নাব্যতা সংকটে লঞ্চ চলাচল বন্ধ, অচল মিরকাদিম লঞ্চঘাট

বৃহস্পতিবার ৩ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:০৪


আহসানুল ইসলাম আমিন , মুন্সীগঞ্জ:

বর্ষার পানি কমে যাওয়ার পর থেকে মুন্সীগঞ্জের মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকায় নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হয়। এতে প্রায় ৪ মাস ধরে মিরকাদিম লঞ্চ ঘাটে দোতলা কিংবা বড় ধরনের কোন লঞ্চ ঘাটে ভিড়ছেনা বলে জানিয়েছেন ঘাট ইজারাদার সংশ্লিষ্টরা। এতে করে হাজার হাজার মানুষ ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বর্তমানে জোয়ার ভাটার আগমনের উপর নির্ভর করে ছোট দু”টি লঞ্চ চলাচল করলেও দিনের বেশিরভাগ সময় ঘাট এলাকা যাত্রী শুন্য অবস্থায় পড়ে থাকে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ঘাটে লঞ্চ এসে না ভিড়ার কারনে এখন আর সাধারণ যাত্রীরা এই ঘাট দিয়ে যাতায়াত করছেনা। মাঝে মধ্যে দু”একজন যাত্রী আসলেও তারা লঞ্চ না ভিড়ার কারনে ঘাট থেকে ফিরে যাচ্ছেন। প্রায় ৪ মাস আগে থেকে ধলেশ্বরী নদীর মোহনায় পলি জমে নাব্যতা সংকট তৈরী হয়েছে। দিনের পর দিন এই নাব্যতা সংকট আরো তীব্র আঁকার ধারন করে। ভরা বর্ষার সময় মিরকাদিম লঞ্চঘাট থেকে ঢাকাগামী ছোট বড় সব ধরনের লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়তো। বর্ষার পরবর্তী সময়ে শীতের আগে থেকেই নদীতে নাব্যতা সংকট সৃষ্টি হয়। নদীতে পানির পরিমান কমে যাওয়ার সাথে সাথে এই নৌরুটে চলাচলকারী যাত্রবাহী লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়তে ব্যর্থ হন। নদীর মোহনা থেকে ঘাটের দু”পাশে বালুর চর জেগেছে। মিরকাদিম লঞ্চ ঘাটে আসার চ্যানেলে পানি কোথাও ১০ ফুট কোথাও ৫ ফুট গভীর। জোয়ারের সময় দু”টি ছোট লঞ্চ এখন ঘাটে ভিড়লেও যাত্রীদের নেই কোন আনাগোনা। সারাদিনে ২টি ছোট লঞ্চ সকাল ৯টা সন্ধ্যায় ঘাটে এসে ভিড়ে। কিন্তু দূর দূরান্তে যাতায়াতের কোন লঞ্চ ঘাটে ভিড়তে পারছেনা। দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদেরকে মাঝ নদী থেকে ট্রলার দিয়ে ঘাটে এনে নামাতে হচ্ছে বলেও জানিয়েছেন ঘাট এলাকার স্থানীয়রা।

সরেজমিনে গতকাল বুধবার সকাল ১১টার দিকে মিরকাদিম লঞ্চঘাট এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, লঞ্চঘাটে শুনসান নীরবতা। ঘাট থেকে কোন লঞ্চ ছেড়ে যাচ্ছে, এমনকি কোন লঞ্চ ঘাটেও ভিড়ছেনা। একসময়ে যে ঘাটে ভোর সকাল থেকে রাত পর্যন্ত মানুষের কোলাহল ছিলো সেই ঘাটে এখন কোন লোকজন নেই। টার্মিনালের পশ্চিম পাশে ছোট্র একটি লঞ্চ নোঙ্গর করা আছে। ঘাটে বাঁধা রয়েছে যাত্রী পারাপারে ব্যবহৃত বেশ কয়েকটি ট্রলার। পল্টুনে নেই মানুষের হাঁকডাক, লঞ্চে মালামালা উঠা নামানো এবং যাত্রী ওঠানামার সেই দৃশ্যটি চোখে পড়েনি। বেশ কয়েকবার ঘাট এলাকায় ড্রেজিং করেও সমাধান মিলেনি। বর্তমান জায়গা থেকে একটু পূর্বে টার্মিনালটি স্থাপন করলে ঘাটে সচলবস্থা ফিরিয়ে আনা সম্ভব বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঘাট এলাকায় কুলি, মজুর এবং হকারদেরও কোন আনাগোনা নেই। ঘাট এলাকায় থাকা খাবার হোটেলসহ অন্যান্য দোকানের ব্যবসায়ীরাও ক্রেতা শূন্যতায় তাদের ব্যবসায় মন্দাভাব চলছে। ছোট একটি নোঙ্গর করা লঞ্চের কেরানী সুকানিরা লঞ্চের ভিতরে বসেই গল্প আড্ডা ব্যস্ত। টিকেট কাউন্টারটিও বন্ধ রয়েছে। তবে কবে নাগাদ এই নাব্যতা সংকট দূর করা যাবে সেটা জানাতে পারেনি ঘাট ইজারাদাররা।

আনোয়ার হোসেন বেপারি নামে স্থানীয় এক এলাকাবাসী বলেন, প্রতি বছরই লঞ্চঘাট এলাকায় নাব্যতা সংকট দেখা দেয়। গেলো বছর ড্রেজিং করার পর বেশ কয়েক মাস লঞ্চ চলাচাল যাতায়াত স্বভাবিক ছিলো। বর্ষার সময়েও কোন সমস্যা হয়নি। কিন্তু বর্ষার পরবর্তী সময় থেকে ঘাটে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বার বার খনন না করে ঘাটটি এখান থেকে পূর্বদিকে কাঠপট্রি এলাকায় স্থানান্তর করলে ভালো হতো। তিনি আরো বলেন, প্রায় ৪ মাস ধরে দক্ষিনবঙ্গের বড় বড় লঞ্চগুলো ঘাটে ভিড়তে পারছেনা। মাঝ নদী থেকে ট্রলার দিয়ে যাত্রীদেরকে নামিয়ে আনা হচ্ছে ট্রলার দিয়ে। এতে করে রাত বিরাতে যেকোন সময় দূর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে নদীটি খননের কোন উদ্যোগ গ্রহণ না করায় ঘাটে অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। ঘাট সুপারভাইজার আব্দুল কাদির জানান, প্রায় ৪ মাস ধরে নাব্যতা সংকটের কারনে দোতলা কোন লঞ্চ ঘাটে ভিড়েনা। সারাদিনে ২ টা ছোট লঞ্চ এখন চলাচল করে জোয়ার ভাটার পানির উপর নির্ভর করে। দীর্ঘদিন ধরে এই অচল অবস্থা চলতে থাকায় ঘাটে আর এখন যাত্রীরা আসছেনা। বড় লঞ্চে করে দূর দূরান্ত থেকে আসা যাত্রীদেরকে ট্রলার দিয়ে ঘাটে নামাতে হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, গেলো বছর এই সময় নাব্যতা সংকট দেখা দিলে প্রায় ৮ মাস ভোগান্তিতে ছিলাম। বর্তমানেও সেই পরিস্থিতি দেখা যাচ্ছে। দ্রুত ঘাট এলাকা থেকে নদীর মোহনা পর্যন্ত নদীতে ড্রেজিং করে নাব্যতা দূর করতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্শন করছি। বিআইডাব্লিউ টি.এ মিরকাদিম বন্দর অফিস সুত্রে জানাযায়, ঘাট এলাকায় নাব্যতা সংকটের বিষয়ে বিআইডাব্লিউটিএর উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। তারা সরেজমি

এমএসি/আরএইচ