বাউফলে অবৈধ সিসা তৈরির কারখানা, ঝুঁকিতে পরিবেশ

শনিবার ১২ মার্চ ২০২২ ১৭:০০


মিশু সিকদার, বাউফল ::
কোন ধরনের বৈধ লাইসেন্স ছাড়া গড়ে উঠেছে সিসা তৈরি অবৈধ কারখানা। অকেজো ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি হচ্ছে সিসা। এ কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ প্রভাব ফেলছে পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর। এমনই এক অবৈধ কারখানার খোঁজ মিলেছে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসিংগা গ্রামে। ওই কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় সাদ্দাম হোসেন(৩৫) নামের এক ব্যাক্তি। এটি বন্ধের দাবি তুলেছেন স্থানীয়রা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, উপজেলা সদর ইউনিয়নের গোসিংগা গ্রামে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে সিসা তৈরির কারখানা। কিন্তু এখানে নেই স্ংশ্লিষ্ট দপ্তরের কোন লাইসেন্স কিংবা পরিবেশ আধিদপ্তরের কোন অনুমোদন, এমনকি কোন ট্রেড লাইসেন্স পর্যন্ত নেই কতৃপক্ষের কাছে। রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে ৫০শতক জমি বাৎসরিক ৪০ হাজার টাকয় ভাড়া নিয়ে একই এলাকার মো. সাদ্দাম হোসেন গড়ে তুলেছেন অকেজো ব্যাটারী পুড়িয়ে সিসা উৎপাদন কারখানা।

এর চার পাশে টিনের বেড়া ও পলিথিন দিয়ে প্রচীর তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা, সাতক্ষিরা ও বগুড়া থেকে আনা হয়েছে সিসা তৈরির কাজে অভিজ্ঞ ১০/১২ জন শ্রমিক। সাথে স্থানীয় আরও কয়েজন শ্রমিক কাজ করতেছের সেখানে। কারখানার ভিতরে গর্ত করে কাঠ-কয়লা দিয়ে পোড়ানো হয় পুরোনো ব্যাটারি। রাতদিন চলে সিসা তৈরি কাজ। ওই কারখানার আশে পাশে রয়েছে ফসলী জমি, গরুর খামার ও কয়েকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

সিসা তৈরির সাথে জড়িত শ্রমিকরা জানান, ‘পরিত্যক্ত ব্যাটারির কোষগুলো সিমেন্টের মতো জমাট বেঁধে যায়। গর্তের মধ্যে কাঠ ও কয়লা দিয়ে অ্যাসিডমিশ্রিত জমাট বাঁধা বর্জ্য সাজানো হয়।

এরপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে একটি পাম্পের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে হাওয়া দেওয়া হয়। কাঠ ও কয়লা পুড়িয়ে সিসা তরল করা হয়। একটি বড় ব্যাটারি থেকে প্রায় ২২ কেজি, ছোট ব্যাটারি থেকে ১০ কেজি সিসা পাওয়া যায়। এ সিসা ও প্লাস্টিক ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাটারি তৈরির কোম্পানীর কাছে বিক্রি হয়।

স্থানীয়রা অভিযোগ করে বলেন, দিনে ব্যাটারির অ্যাসিড মিশ্রিত সিসা ও প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। রাতে অ্যাসিড মিশ্রিত ব্যাটারীগুলো জ্বালানো হয়। এসময় অস্বাভাবিকভাবে নির্গত হয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ মিশ্রিত ধোঁয়া। দৈনিক ওই কারখানায় প্রায় ২টন সিসা উৎপাদন করা হয়। ওই কারখানা বন্ধের জোর দাবিও তোলেন স্থানীয়রা।

চিকিৎসকদের অভিমত, এ ধরনের পদার্থ মানুষের স্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ওই কারখানার আশেপাশের গোখাদ্য পর্যন্ত বিষাক্ত হয়ে যায় যা খেলে গবাদি পশু অসুস্থ্য কিংবা মারাও যেতে পারেন।

এদিকে কারখানা দেওয়ার দেড় মাসের মাথায় স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ ও মজিবর নামের দুই ব্যাক্তির দুটি গরু মারা গেছে। কিন্তু মৃত্যুর কারণ তাদের কাছে স্পস্ট নয়। এছাড়াও অসুস্থ্য হয়ে আছে বেশ কয়েকটি গরু।

এবিষয়ে জানতে চাইলে কারখানার মালিক মো. সাদ্দাম হোসেন বলেন, ‘এটা অবৈধ না। আর এতে কোন ক্ষতিও হয় না। এ নিয়ে পত্রিকায় লেখার কিছু নাই। সরকারের কোন অনুমোদন আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর জন্য আবার কিসের অনুমোদন।’ ওই জমির মালিক মো. রফিক বলেন, ‘সিসা তৈরি করা হবে তা আমি জানতাম না। তারা বলছিলো ব্যাটারি রাখবে।’ এবিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন বলেন, ‘ওই অবৈধ কারখানা বন্ধে দ্রত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এমএসি/আরএইচ