ফরিদগঞ্জে অদক্ষ শিশু-কিশোররা সড়কে যানবাহন নিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে 

মঙ্গলবার ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২১:৪৯


:: ফাহাদ খান, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর) প্রতিনিধি ::
 
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জ উপজেলার গুরত্বপূর্ণ সড়ক, বাজারসহ বিভিন্ন অলিতে গলিতে প্রতিনিয়ত চোখে পড়ে শিশু-কিশোর ও অদক্ষ চালকদের হাতে নানান ধরনের যানবাহন, এসব অদক্ষ চালকের কারণে প্রতিনিয়ত দূর্ঘটনা ঘটছে। আর যে কোন সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশংকা রয়েছে। জীবিকার তাগিদে কিংবা সাংসারিক টানাপোড়নের ফলে এই পেশায় জড়িয়ে পড়ছে। ফলে শিক্ষা বঞ্চিতও হচ্ছে নতুন প্রজন্ম। এইসব শিশু-কিশোর বা অদক্ষ চালক কাউকে পেলে-ই আইনী ব্যবস্থা গ্রহনের আশ্বাস দিচ্ছেন স্থানীয় প্রশাসন।
 
উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ঘুরে দেখা যায়, বেশির ভাগ সড়কেই যানযট রয়েছে অটোরিক্সা নামের যানবাহনটির। আবার অধিকাংশটিতেই লাইসেন্স বিহীন শিশু-কিশোর কিংবা অদক্ষ চালক বললেই চলে। এতে বিভিন্ন বাজার এলাকায় নির্দিষ্ট গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা না থাকার ফলে যত্রতত্র স্থানে যানযটের সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে প্রতিনিয়ত-ই ঘটছে ছোট বড় অনেক দূঘর্টনা।
ফরিদগঞ্জ পৌরসভা, চাঁদপুর-রায়পুর আঞ্চলিক মহাসড়কসহ উপজেলার অভ্যন্তরে বিভিন্ন সড়কে একই চিত্র বিরাজমান।
 
যানবাহন গুলোর মধ্যে রয়েছে, অটোরিক্সা, সিএনজি চালিত স্কুটার, ব্যাটারিত চালিত রিক্সা, ব্যাটারিত চালিত মিশুক, কিংশুক, ইংজ্ঞিন চালিত নসিমন ও ভটভটি। এই সব গুলো যানবাহনেই শিশু-কিশোর বা অদক্ষ চালকদের দেখা যাচ্ছে তাদের দাপট। 
মাঝে মধ্যে পুলিশ অভিযান চালালেও পরক্ষনে একই কায়দায়ে এসে পড়ে এসব চালকরা। সেই সাথে ফরিদগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন অলিতে গলিতে এই সব আনাড়ি চালকদের কারণে যত্রতত্র স্থানে যানযটের পরিনত করে তুলছে।
 
অদক্ষ ও আনাড়ি শিশু-কিশোর চালকদের কারনে কোনো কোনো সময় যাত্রীরা ছোট বড় দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছে। গ্রামীন যাতায়াত সড়ক ছাড়া ও মহাসড়কে অল্প বয়সি অদক্ষ চালকরাই চালাচ্ছে অটোরিক্সা ও সিএনজি। যাতে করে দুরপাল্লার যাত্রীবাহী গাড়ি সাথে ধাক্কা লেগে অটোরিক্সাসহ যাত্রী আহত হওয়ার ঘটনা কিন্তু অসংখ্য এবং কিশোর অদক্ষর ধারা ড্রাইভারে কারণে এসব অটোরিক্সা ও গাড়িও অহরহ দুর্ঘটনা হচ্ছে।
 
তবে লক্ষ্য করা যায়, তৃতীয় কিংবা চতুর্থ শ্রেনীর লেখাপড়া শেষ হতে না হতেই পরিবারে আর্থিক অবস্থার কথা বিবেচনা করে পরিবারে কর্তারা তাদের ছেলেদের পড়ালেখা না করিয়ে এসব কাজে উৎসাহিত করতেছে, এ সব শিশু-কিশোররা জীবনের আশংকায় নিয়ে গাড়ি চালাচ্ছে।
 
ফরিদগঞ্জ বাজার ব্যবসায়ী অহিদুর রহমান পাটওয়ারী বলেন, দেখার কেউ না থাকায় ১২ বছরের ছেলেরাও এই শহরে দিব্যি অটোরিক্সা চালাচ্ছে।
 
এদিকে পড়ালেখা থেকে তারা বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে অল্প বয়সি ইব্রাহিম, রাসেল, আবুল হোসেন সহ বেশ কয়েকজন অটো চালকের সাথে আলাপ করলে তারা জানান, পরিবারে মা, বাবা ভাই, বোনদের ভরন পোষনের লক্ষে এই যাবাহন চালানোর কাজে নিয়োজিত হয়েছি। লেখাপড়া কতদুর জানতে চাইলে তারা হেসে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।
 
সচেতন মহলের দাবি, এসব ঝুঁকিপুর্ণ কাজে অল্প বয়সি ছেলেদেরকে পরিবারে কর্তারা যদি এই ভাবে নিজেদের ছেলেদেরকে রাস্থায় নামিয়ে দেয়, তাদের ভবিষ্যতে অন্ধাকার বলে মন্তব্য করেন। পাশাপাশি এসব কোমল মতি অল্প বয়সি ছেলেদের যদি যানবাহন চালানোর কাজ থেকে ফিরিয়ে এনে সেমিনার ও পড়ালেখা দিকে মনোযোগী বা অন্যকোন টেকনিক্যাল কাজ শিখানো হয় তাহলে তাদের উজ্জল সুন্দর ভবিষ্যত।
 
পুলিশের দাবি, আমরা লাইসেন্স বিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান অব্যাহত রেখেছি এরকম কোন শিশু বা অদক্ষ ড্রাইভার কাউকে পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
 
নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা) ফরিদগঞ্জ উপজেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক নারায়ন রবিদাস বলেন, এই সব শিশু-কিশোরদের থাকার কথা ছিলো পাঠশালা বা খেলার মাঠে, কিন্তু তারা হয়তো জীবিকার টানে এই ক্ষুদ্র বয়সে কোনো রকমের দক্ষতা কিংবা লাইসেন্স ছাড়াই সড়কে দাপিয়ে বেরাচ্ছে, এর জন্য দায়ী কিছু মুনাফালোভী যানবাহনের মালিকরা। সড়ক বিভাগ ও স্থানীয় প্রশাসন এই বিষয়ে দ্রুত  প্রয়োজনীয় প্রদক্ষেপ নিবে বলে আশা করি।
 
ফরিদগঞ্জ পৌর সচিব এ.কে.এম খোরশেদ আলম বলেন, জেলা শহরেও বিভিন্ন বয়সীদেরকে লাইসেন্স দেয়া হয়। আমাদের এটা ছোট একটি উপজেলা, তবে আমরা শিশু-কিশোরদের বিষয়টি মাথায় রেখে লাইসেন্স দিবো।
 
বিষয়টি নিয়ে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শহীদ হোসেন বলেন, যে কোনো সড়ক দুর্ঘটনায় পুলিশকেই সবার আগে দৌড়াতে হয়। দূর্ঘটনা বন্ধ করতে ব্যাটারী চালিত অটোরিক্সার ব্যাপারে যারা লাইসেন্স দেন, শিশু-কিশোরদের বিষয়টি বিবেচনা করে লাইসেন্স দেয়া প্রয়োজন।
 

এমএসি/আরএইচ