লি. নামের একটি প্রতিষ্ঠানের প্যাডে ইংরেজিতে নিয়োগপত্র দেয়া হয়। সেখানে ‘ট্রেইনি বিজনেস এক্সিকিউটিভ পদে’ নিয়োগ দিয়ে ১৪ হাজার টাকা মাসিক বেতন নির্ধারণ করা হয়। কর্মদক্ষতার ভিত্তিতে পদোন্নতি ও বেতন বাড়ানোর প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। কয়েকজনকে জামানতের টাকার বিপরীতে জহির উদ্দিন মো. বাবরের সিটি ব্যাংকের একটি হিসাবের চেকও দেয়া হয়।

ভুক্তভোগীরা জানান, নিয়োগের পর আমেনা খাতুনসহ দুজনকে ঢাকায় ট্রেনিং সিটি ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে প্রশিক্ষণ দিয়ে এজেন্ট শাখায় কাজ দেয়া হয়। চৌগাছা শহরের একটি ভবনের দ্বিতীয় তলায় এজেন্ট শাখার কার্যালয় খোলা হয়। এজেন্ট শাখায় কার্যক্রম শুরুর পর প্রতি মাসে ১০ হাজার টাকা করে তিন মাসের বেতন দেয়া হয় তাদের। এরপর নানা অজুহাতে বেতন বন্ধ রেখে ২০২০ সালের মার্চ মাসে এজেন্ট শাখার কার্যক্রম বন্ধ করে দেয়া হয়। তখন থেকেই ভুক্তভোগীরা এজেন্ট জহির উদ্দিন মো. বাবর ও আজিজুর রহমান ডেভিড এবং তাদের এজেন্ট শাখার পরিচালক তরিকুল ইসলামের মোবাইল ফোন বন্ধ পান। এমনকি তরিকুলের চৌগাছা উপজেলার হাকিমপুরের বাড়িতে গিয়েও তাকে পাননি ভুক্তভোগীরা। তারা বলেন, জামানতের টাকার বিপরীতে যে চেক দেয়া হয়েছে সেই হিসাবে টাকা তুলতে গেলে বলা হয়েছে ওই হিসাবে কোনো টাকা নেই।

তারা বলেন, জামানতের টাকা দেয়ার বিষয়ে সব জানতেন ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের যশোর ও নড়াইল জেলার ব্যবস্থাপক আবু জাফর। তার সামনেই আমরা জামানতের টাকা দিয়েছি। এছাড়া ব্যাংকের আরেক কর্মকর্তা গৌতমসহ আরও কয়েকজন বিষয়টি অবহিত। অথচ আমাদের জামানতের বিষয়টির সুরাহা না করেই ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কিছুদিন পরে চৌগাছার অন্য একজনকে নতুন এজেন্ট নিয়োগ করেছেন। তিনি শহরের ধনী প্লাজায় এজেন্ট শাখার কার্যক্রম চালাচ্ছেন।

ভুক্তভোগী ১৭ জন বলেন, আমরা জামানতের টাকা দিতে নিজেদের জমি, গরু, ছাগল বিক্রি করে এমনকি সুদের ওপর টাকা ধার করেছি। এখন তিন বছর ধরে একদিকে বেকার দিনাতিপাত করছি, অন্যদিকে ধার দেনা পরিশোধ করতে না পেরে মানবেতর দিন কাটাচ্ছি। অবশেষে বাধ্য হয়ে থানায় অভিযোগ করেছি।

চৌগাছা থানার ওসি সাইফুল ইসলাম সবুজ জানিয়েছেন, ১৭ জন ভুক্তভোগীর লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত করে মামলা নথিভুক্ত করা হবে।

এ বিষয়ে সিটি ব্যাংকের এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের নড়াইল ও যশোর জেলার ব্যবস্থাপক আবু জাফর বলেন, তাদের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি বা ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অবহিত নই। এটা সম্পূর্ণ এজেন্টের দায়িত্ব।

 

এমএসি/আরএইচ