দিনের আলোয় লঞ্চ স্টাফ, রাতের আঁধারে ডাকাত

বৃহস্পতিবার ৭ জুলাই ২০২২ ১৬:১২


রইসুল ইমন, পটুয়াখালী ::

দিনের আলোয় তিনি কাজ করেন বন্ধন ৫ নামক লঞ্চের বাউফলের নুরাইনপুর ঘাট সুপারভাইজার হিসেবে, রাত হলেই তিনি হয়ে ওঠেন ভয়ংকর ডাকাত। আন্তঃ জেলা ডাকাত দলের সদস্য তিনি। কুক্ষ্যাত ডাকাত দলের প্রধান ইসমাইল গাজীর অন্যতম সহযোগী ছিলেন তিনি। তার নাম হেমায়েত শিকদার ওরফে মিলন, বয়স- ৪৭ বছর। বাউফল উপজেলার সূর্যমণি ইউনিয়নের নুরাইনপুর গ্রামের রত্তন আলী শিকদারের ছেলে তিনি। এলাকাবাসি তাকে হেমায়েত নামে চিনলেও ডাকাত চক্রের কাছে তিনি মিলন নামেই পরিচিত।

সহকারী পুলিশ সুপারের কার্যালয়, বাউফল সূত্র জানা যায়, "হেমায়েত শিকদার ওরফে ডাকাত মিলন এরআগে অপর একটি ডাকাতি মামলায় সাজাপ্রাপ্ত আসামি। যাহার বাউফল থানা মামলা নং- ২০/৩৭৪ (২৫-১২-২০১৫ ইং)। সেই মামলায় বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন।" তবে এ মামলার বিষয়টি জানেন না এলাকাবাসি। 

পর্যবেক্ষণ সূত্রে জানা গেছে, রাতের আঁধারের অপকর্ম ঢাকতেই মূলত লঞ্চ স্টাফ হিসেবে চাকুরী করতেন হেমায়েত শিকদার। স্থানীয় কিছু মানুষের কাছে হেমায়েত ভালো ও মজার লোক হিসেবে পরিচিত। অনেকের কাছে আবার চরিত্রহীন, খারাপ প্রকৃতির মানুষ। লঞ্চ ঘাটে প্রায় সময় হেমায়েত যাত্রীদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ করতেন। অপরিচিত দূরের মানুষদের কাছ থেকে লঞ্চে কেবিন দেয়ার মিথ্যা কথা বলে অর্থ হাতিয়ে নিতেন। এছাড়া বন্ধন-৫ লঞ্চে প্রতিদিন জুয়ার আসর বসে। সেই জুয়ার আসর বসানোর পিছনের মূল নায়ক এই হেমায়েত।

একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র নাম পরিচয় গোপন রাখার শর্তে পর্যবেক্ষণকে জানান, রাজধানী ঢাকাসহ বরিশালের বিভিন্ন স্থানের ২০ টির বেশি ডাকাতির মিশনে অংশগ্রহণ করেছে হেমায়েত। কিছু কিছু স্থানে ডাকাতির সময় ধর্ষণের মত নিকৃষ্টতম কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে নাই হেমায়েত শিকদার ও তার ডাকাত দল।

ডাকাত হেমায়েতের প্রতিবেশী ইমরান হোসেন পর্যবেক্ষণকে বলেন, ' তাকে (হেমায়েত) মাঝে মধ্যে সন্ধ্যার পরে দেখা যেতো না। এদিক সেদিক চলে যেতো কিন্তু তিনি যে ডাকাত দলের সদস্য সেটা কখনো বুঝতে পারি নাই। আমরা ভাবতাম হয়তো জরুরি কাজে কোথাও গেছে।'

হেমায়েত শিকদার ওরফে ডাকাত মিলন দীর্ঘদিন আন্তঃজেলা ডাকাত দলের সাথে কাজ করলেও প্রকাশ্যে কেউ জানতো না বিষয়টি। তবে শেষ রক্ষা হয়নি তার, নতুন করে ডাকাতির ঘটনায় ধরা পরেছেন পুলিশের জালে। সম্প্রতি বাউফলে একের পর এক ডাকাতির ঘটনায় নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। গত ০১ জুলাই দিবাগত রাতে বাউফলের নুরাইনপুর এলাকার রুহুল আমিন শিকদারের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনায় দায়ের হওয়া মামলা নিয়ে চুলছ্যাড়া অনুসন্ধান শুরু করেন সহকারী পুলিশ সুপার (বাউফল সার্কেল) শাহেদ আহমেদ চৌধুরীর নেতৃত্বে বাউফল থানা পুলিশের একটি চৌকস দল। এরপর তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় গত ০৪ জুলাই বরিশাল থেকে দুইজন এবং বাউফল থেকে ডাকাত দলের প্রধান ইসমাইল গাজী ও ডাকাত হেমায়েত শিকদারকে আটক করে পুলিশ। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র ও যন্ত্রপাতি উদ্ধার করা হয় ইসমাইল গাজীর বাড়ি থেকে।  পুলিশের এই সফল অভিযানে স্বস্তি ফিরে পেয়েছে বাউফল বাসি৷

এ ব্যাপারে বন্ধন-৫ লঞ্চের ম্যানেজার শাহজাহান মিয়া পর্যবেক্ষণকে বলেন, হেমায়েত ২০১৬ সাল থেকে আমাদের ঘাট সুপারভাইজার হিসেবে কাজ করছে। তখন আমরা প্রথম সার্ভিসে আসি। এসে ততকালীন স্থানীয় ইউপি মেম্বারকে জানাই আমাদের একজন লোক প্রয়োজন ঘাট পরিচালনা করার জন্য। তিনি তখন হেমায়েতকে আমাদের কাছে পাঠান। হেমায়েতের অভাব অনটনের কথা শুনে আমরা তাকে কাজে রাখি। একজন ডাকাত যে দিনের আলোয় এভাবে চাকুরি করতে পারে এটা আমরা কল্পনাতেও ভাবি নাই। যখন খবরের কাগজে দেখলাম তখন তার আসল পরিচয় জানতে পারলাম।

সহকারী পুলিশ সুপার (বাউফল-দুমকি সার্কেল) শাহেদ আহমেদ চৌধুরী পর্যবেক্ষণকে জানান, তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে হেমায়েত শিকদারসহ ৪ ডাকাতকে আটক করা হয়। এরা সকলে ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। ডাকাতদের ভিতরে দুজন ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দিয়ে ডাকাতির কথা শিকার করেছেন। তারা অন্যকোন কোন রুটে ডাকাতি করেতো সে বিষয়ে রিমান্ডে জিজ্ঞাবাদ করা হবে।

এমএসি/আরএইচ