মহেশপুরে কুল চাষে স্বাবলম্বী ৮শ পরিবার, প্রতিদিন বিক্রি ৩০ লাখ টাকা

বুধবার ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:২৬


এম বুরহান উদ্দীন, ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহের মহেশপুরে কুল চাষ করে সাফলতা অর্জন করেছেন মান্দারবাড়ীয়া ইউপির ভাটপাড়া গ্রামের প্রায় ৮শ অধিক কৃষক। উপজেলার সব থেকে বেশি কুল চাষের রেকর্ডও এই গ্রামের। প্রতিদিন ৩০ লাখ টাকার কুল ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এ গ্রাম থেকে।

গ্রামের মাঠে গেলে দেখা যাবে- বিস্তৃত মাঠ জুড়ে বাউকুল, বলসুন্দরী ও থাই আপেল কুলের আবাদ। এখানের প্রায় ৩ হাজার বিঘা জমির মধ্যে ২ হাজার ৪শ বিঘা জমিতে কুলের আবাদ রয়েছে। আর এসব কুল চাষে জড়িত এলাকার প্রায় ৮শ অধিক পরিবার। কেউ নিজের জমি, কেউবা অন্যের জমি লীজ নিয়ে এসব কুল বাগান করেছেন। পাইকারি ক্রেতারা বাগান থেকে কুল কিনে নিয়ে যাওয়ায় কুল বেচতে ঝামেলা পোহাতে হয় না কুলচাষিদের।

সরেজমিনে বাউকুল মাঠে গিয়ে কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২০১১ সালের দিকে গ্রাম্য চিকিৎসক তাজু উদ্দিন উপজেলা কৃষি অফিসের সার্বিক সহযোগিতায় প্রথমে দেড় বিঘা জমিতে বাউ কুল চাষ করেন। সেবছর ভালো লাভও হয় তার। পরে তিনি আরো ৪ বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন। এরপর থেকে তার দেখা-দেখি কুল চাষ বাড়তে থাকে। যেহেতু এই চাষে অল্প সময়ে লাভের ভাগ বেশি তাই কৃষকের মধ্যে কুল চাষের আগ্রহ বেশি।

প্রথম কুলচাষি তাজু উদ্দিন বলেন, প্রথম বছরে আমি দেড় বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেছিলাম। বর্তমানে আমার ৮ বিঘা জমিতে বিভিন্ন জাতের কুল রয়েছে। এক বিঘা জমিতে কুল চাষে ত্রিশ থেকে চল্লিশ হাজার টাকা খরচ করে এক থেকে দেড় লাখ টাকা আয় করা সম্ভব বলেও জানান তিনি।

পনের বিঘা জমিতে কুলের বাগান করা সোহরাব হোসেন বলেন, প্রতি কেজি বাউকুল পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা দরে। আর বলসুন্দরী কুল ৪০ থেকে ৫০ টাকা। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্নস্থানের পাইকারি ক্রেতারা বাগান থেকেই কুল ট্রাকে ভরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের গ্রামের মাঠ থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার কুল বিক্রিয় করা হয়।

এক বিঘা জমিতে ৯০ থেকে ১০০ কাটুন কুল সংগ্রহ করা যায়। বলসুন্দরী কুলের দাম একটু বেশি সে কারনে চাষিরা বলসুন্দর কুল চাষে বেশি ঝুঁকছেন। ৩-৪ মাসের মধ্যে কুল খাওয়ার উপযোগী হয় এবং বাগান থেকেই পাইকারি ক্রেতারা কুল কিনে নিয়ে যাওয়ায় কুল বেচতে কোন ঝামেলা নেই।

মান্দারবাড়ীয়া ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান জানান, এ ইউনিয়নের ভাটপাড়া গ্রাম কুল চাষের জন্য বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এখান থেকে প্রতিদিন ট্রাক ভর্তি কুল দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হচ্ছে। কুল চাষ করে কৃষক যেমন সাবলম্বী, পাশাপাশি আয়ের খাত বাড়ায় দিন মজুরদের কাজ ও বেড়েছে। কৃষকরা যদি এভাবে চাষবৃদ্ধি করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কৃষির অবস্থায় আরো শক্ত হবে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা হাসান আলী জানান, ২০১১ সালের দিকে উপজেলা কৃষি অফিসের দ্বিতীয় শস্য বহুমুখি প্রকল্প (এসসিডিপি) আওতায় পাইলট প্রকল্প হিসেবে তাজু উদ্দিন দেড় বিঘা জমিতে বাউকুল চাষ করেন। এরপর থেকেই এই গ্রামে কুল চাষ বেড়েছে। মুলত অল্প সময়ে এই চাষ করে বেশি লাভ হওয়ায় কৃষকরা কুল চাষের আগ্রহ দেখাচ্ছে।

কুলের পাশাপাশি এই জমিতে বোরো ধান, কলাই চাষ করা যায়। কুলের আবাদ বৃদ্ধিতে চাষিদের কৃষি অফিস থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। কারিগারি, রোগবালাই, কৃষক প্রশিক্ষণ, কুল প্যাকেজিংসহ সার্বিক বিষয়ে দিকনির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। কুল চাষীদের সার্বিক সহযোগিতার জন্য হাসান নামের একজন উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা মান্দারবাড়ীয়া ব্লকে রাখা হয়েছে।

মহেশপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুল করিম বলেন, কুল চাষীদেরকে উদ্বুদ্ধো করার জন্য কুল চাষীদের নিয়ে উঠান করা হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে একটি বাড়ি একটি খামারের আওতায় একটি সমিতি করা ও সল্প সুদে ঋিণ দেওয়ার ব্যাবস্থা সহ সার্বিক সহযোগিতা করা হবে।

এমএসি/আরএইচ