দেড়শ বছরের প্রাচীন চন্দনপুরা তাজ মসজিদ

সোমবার ১১ এপ্রিল ২০২২ ১২:০৮


ইব্রাহিম আল সোহাগ, চট্টগ্রাম ::
চট্টগ্রামে ঐতিহ্যের বাহক স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত অতি প্রাচীন চন্দনপুরা মসজিদ। মসজিদের চারদিকে যেন রঙের মেলা। হরেক রকম রঙ ব্যবহার করা হয়েছে স্থাপনার প্রতিটি অংশে। লতা-পাতার নকশা আর নানান কারুকাজে সৌন্দর্য ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুনিপুণ হাতে। অনেক দূর থেকে দেখা যায় মসজিদটির বাহ্যিক সৌন্দর্য।

সিরাজ-উদ-দৌলা সড়কের পশ্চিম পাশে মোগল স্থাপনা শিল্পের আদলে ১৮৭০ সালে মাটি ও চুন সুরকির দেয়াল আর টিনের ছাদের মসজিদ প্রতিষ্ঠা করেন আব্দুল হামিদ মাস্টার। তখনও মাটির দেয়ালে কারুকাজে ভরপুর ছিল। তার বংশধর ব্রিটিশ সরকারের ঠিকাদার আবু সৈয়দ দোভাষ ১৯৪৬ সালে এই মসজিদের সংস্কার কাজে হাত দেন।

মসজিদের কারিগর ও নির্মাণ সামগ্রী ভারত থেকে আনা হয়। এতে সেই সময়ে প্রায় পাঁচ লাখ টাকারও অধিক খরচ হয়। চারপাশের দেয়ালগুলো ভেন্টিলেশন সিস্টেমের। দেয়ালের ফাঁক গলে ঢুকছে আলো। আলোর ঝরণাধারায় ভেতরটা করছে ঝলমল, আছে বাতাসের কোমল পরশ।

আবু সৈয়দ দোভাষ একই নকশায় নগরীর কোতোয়ালীর মোড় এলাকায় শ্বশুর বাড়িতেও ১টি মসজিদ তৈরি করেছিলেন। তবে সেটি এই মসজিদ থেকে আকারে ছোট ছিল। অনেকের কাছে এ মসজিদ চন্দনপুরা বড় মসজিদ বা তাজ মসজিদ নামেও পরিচিত।

এখন মসজিদটির বয়স ১৫০ বছর। চট্টগ্রামের পর্যটন শিল্পের পরিচয় তুলে ধরতে মসজিদটির ছবি ব্যবহার করা হয় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন প্রকাশনায়। প্রকাশনাগুলোতে এ মসজিদের ছবি থাকায় বিদেশ থেকে পর্যটকরাও আসেন এখানে। আবু সৈয়দ দোভাষ সেই সময়ে কলকাতা থেকে কারিগর ও দিল্লীসহ বিভিন্ন স্থান থেকে উপকরণ এনে প্রায় ১৩ শতক জায়গার ওপর দোতলা মসজিদটি গড়ে তুলেন। 

মসজিদে রয়েছে ছোট-বড় ১৫টি গম্বুজ। প্রতিটি গম্বুজে যাওয়ার জন্য আছে সিঁড়ি। গম্বুজ ও সিঁড়িতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে মোগল স্থাপত্য নিদর্শনের প্রতিচ্ছবি। গম্বুজের চারপাশে রয়েছে জান্নাতের সুসংবাদ পাওয়া ১০ সাহাবীর নাম। যখন মাইকের ব্যবহার ছিল না, তখন ৪তলা সমান উঁচু মিনারে উঠে আজান দেয়া হতো। এরকম ২টি মিনার এখনও আছে।

মসজিদ কমিটির সদস্য মো. জহুরুল হক বলেন, তার দাদা আবু সৈয়দ দোভাষ ১৯৫০ সালে এ মসজিদ পুনর্নির্মাণ কাজ শেষ করেন। এখন প্রতি ৫ বছর পর একবার রঙ করা হয়। একবার রঙ করার কাজ শেষ করতে প্রায় ৩ থেকে ৪ মাস সময় লাগে।

এ মসজিদে বড় গম্বুজটি ছিল প্রায় ১৩ মণ রুপা ও পিতলের তৈরি। এ সু² কাজের কারিগরের অভাবে সংস্কার কাজও সঠিকভাবে করা যায় না বলেও তিনি জানান। বৈরি আবহাওয়ায় এসব জিনিস যেমন নষ্ট হয়েছে তেমনি সংস্কারের সময়ও অনেক কিছু হারিয়ে গেছে। এখন আমরা বড় গম্বুজে সবুজ, গোলাপি ও হলুদ রঙ করে দিই। তিনি আরও জানান, বর্তমানে মসজিদে ১ জন ইমাম, ১ জন হাফেজ ও ২ জন মুয়াজ্জিন রয়েছেন।

মসজিদটি পরিদর্শনে আশা আরেক হোসেন নামে এক দর্শনার্থী জানান, বহু বছর আগে এই মসজিদটি নির্মাণ করা হয়েছে। আমরা প্রায়ই এই মসজিদে আসি নামায আদায় করতে আর মসজিদের সৌন্দর্য উপভোগ করতে। মসজিদটি এত বেশি সুন্দর যা দেখলে প্রাণ জুড়িয়ে যায়। এখানে নামায পড়লে মনের তৃপ্তি পাই বলে এই অনেক দূর থেকে এই মসজিদে আসি।

মসজিদের মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, দীর্ঘদিন ধরে মসজিদের খেদমত করছি। প্রতিদিনই নতুন নতুন মানুষ এ মসজিদ দেখতে আসেন। আশপাশেও অনেক নতুন মসজিদ গড়ে উঠেছে। এরপরও এ মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বাড়ছে।

তিনি আরও বলেন, সাধারণত দিনে গড়ে ৮ থেকে ৯শ’ লোক নামাজ পড়েন এ মসজিদে। শুক্রবারে হাজার তিনেক ছাড়িয়ে যায়। তখন মসজিদে জায়গা সংকুলন না হলে রাস্তা বন্ধ করে সেখানেই নামাজ আদায় করেন মুসল্লিরা।

মসজিদের এই সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য নিয়মিত পরিচর্যার প্রয়োজন বলে আগত দর্শনার্থীরা জানান।

 

এমএসি/আরএইচ