মানিকগঞ্জে রাতের আঁধারে লুট হচ্ছে ফসলি জমির মাটি

শনিবার ১৯ মার্চ ২০২২ ২১:৫৮


মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি :: 
মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলার  রাতের আঁধারে অবাধে কাটা হচ্ছে ফসলি জমির মাটি। এসব মাটি বিক্রি হচ্ছে উপজেলার বিভিন্ন স্থানে। মাটি পরিবহনে অতিরিক্ত ও ওভারলোড ড্রাম ট্রাক ও ট্রাক্টর চলাচলের কারণে নষ্ট হচ্ছে রাস্তা এবং পার্শ্ববর্তী কৃষি জমি। অভিযোগ রয়েছে, মাটি কাটার সাথে সরকারদলীয় নেতাকর্মীরা জড়িত থাকায় স্থানীয় লোকজন ভয়ে তাদের কিছু বলতে পারে না। এমনকি প্রশাসনও তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়না।

সরজমিনে দেখা যায়, উপজেলার রামকৃষ্ণপুর ইউনিয়নের রামকৃষ্ণপুরে এবং চালা ইউনিয়নের উত্তর মেরুন্ডী ও কচুয়া এলাকায় চলছে ফসলি জমির মাটি কাটা। এসবের সাথে জড়িত যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। সন্ধ্যা থেকে শুরু হয়ে ভোর পর্যন্ত চলে মাটি কাটা ও মাটি পরিবহন।

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, রামকৃষ্ণপুর গ্রামে প্রায় দুইমাস ধরে ফসলি জমির মাটি কেটে বিক্রি করে চলেছেন গালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক দুলাল সূত্রধর। তার মাটি পরিবহনে ধ্বংসপ্রায় রামকৃষ্ণপুর পাকা সড়ক থেকে নয়াকান্দি পর্যন্ত মাটির রাস্তা। রাস্তাটি গতবছর টিআর বরাদ্দ থেকে সংস্কার করা হয়েছিলো।

এছাড়াও, স্থানীয় আবু তালেবের বসতবাড়ির উঠানের উপর দিয়ে মাটি পরিবহনের গাড়ি চলাচলের কারণে বসতবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। আবু তালেবের স্ত্রী আমেনা বলেন, সারারাত মাটি কাটার যন্ত্র ও গাড়ির শব্দে প্রায় দুইমাস যাবত রাতে ঘুমাতে পারি না। আমার বাড়িঘর নষ্ট হচ্ছে। মাটি কাটতে নিষেধ করলে লোকজন নিয়ে মারধোর করতে আসে, হুমকি দেয়। একবার আমার স্বামীকে স্থানীয় কিছু নেতাকর্মীরা মারতেও এসেছিলো

আমেনার অভিযোগ, তিনিসহ কয়েকজন স্থানীয় সাবেক ইউপি সদস্য মো. কামাল হোসেন ও দুলাল সূত্রধরের নামে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েও এখনো কোন ফল পাননি। মুঠোফোনে মো. কামাল হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি মাটি কাটায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেন। তবে, দুলাল সূত্রধরের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

চালা ইউনিয়নের উত্তর মেরুন্ডি এলাকায় ফসলি জমির মাটি কাটছেন চালা ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের নবনির্বাচিত সদস্য মো. রবিউল ইসলাম রবি, উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান ফিরোজ এবং সহ-সভাপতি আমিনুল ইসলাম আরোজ। স্থানীয় কয়েকজন জানান, তারা অন্যের ফসলি জমির উপর দিয়ে মাটি পরিবহন করছেন। সরকারদলীয় নেতাকর্মী হওয়ার কারণে ভয়ে তাদের কেউ কিছু বলতে সাহস পায়না।

মুঠোফোনে মাটি কাটার সাথে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন আমিনুল ইসলাম আরোজ ও ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম। তবে কামরুল হাসান ফিরোজের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করলেও তিনি রিসিভ করেননি।

অপরদিকে চালা ইউনিয়নের কচুয়া এলাকায় ফসলি জমির মাটি কাটছেন চালা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদের ভাই কাজী বাদল এবং চালা ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন মিলন।

মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে কাজী বাদল বলেন, আমার ভাই চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদের নেতৃত্বে মাটি কাটা চলছে।

 সাখাওয়াত হোসেন মিলনও মাটি কাটায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। তবে, মাটি কাটায় জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছেন চেয়ারম্যান কাজী আব্দুল মজিদ।

এব্যাপারে হরিরামপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) তাপসী রাবেয়া মুঠোফোনে বলেন, আমরা কয়েকবার স্পটে গিয়েছি। কিন্তু কাউকে উপস্থিত পাইনি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, আমি কোন অভিযোগ পাইনি। তবে গতকাল উত্তর মেরুন্ডি গিয়েছিলাম, ওখানে কাউকে পাইনি। ফসলি জমির মাটি কাটা রোধে আমাদের অভিযান চলমান আছে। দ্রুতই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

 

এমএসি/আরএইচ