নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু'র ১২৭ তম জন্ম জয়ন্তী

সোমবার ২৩ জানুয়ারী ২০২৩ ১০:২৩


পর্যবেক্ষণ ডেস্ক:
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের এক চিরস্মরণীয় কিংবদন্তি নেতা। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে তিনি হলেন এক উজ্জ্বল ও মহান চরিত্র যিনি এই সংগ্রামে নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন। তিনি নেতাজি নামে সমধিক পরিচিত। ২০২১ সালে ভারত সরকারের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তার জন্মবার্ষিকীকে জাতীয় পরাক্রম দিবস বলে ঘোষণা করেন। সুভাষচন্দ্র পরপর দুইবার ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন। কিন্তু গান্ধীর সঙ্গে আদর্শগত সংঘাত,কংগ্রেসের বৈদেশিক ও অভ্যন্তরীণ নীতির প্রকাশ্য সমালোচনা এবং বিরুদ্ধ-মত প্রকাশ করার জন্য তাকে পদত্যাগ করতে হয়।
সুভাষচন্দ্র বসু দক্ষিণ চব্বিশ পরগণা জেলার বিখ্যাত “মাহীনগরের বসু পরিবার"-এ জন্মগ্রহণ করেন। তার মাতা প্রভাবতী বসু (দত্ত) ছিলেন উত্তর কলকাতার হাটখোলা দত্ত বাড়ির কন্যা এবং পিতা জানকীনাথ বসু। সুভাষ ১৮৯৭ খ্রিষ্টাব্দের ২৩ জানুয়ারি ব্রিটিশ ভারতের অন্তর্গত বাংলা প্রদেশের উড়িষ্যা বিভাগের (অধুনা,ভারতের ওড়িশা রাজ্য) কটকে জন্মগ্রহণ করেন। সুভাষচন্দ্র বসু ছিলেন তার পিতা-মাতার চৌদ্দ সন্তানের নবম সন্তান তথা ষষ্ঠ পুত্র। তার বাবা জানকীনাথ বসু ছিলেন একজন সফল ও সরকারি আইনজীবী। তিনি ব্রিটিশ ভারতের সরকারের প্রতি অনুগত ছিলেন এবং ভাষা ও আইন সম্পর্কিত বিষয়ে অত্যন্ত সচেতন ছিলেন।
সুভাষচন্দ্র ছিলেন একজন ধর্মপ্রাণ হিন্দু। কিন্তু আজাদ হিন্দ ফৌজ পরিচালনা ও স্বাধীনতা সংগ্রামের ক্ষেত্রে তিনি ধর্ম নিরপেক্ষ ভাবধারায় সকল ধর্মাবলম্বীদের ঐক্যবদ্ধ করে তুলতে সক্ষম হয়েছিলেন। তিনি ধ্যানে অনেক সময় অতিবাহিত করতেন। স্বামী বিবেকানন্দের ভাবাদর্শ তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিল।ছাত্রাবস্থা থেকে তিনি তাঁর দেশপ্রেমিক সত্তার জন্য পরিচিত ছিলেন।
১৯২১ সালের ১৬ জুলাই,২৪ বছর বয়সী সুভাষচন্দ্র বসু,ইংল্যান্ড থেকে ফিরে ভারতের বোম্বেতে পাড়ি দেন এবং অবিলম্বে গান্ধীর সঙ্গে সাক্ষাতের আয়োজন করেন। সেসময়, ৫১ বছর বয়স্ক গান্ধী, অসহযোগ আন্দোলনের নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, যা পূর্ববর্তী বছরে ভারতের সমাজে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিল এবং পরবর্তী কয়েক দশকের মধ্যে ভারতকে স্বাধীনতার পথে নিয়ে গিয়েছিল। গান্ধী বোম্বেতে অবস্থান করছিলেন এবং সেদিন বিকেলেই বসুর সাথে দেখা করতে সম্মত হন। অনেক বছর পরে এক লেখায় এই সাক্ষাতের বিবরণে তিনি লেখেন, তিনি গান্ধীকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেছিলেন। তাঁর মতে গান্ধীর লক্ষ্য অস্পষ্ট ও তা অর্জনের জন্য তার পরিকল্পনা সুচিন্তিত ছিল না। গান্ধী এবং বসু প্রথম সাক্ষাতেই আন্দোলনের উপায় সম্পর্কে ভিন্নমত পোষণ করেন তখন।
১৯২৩ সালে সুভাষচন্দ্র সর্বভারতীয় যুব কংগ্রেসের সভাপতি এবং একইসাথে বঙ্গীয় প্রাদেশিক কংগ্রেসে র সম্পাদক নির্বাচিত হন। তিনি চিত্তরঞ্জন দাস কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত ফরওয়ার্ড পত্রিকার সম্পাদক হিসেবেও কর্মরত ছিলেন। ১৯২৪ সালে চিত্তরঞ্জন দাস কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর বসু কলকাতা পৌরসংস্থার প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করেন। ১৯২৫ সালে সুভাষচন্দ্র বসুকে গ্রেফতার করে মান্দালয়ের কারাগারে পাঠানো হয়,যেখানে তিনি যক্ষ্মা রোগে আক্রান্ত হন।
১৯২৭ সালে কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর সুভাষ ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন এবং জওহরলাল নেহেরুর সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতার লক্ষ্যে কাজ শুরু করেন। ১৯২৮ সালের ডিসেম্বরের শেষের দিকে বসু কলকাতায় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের বার্ষিক সভার আয়োজন করেন। তার সবচেয়ে স্মরণীয় ভূমিকা ছিল কংগ্রেস স্বেচ্ছাসেবক বাহিনীর জেনারেল অফিসার কমান্ডিং (জিওসি) হিসেবে। এর কিছুদিন পরে,সুভাষচন্দ্র বসুকে পুনরায় গ্রেফতার করা হয় এবং আইনঅমান্য আন্দোলনের জন্য জেলে পাঠানো হয়। এরপর ১৯৩০ সালে তিনি কলকাতার মেয়র নির্বাচিত হন।
সুভাষচন্দ্র বসু ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সাল পর্যন্ত বার্লিনে বসবাস করেন। ১৯৩৪ সালে জার্মানিতে তার প্রথম সফরের সময়,তার সাথে একজন অস্ট্রীয় পশু চিকিৎসকের কন্যা,এমিলি শেঙ্কল এর পরিচয় হয়। তিনি এমিলিকে ১৯৩৭ সালে বিয়ে করেন। তাদের কন্যার নাম অনিতা বসু পাফ।
ঐতিহাসিকদের মতে,১৯৪৫ সালের ১৮ আগস্ট, সুভাষচন্দ্র বসুকে বহনকারী জাপানি বিমানজাপান শাসিত ফোরমোসায় (বর্তমান তাইওয়ান) বিধ্বস্ত হওয়ার পর,আগুনে দগ্ধ হয়ে বসুর মৃত্যু ঘটে।তবে, তার অনেক অনুগামীই,বিশেষত বাংলায়, সে সময় ঘটনাটি অস্বীকার করে এবং এমনকি এখনো তার মৃত্যু সম্পর্কিত পরিস্থিতি ও তথ্য অবিশ্বাস করে। তার মৃত্যুর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই বহু ষড়যন্ত্র তত্ত্ব আবির্ভূত হয় এবং দীর্ঘকাল এগুলো তার মৃত্যু সম্পর্কে বিভিন্ন কল্পকাহিনী জীবিত রেখেছে।

এমএসি/আরএইচ