নাব্যতা সংকটে ব্রহ্মপুত্র, তিস্তা ও যমুনা নদী

বৃহস্পতিবার ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১১:২১


:: রাজু সরকার, গাইবান্ধা ::
 
প্রতি বছর শুকিয়ে যাচ্ছে গাইবান্ধা জেলার নদী, খাল ও বিলগুলো। এ এলাকার জলাশয় গুলো নাব্যতা সংকটে ভোগার ফলে সেচ কার্য ব্যাহত হবার পাশাপাশি দেশী মৎস সম্পদ ও বিলুপ্তির পথে। পরিবেশ,কৃষি, ব্যবসা বানিজ্যসহ অর্থনীতির উপর ও এর প্রভাব পরছে। দীর্ঘ দিন যাবত খনন কাজ না করায় ফুলছড়ি এলাকার খাল,বিল,নদী হারাচ্ছে। কালের বিবর্তনে এক সময়ের তিস্তামুখ ঘাটের ব্রহ্মপুত্র নদী  এখন মরা নদীতে পরিণত হয়েছে।
 
চলতি মৌসুমে ইতিমধ্যেই  সব গুলো নদ নদীর সংযোগ খাল শুকিয়ে গেছে। পৌষের শুরুতেই অধিকাংশ নদী শুকিয়ে যাওয়ায় বন্ধ হয়ে গেছে সে সকল নৌরুটের নৌ যোগাযোগ ব্যবস্থা। নদী খাল বিলে পানি না থাকায় এ এলাকার হাট বাজারে দেশী মাছের সংকট দেখা দিয়েছে। জল পথে পণ্য পরিবহনে খরচ কম হলেও বর্তমান সময়ে এ এলাকার প্রায় সব জলপথ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিক খরচে ব্যবসায়ীদের স্থল পথে পণ্য পরিবহন করতে হচ্ছে। 
 
গাইবান্ধা জেলার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া নদী গুলোর স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অধ্যক্ষ মোস্তাফিজুর রহমান জানান।গাইবান্ধা জেলায় নদ-নদীর প্রকৃত সংখ্যা সরকারিভাবে এখন পর্যন্ত জানা যায়নি। দেশের অপরাপর জেলার মতোই গাইবান্ধা জেলার অবস্থা।এ জেলায় নদ-নদীর সংখ্যা প্রায় ২১ সেগুলো-আলাই,ইছামতি,করতোয়া কাটাখালি,কালপানি,গান নাই, ঘাঘট, তিস্তা, বাঙালি, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, মৎস্য, মরা মরুয়াদহ, মাইলা, মানাস, মাশানকুড়া, লেঙগা, শাখা তিস্তা, তিস্তা হলহলি, তুলসী।  গাইবান্ধার নদীগুলোকে আলাদাভাবে পরিচিত করার কোনো উদ্যোগ কখনোই গ্রহণ করা হয়নি।
 
গাইবান্ধার ওপর দিয়ে বাংলাদেশের অনেক নদীর পানি প্রবাহিত হয়। দেশের সবচেয়ে বেশি পানি বহন করে ব্রহ্মপুত্র। কুড়িগ্রাম দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করার পর গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে তিস্তা নদীর সঙ্গে মিলিত হয়। তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্র এ দুটি নদীর পানি একসঙ্গে মিলিত হয়ে যমুনা দিয়ে ভাটিতে প্রবাহিত হয়ছে। গাইবান্ধা জেলা যেহেতু সীমান্তবর্তী জেলা নয় তাই এখানে আন্তঃসীমান্তীয় নদ-নদীর সংখ্যা খুবই কম। তিস্তা এবং ব্রহ্মপুত্র এ দুটি শুধু আন্তঃসীমান্ত নদী। তিস্তার তিনটি শাখা নদী এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। 
 
ঘাঘট নদ গাইবান্ধা জেলা শহরের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। শহরের অংশে পুরনো প্রবাহ বন্ধ করে দিয়ে কৃত্রিমভাবে আরেকটি প্রবাহ তৈরি করা হয়েছে। যেটি শহরের পূর্বপ্রান্তে আবারও পুরনো ঘাঘটের সঙ্গেই মিলিত হয়েছে। পুরনো ঘাঘট তীরে এখন দখলের মহোৎসব চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের চোখের সামনেই চলছে এই দখল। শহরের অদূরেই এ ঘাঘট থেকে একটি শাখা প্রবাহিত হয়েছে। এই শাখা নদীটির নাম আলাই।
 
করতোয়া নামের একটি নদী গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। নদীটি পীরগঞ্জ উপজেলা হয়ে এ জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সন্নিকট দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। ঢাকা-রংপুর মহসড়ক এ নদীর ওপর দিয়ে চলে গেছে। গাইবান্ধা জেলার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার নিকটেই খুলসী নামক একটি স্থান আছে। এই খুলসীর কাছে নদীটি তিনিটি নামে পরিচিত। কাটাখালী, বাঙ্গালী এবং করতোয়া। একটি খাল কেটে এ নদীর কোনো এক অংশে সংযোগ স্থাপন করা হয়েছিল বলে এ নদীটিকে কাটাখালী নামে ডাকা হয়।
 
এলাকায় গিয়ে যমুনার সাথে মিশেছে। উনবিংশ শতাব্দীর দ্বীতীয়ার্ধের মাঝামাঝিতে ও নদীটি থাকলেও একেবারে শেষের দিকে রাজশাহী থেকে নূরনগর পর্যন্ত নদীটির অনেক স্থানে ক্রস বাধ দেয়ায় এ নদীটি এখন মৃতাবস্থায় পরে আছে। 
 
এ নদী উদ্ধারে বালাসী রক্ষা কমিটি দীর্ঘদিন যাবত আন্দোলন সংগ্রাম করে আসার ফলশ্রুতিতে মৃতপ্রায় নদীগুলোতে ড্রেজিং করা হচ্ছে। সম্প্রতি বিআইডব্লিটিএ সূত্রে জানা গেছে ড্রেজিং(খনন) কমপ্লিট হলে। ছোট পরিসরে বালাসি ওঠে বাহাদুরাবাদ ঘাট পর্যন্ত লঞ্চ চলাচল শুরু করতে পারবে।
 

এমএসি/আরএইচ