মৌলভীবাজারে ৭ দফা দাবিতে রিক্সা সমিতির স্মারকলিপি

সোমবার ১৮ এপ্রিল ২০২২ ২০:১৪


মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ::
নিত্য প্রয়োজনীয় বাজারদরের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ন্যায্য ভাড়ার তালিকা প্রদান, ব্যাটারিচালিত রিকশা ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধসহ রিকশা শ্রমিকদের উপর নির্যাতন বন্ধ, স্থায়ী স্ট্যান্ড প্রদান ও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করে স্বল্পমূল্যে রেশনিং চালুসহ ৭ দফা দাবিতে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেছে জেলা রিকশা শ্রমিক ইউনিয়ন। 

সোমবার (১৮ এপ্রিল) দুপুরে রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সোহেল মিয়ার নেতৃত্বে এক প্রতিনিধিদল জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে এই স্মারকলিপি প্রদান করেন। 

এসময় আরও উপস্থিত ছিলেন রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সহ-সাধারণ সম্পাদক মো. জসিমউদ্দিন, কোদালীপুল আঞ্চলিক কমিটির সাধারণ সম্পাদক মো. সুহেল আহমেদসহ। রিকশা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মো. সোহেল মিয়া ও সাধারণ সম্পাদক মো. দুলাল মিয়া স্বাক্ষরিত স্মারকলিপির অনুলিপি পৌর মেয়র, পুলিশ সুপার, মৌলভীবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও মৌলভীবাজার মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বরাবর পেশ করা হয়। 

স্মারকলিপিতে উল্লেখ করা হয় গ্রাম্য জোতদার মহাজনের শোষণে জমি-জমা হারিয়ে শহরে এসে রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকরা প্রতিদিন গভীর রাত পর্যন্ত প্রখর রোদ ও ঝড়বৃষ্টির মধ্যে অমানুষিক পরিশ্রম করে দুঃখ কষ্টের জীবন জীবিকা নির্বাহ করেছেন। বর্তমানে চাল, আটা, ডাল, তেল, লবন, চিনিসহ নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্যের লাগামহীন অব্যাহত ঊর্ধ্বগতির বাজারে রিকশা-ভ্যান শ্রমিকদের বেঁচে থাকা দায় হয়ে পড়েছে। 

এরকম সময়ে শহরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ তৎপরতা শ্রমিকদের আরও দুর্বিষহ পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। অথচ গত ৪ এপ্রিল উচ্চ আদালতের এক রায়ে মহাসড়কে ব্যাটারি চালিত তিন চাকা যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হলেও আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের মধ্যে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে কোন নিষেধাজ্ঞা প্রদান করা হয়নি। তারপরও সম্প্রতি ব্যাপকভাবে ব্যাটারি চালিত রিকশা ও ভ্যান ধরপাকড় চলছে। শ্রমিকরা অবিলম্বে এই তৎপরতা বন্ধ করার দাবি জানান।

স্মারকলিপিতে আরও উল্লেখ করা হয়, বর্তমান দ্রব্যমূল্যের সাথে সমন্বয় করে যথাযথ ভাড়া নির্ধারণ না করায় যাত্রী সাধারণের সাথে ভাড়া নিয়ে বাদানুবাদ লেগেই থাকে এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে রিকশা শ্রমিকদের শারীরিক লাঞ্চনার শিকার হতে হয়। তাছাড়া কোনো কোনো যাত্রী যাত্রা পথে এক মিনিটের কথা বলে রিকশা থামিয়ে সময় ক্ষেপন করলেও সেই অনুপাতে ন্যায্য ভাড়া পরিশোধ করেন না। 

একশ্রেণীর যাত্রীর জোরপূর্বক রিকশায় উঠা, এক জায়গার কথা বলে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া, অতিরিক্ত যাত্রী বহনে বাধ্য করা ইত্যাদি শ্রমিকদের সহ্য করতে হয়। অন্যায়ভাবে মারধোর, হাওয়া ছেড়ে দেওয়াসহ অন্যান্য পরিবহণের শ্রমিক, দোকানদার, পথচারীদের সাথে কোন ঘটনা ঘটলেই ন্যায়-অন্যায় বিচার না করে রিকশা শ্রমিকদের উপর জুলুম নির্যাতন সাধারণ ঘটনায় পরিণত হয়েছে। তারপরও নিতান্ত বাধ্য হয়ে জীবন ও জীবিকা রক্ষার্থে শহরের নিম্নআয়ের লোকজন এবং রিকশা চালকরা ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। 

এই সকল রিকশার অধিকাংশের মালিকই হচ্ছেন রিকশা চালক নিজে, যারা এনজিও ও মহাজনের নিকট হতে উচ্চ সুদে ঋণ করে অথবা নিজের শেষ সহায়-সম্বলটুকু বিক্রি করে ব্যাটারি চালিত রিকশা কিনে জীবন সংগ্রাম চালাচ্ছেন। মানুষ হয়ে মানুষকে টেনে নেওয়ার বদলে ব্যাটারি চালিত এই রিকশায় শ্রমিকরা যেমন তুলনামূলক সহজে কম পরিশ্রমে যাত্রী পরিবহণ করতে পারছেন তেমনি স্বল্প খরচে আমরাদায়ক পরিবহণ হিসেবে অল্প সময়ের মধ্যে যাত্রী সাধারণের কাছে এই সকল রিকশা অত্যন্ত জনপ্রিয় হয়ে উঠে। যার কারণে বর্তমানে দেশের অনেক জেলায়, এমন কি মৌলভীবাজার জেলার কোন কোন উপজেলাতেও পা-চালিত রিকশা প্রায় উঠেই গেছে। 

স্মারকলিপিতে আরও বলা হয়। হঠাৎ করেই মহল বিশেষের প্ররোচণায় যানজট ও দুর্ঘটনার অজুহাত তুলে শ্রমিক ও যাত্রী সাধারণের নিকট জনপ্রিয় হয়ে উঠা এই রিকশা উচ্ছেদের নানা রকম তৎপরতা  চলছে। কিন্তু নিরীহ, দরিদ্র, অবহেলিত রিকশা শ্রমিকদের রুটি রোজীকে হুমকির মুখে ফেলে দিয়ে রিকশা উচ্ছেদের তৎপরতা চললেও ব্যাটারি চালিত রিকশা বিক্রিতে কোনো রকম বাঁধা-নিষেধ নেই। যার কারণে এখনও অবাধে ব্যাটারি চালিত রিকশা বিক্রি হচ্ছে, মহল বিশেষও এব্যাপারে নিরবতা পালন করছেন। 

শ্রমিকদের প্রশ্ন হচ্ছে এই রিকশাগুলো তো তারা তৈরি করেননি; জীবনের শেষ সম্বলটুকু দিয়ে কিনে জীবিকা নির্বাহ করার চেষ্ঠা করছেন। যদি এই রিকশা অবৈধই হয়ে থাকবে তাহলে কেন এগুলো বিক্রি করা হলো বা এখনও কেন বিক্রি করা হচ্ছে? দুর্ঘটনার জন্য শুধুমাত্র ব্যাটারি চালিত রিকশাকে দায়ী করে উচ্ছেদ চালানো উদ্দেশ্যমূলক। কারণ অন্যান্য পরিবহনের সাথে এই রিকশাগুলোর ছোট-খাটো দুএকটি দূর্ঘটনা ঘটে থাকলেও তার দায় কার সেটা নির্ধারিত নয়। 

অন্যান্য পরিবহণের দুর্ঘটনায় যেরকম প্রাণঘাতি বা ক্ষয়ক্ষতি হয় সে তুলনায় এই রিকশাগুলোর দূর্ঘটনায় ক্ষয়ক্ষতি হয় না বললেই চলে এবং দুর্ঘটনার হারও তুলনামূলক কম। তাই দুর্ঘটনারোধে ও যানজট নিরসনে প্রথমেই যেখানে সেখানে সকল ধরণের পরিবহনের অবৈধ পার্কিং বন্ধ করতে হবে এবং রিকশা চলাচলের জন্য পৃথক লেন তৈরি করতে হবে। পার্কিংয়ের জন্য শহরে পর্যাপ্ত ব্যবস্থা ও সকল মার্কেটে নিজস্ব পার্কিং ব্যবস্থা করতে হবে। 

তাই সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে ৭ দফা দাবি বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসকের দ্রুত ভূমিকা কামনা করেন শ্রমিকরা। ৭ দফা দাবি হলো- 
১. বর্তমান বাজারদরের সাথে তাল মিলিয়ে রিকশা ভাড়া পুনঃনির্ধারণ করতে হবে। 

২. উচ্চ আদালতের রায় অনুযায়ী আঞ্চলিক সড়কে ও শহরের ভিতরে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান চলাচলে বাঁধা দেওয়া যাবে না। শ্রমিকদের হয়রানি বন্ধ করে অবিলম্বে ব্যাটারি চালিত রিকশা-ভ্যান উচ্ছেদ বন্ধ করতে হবে।

৩. যানজট নিরসনে যত্রতত্র অবৈধভাবে গাড়ি পার্কিং বন্ধ করতে হবে।

৪. যাত্রী ও শ্রমিকদের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত রিকশা স্ট্যান্ড স্থাপন করতে হবে ।

৫. রিকশা শ্রমিকদের উপর সকল অন্যায় জুলুম-অত্যাচার-নির্যাতন বন্ধ করতে হবে।

৬. রিকশা-ঠেলা-ভ্যান শ্রমিকসহ শ্রমজীবী জনগণের জন্য স্বল্পমূল্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় সকল জিনিষপত্রের রেশনিং ব্যবস্থা চালু করতে হবে।

৭. শাহমোস্তফা সড়ক ও শ্রীমঙ্গল সড়কের সংযোগস্থলে ট্রাফিক গোল চত্ত্বর নির্মাণ করতে হবে।

এমএসি/আরএইচ