দোয়ারাবাজারে দারিদ্র বিমোচনে কাজ করছে" গ্রাম্য মহিলা সমিতি

শনিবার ১২ মার্চ ২০২২ ২০:৩০


:: সোহেল মিয়া, দোয়ারাবাজার (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি ::

মহামারীর কারণে অন্যান্য দেশের মতো আমাদের দেশেও দারিদ্র্যবিমোচনের গতি কমেছে। গত ১ বছরে কর্মসংস্থানও তুলনামূলক কম হয়েছে। এছাড়া এ সময়ে বিদেশে কর্মী প্রেরণ বাধাগ্রস্ত হওয়াসহ গ্রামীণ এলাকার মানুষ কতভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তা বহুল আলোচিত।

এ প্রেক্ষাপটে গ্রামীণ অর্থনীতিকে গতিশীল করে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি করতে কাজ করে যাচ্ছে

ভিলেজ সেভিং এসোসিয়েশন জুঁই মহিলা সমিতি। সৌহার্দ ৩ কর্মসূচী" ঢাকা আহসানিয়া মিশনের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত এই সমিতির সদস্য হয়ে সাবলম্বী হওয়ার স্বপ্ন দেখছেন দোয়ারাবাজারের নরসিংপুর ইউনিয়নের শতাধিক হতদরিদ্র পরিবার। স্বপ্ন দেখছেন নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করে সাবলম্বী হওয়ার।

জানাযায়, দারিদ্রবিমোচনে ভবিষ্যৎ কর্মসংস্থান তৈরি করে গ্রামের মহিলাদের সাবলম্বী করতে এই সমিতি গঠন ও পরিচালনা করে আসছে ঢাকা আহসানিয়া মিশন (এনজিও) সংস্থা। এতে প্রতিটি সমিতিতে সদস্য সংখ্যা হতে পারেন সর্বোচ্চ পঁচিশ ও সর্বনিম্ন পনেরো।

এই সমিতির সদস্য হয়ে ভাগ্যবদলের দিন গুনছে উপজেলার নরসিংপুর ইউনিয়নের পূর্বচাইরগাঁও গ্রামের ১৫ মহিলা। ভিলেজ সেভিং এসোসিয়েশন জুঁই নামে একবছর মেয়াদী এই গ্রাম্য মহিলা সমিতির প্রতি সদস্যের মাসিক চাদা সর্বোচ্চ ২'শত ৫০ টাকা,সর্বনিম্ন ৫০ টাকা।

শুক্রবার (১১ মার্চ) তাদের শেষদিন। একবছর পর সমিতির মোট জমাকৃত টাকা দাড়িয়েছে ৪৭'হাজার ৯'শত টাকা।

এতে টাকা ভাগ করে নিয়ে কেউ হাঁস, মুরগি পালন, কেউ ছাগল এবং কেউ আবার ছোট খাটো ব্যবসা করার পরিকল্পনায় আছেন।

জানতে চাইলে, সর্বোচ্চ টাকা জমাদানকারি হাজেরা নামের এক সদস্য বলেন, সাত সদস্যবিশিষ্ট হতদরিদ্র পরিবার হাজেরা বেগমের। এতে ৫ হাজার টাকা কখন ও নিজের হাতে রাখতে পারবে এরকম চিন্তাধারা তার ছিলোনা। তিনি এ সমিতির সদস্য হয়েছেন ৫/১০ হাজার টাকার একটা ক্যাশ তৈরি করতে। সৌহার্দ ৩ কর্মসূচির" ঢাকা আহসানিয়া মিশনের পরিচালায় মহিলাদের নিয়ে গঠিত এ সমিতির সদস্য হওয়ায় তার সেই লক্ষ আজ পূরন। হাজেরা বেগমের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিলো বছর শেষে সমিতির জমাকৃত টাকা দিয়ে পাথর কিনে ব্যবসা করবেন। আজ তার জমাকৃত ৫৯১৬ টাকা হাতে পেয়েছে। এতে করে তিনি পাথরের ব্যবসা করে নিজের পরিবারকে সাবলম্বী করার স্বপ্ন দেখছেন,পুনরায় ১ বছর মেয়াদি এই সমিতি গঠন করতে আগ্রহী হাজেরা বেগম। এসময় তিনি বলেন, ঢাকা আহসানিয়া মিশনের কর্মকতারা গ্রামের পিছিয়ে পরা মহিলাদের কর্মসংস্থান তৈরি করতে যেভাবে নিজেদের স্বার্থহীন ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। এতে গ্রামের মহিলাদের ভাগ্যবদলে আসবে। তিনি সৌহার্দ ৩ কর্মসূচির কৃতঙ্গতা প্রকাশ করেন।

সর্বনিম্ন টাকা জমাদানকারি মহিলা রাহিমা বেগম বলেন, ছয় সদস্যের হতদরিদ্র পরিবার তার, রাহিমার স্বপ্ন ছিলো সমিতির সদস্য হয়ে নিজে কিছু টাকা ক্যাশ করে একটি ব্যবসা করবেন। ইচ্ছে থাকলে ও সামর্থ্য না থাকায় নিয়মিত টাকা জমা করতে পারেননি রাহিমা। বছর শেষে সমিতিতে তার জমাকৃত টাকার পরিমান দাড়িয়েছে ৮শত ৫০ টাকা,তবুও তিনি খুশি। তিনি এটাকা দিয়ে মুরগি পালন করবেন। রাহিমা বেগম সাবলম্বী হওয়ার লক্ষে পুনরায় এরকম একটি সমিতির সদস্য হতে আগ্রহী।

এবিষয়ে ঢাকা আহসানিয়া মিশনের সৌহার্দ ৩ কর্মসূচির নরসিংপুর ইউনিয়ন মাঠ প্রশিক্ষক জহিরুল ইসলাম মজুমদার ও আইরিন সুলতানা জানান, গ্রামের মহিলাদের সাবলম্বী করার লক্ষে সৌহার্দ ৩ কর্মসূচি, ঢাকা আহসানিয়া মিশন দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে যাচ্ছে। এতে নরসিংপুর ইউনিয়নে গ্রাম ভিত্তিক ২২ টি সমিতি পরিচালনা করেছেন এনজিও এই সংস্থাটি। প্রত্যোকটি সমিতিতে তাদের নিজস্ব প্রতিনিধি রয়েছে। মহিলাদের এ সমিতি সঠিকভাবে পরিচালনায় নিয়মিত পর্যবেক্ষন করেন তারা। এতে প্রতিমাসে একটি করে সভা রয়েছে এবং এর পাশাপাশি সদস্যের কল্যানে কাজ করার জন্য আরো একটি সমিতি রয়েছে যার নাম মহিলা কল্যান সমিতি, মহিলা কল্যাণ সমিতিতে প্রতি সদস্য মাসে ১০ টাকা করে জমা করেন। জমাকৃত টাকা দিয়ে সদস্যদের মধ্যে যারা দরিদ্র, অসুস্থসহ বিভিন্ন মানবিক কাজে সহযোগিতা পান।

এছাড়াও সরকারি -বেসরকারি বিভিন্ন সহযোগীতার আওতায় এ সমিতির সদস্যদের আনতে কাজ করেন সংস্থাটি।

তিনি আরোও বলেন, দেশের হতদরিদ্র মানুষের অবস্থার পরিবর্তন করা সম্ভব না হলে তা দেশের সার্বিক উন্নয়নে নানা ধরনের বাধা সৃষ্টি করতে পারে। এটা পরীক্ষিত যে, প্রতিটি গ্রামে মহিলা সমিতির কার্যক্রম বেগবান করা হলে দারিদ্র্যবিমোচনে তা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

 

এমএসি/আরএইচ