বন্যা কবলিত এলাকায় ছড়াচ্ছে পানিবাহিত রোগ

বুধবার ২৯ জুন ২০২২ ২০:৪৭


:: তিমির বনিক, মৌলভীবাজার প্রতিনিধি ::
 
হাকালুকি হাওরপারের পশ্চিম গগড়া গ্রামের বাসিন্দা অপর্ণা রানী দাসের বাড়ির আঙিনা আর রান্নাঘরে বন্যার পানি উঠেছে। পানি মাড়িয়ে তিনি বাড়ির কাজকর্ম করেছেন। এখন তার পায়ের আঙুলের ফাঁকে ফাঁকে ঘা হতে শুরু করেছে। একই গ্রামের ভ্যানচালক অনন্ত দাসের ঘরে ও বাড়ির আশপাশে বন্যার পানি উঠেছে। বন্যার পানি মাড়িয়ে তিনি চলাচল করছেন। তার পায়ে গুটি বসন্তের মতো রোগ হয়েছে।এই দাগ কিভাবে হলো তার কারণ জানতে চাইলে অনন্ত বলেন, বন্যার পানিতে সব কিছু ডুবে গেছে। পানিতে পচা দুর্গন্ধ। এখন পানি মাড়িয়ে চলতে হয়। গায়ে পানি লাগলে চুলকায়। আর বসন্তের মতো দাগও পানি লাগায় হয়েছে। সরকারিভাবে কোনো ওষুধ পেয়েছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'কোনো ওষুধ এখনো পাইনি।'শুধু অর্পণা রানী বা অনন্ত দাস নন, তাদের মতো মৌলভীবাজারের বড়লেখার বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকার অনেক মানুষ এখন পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় এলাকার মানুষ কোনো চিকিৎসাসেবা না পাচ্ছে না বলে অভিযোগ করেছে। তবে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মেডিক্যাল টিম বন্যাদুর্গত এলাকায় কাজ করছে।
 
বন্যাকবলিত এলাকার মানুষকে চিকিৎসাসেবা দেওয়া হচ্ছে।এদিকে বৃষ্টিপাত না হলেও বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে।স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ভারি বর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা ঢলে হাকালুকি হাওরে আকস্মিকভাবে বন্যা দেখা দেয়। এতে বড়লেখা উপজেলার ২০০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ঘরে টিকতে না পেরে অনেকে আশ্রয়কেন্দ্রে ছুটে গেছে। এতে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে এসব এলাকার মানুষ। বন্যার পানিতে এসব এলাকায় নলকূপ তলিয়ে রয়েছে। এতে বিশুদ্ধ পানির সংকট তৈরি হয়েছে। অনেকে বিশুদ্ধ পানি না পেয়ে বাধ্য হয়ে বন্যার পানিতে গোসল করছে, পান করছে। ফলে তারা পানিবাহিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।
 
বন্যাকবলিত বিভিন্ন এলাকা ও কয়েকটি আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা মানুষজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বন্যার পর থেকে তাদের কারো জ্বর উঠেছে, কারো পায়ের আঙুলের ফাঁকে ঘা হয়েছে, কারো আবার পায়ে গুটি বসন্তের মতো রোগ হয়েছে।তালিমপুর ইউনিয়নের সাবেক ইউপি সদস্য গগড়া গ্রামের বাসিন্দা সুজিত দাস বলেন, বন্যায় তাদের এলাকা তলিয়ে গেছে। তাদের ঘরে পানি উঠেছে। তারা পানি মাড়িয়ে চলাচল করছেন। পানি পায়ে লেগে তার পায়ে বসন্তের মতো দাগ হয়েছে। তাতে  চুলকায়। তিনি বলেন, 'শুধু যে আমার এই রোগ হয়েছে তা নয়, এলাকার অনেকে আছে তাদের কারো পা ঘা হচ্ছে, কারো শরীরের বসন্তের মতো দাগ হচ্ছে। কেউ কেউ ডায়রিয়া রোগে ভুগছে।'
 
বড়লেখা উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী মঈন উদ্দিন বলেন, এখন পর্যন্ত প্রায় ১৫ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে। এ ছাড়া আশ্রয়কেন্দ্রেসহ ১৫টি নলকূপের প্ল্যাটফর্ম উঁচু করা হয়েছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরে ২০ হাজার পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট মজুদ রয়েছে। যেখানে দরকার সেখানেই বিতরণ করা হচ্ছে।বড়লেখা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. রত্নদীপ বিশ্বাস বলেন, 'বন্যাদুর্গত এলাকায় আমাদের মেডিক্যাল টিম কাজ করছে। পানিবাহিত রোগের ঔষুধের জন্য আমরা বরাদ্দ চেয়েছি। বরাদ্দ এলে আমরা মানুষের মাঝে ওষুধ বিতরণ করব।'

এমএসি/আরএইচ