বিষ মেরে মধু সংগ্রহে ধুঁকে ধুঁকে মরছে মৌমাছি 

বুধবার ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৮:৩৪


 
:: ফেরদৌস সিহানুক শান্ত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ::
 
মার্কেটের তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলার কার্নিসে মৌমাছির চাক বসেছে। ছয় মাসের মাঝারি চাকে অধিক মধু পেতে মধু সংগ্রহ করে না মার্কেট কমিটি। তাই কিছুদিন পরপরই নাইটগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে মৌচাক ভেঙে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। তবে এবার শুধু মধুই নিয়ে যায়নি তারা। মৌচাকে বিষ মেরে চুরি করেছে মধু। দুর্বৃত্তদের এমন নিষ্ঠুরতায় ধুঁকে ধুঁকে মরছে মৌমাছিরা। 
 
দুর্বৃত্তদের এমন নিষ্ঠুরতার শিকার হয়ে প্রাণ যাচ্ছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়ন পরিষদের সামনের ভবনের কার্নিসে থাকা মৌমাছিদের। গত ৮-৯ দিন আগে গভীর রাতে বিষ মেরে মধু চুরির ফলে প্রতিদিন কয়েকশ করে মৌমাছির প্রাণ যাচ্ছে। স্থানীয়রা বলছেন, মৌমাছির মতো প্রাণীর সাথে এমন নিষ্ঠুর আরচণের জন্য দায়ীদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। 
 
ভবনটি সদর উপজেলার গোবরাতলা ইউনিয়নের সকল গ্রাম্য চিকিৎসকদের নিয়ে গঠিত সমবায় সমিতির। সমিতির একজন সদস্য গ্রাম চিকিৎসক তোহরুল ইসলামের ফার্মেসী রয়েছে মৌচাকটির নিচেই। তিনি বলেন, কে বা কারা ভেঙেছে জানি না। কিন্তু মৌচাক ভেঙে দেয়ার পর থেকে প্রতিদিন মৌমাছিগুলো মরছে আর ঝরে ঝরে নিচে পড়ছে। মার্কেট কমিটি মৌচাক ভাঙতে দেয় না। তাই রাতের অন্ধকারে চুরি করে মধু ভেঙে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা।
 
মৌচাকের সামনে থাকা হোটেলের শ্রমিক মাহিদুর রহমান জানান, আমরা সাধারণত রাত ৯-১০টার মধ্যে হোটেল বন্ধ করি। মৌচাক ভাঙার দিন রাতেও বাসায় যাওয়ার সময় সবকিছু ঠিকঠাক দেখে যায়। কিন্তু পরেরদিন সকালে এসে দেখি মৌচাক ভেঙে নিয়েছে। এর আগেও কয়েকবার এভাবে রাতের অন্ধকারে মধু চুরি করে নিয়ে গেছে। কিন্তু এবার মৌচাকে কি দিয়েছে জানি না। মধু চুরির করার পর থেকে মৌমাছিগুলো মরছে। 
 
স্থানীয় বাসিন্দা ষাটোর্ধ তৌহিদুর রহমান বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে একটা কাজে এসেছিলাম। এরপর দেখি, হাজার হাজার মৌমাছি মৌচাকের নিচে পড়ে আছে। পরে জানতে পারলাম, বিষ মেরে মধু ভেঙে নেয়ার কারনে এভাবে মৌমাছিগুলো মরছে। যে বা যারা এমন জঘন্য কাজ করেছে তাদের কঠোর শাস্তি হওয়া উচিত। এমন ঘৃণিত অপরাধীদের আল্লাহ ক্ষমা করবে না। মৌমাছিগুলো গত কয়েকদিন থেকে ঝটপট করতে করতে মরছে। 
 
কলেজছাত্র নাসির আহমেদ বলেন, দু-এক মিনিট পর পর একটি করে মৌমাছি মৌচাক থেকে ঝড়ে পড়ছে। নিচে পড়ার পরেও তারা জীবিত রয়েছে। কিছুক্ষণ ধুঁকে ধুঁকে থাকার পর মারা যাচ্ছে। মৌমাছিগুলোর ঝটপট দেখেই অনুমান করা যাচ্ছে কি পরিমাণ কষ্টে তাদের মৃত্যু হচ্ছে। আগুনের ধোঁয়া দিলেই মৌচাক থেকে মৌমাছি পালিয়ে যায়। মধু সংগ্রহ শেষ হলে পুনরায় মৌমাছিরা এসে মৌচাক গঠন করে। তাই বিষ স্প্রে করে মেরে ফেলার কোন প্রয়োজনই নেয়। কাজটা খুব অন্যায় হয়েছে। 
 
স্থানীয়রা বলছেন, এমন জঘন্য কাজের পর অপরাধীদের খুঁজে বের করতে কাজ শুরু করেছেন তারা। দুর্বৃত্তদেরকে খুঁজে বের করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করা হবে। যাতে এমন কাজ ভবিষ্যতে আর কেউ না করে। 
 
পলশা উত্তরপাড়া জামে মসজিদের খতিব মাওলানা হযরত আস্তারুল বিন আব্দুস সামাদ জানান, আল্লাহর রাসুল হযরত মোহাম্মদ (সাঃ) ক্ষতিকর কীটপতঙ্গ মারার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু মৌমাছি একটি অত্যান্ত উপকারী পতঙ্গ। মৌমাছি  ফুলের নির্যাস হতে মধু সংগ্রহ করে মৌচাকে সংরক্ষণ করে। মধু উচ্চ ঔষধিগুণ সম্পন্ন একটি ভেষজ উপাদান। এই মধু আমরা বিভিন্ন উপকারী কাজে খাদ্য বা ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করি। তাই এভাবে বিষ দিয়ে মৌমাছি মেরে মধু সংগ্রহ ইসলামের দৃষ্টিতে বড় ধরনের অপরাধ। এটি মহান সৃষ্টিকর্তা আল্লাহর হুকুম অমান্য করার শামিল। 
 
 
 

এমএসি/আরএইচ