ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ঈদ যাত্রায় দুর্ভোগের আশঙ্কা

শনিবার ১৬ এপ্রিল ২০২২ ১৬:৫৫


রাসেল শেখ গাজীপুর ::
ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তা ও ভোগড়া বাইপাস সড়ক ঢাকার অত্যন্ত ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ প্রবেশদ্বার।

এ মহাসড়ক দেশের উত্তরাঞ্চলের ৩৭ জেলার সঙ্গেরাজধানীর সড়ক যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।ঢাকা-ময়মনসিংহ ও ঢাকা-টাঙ্গাইল এ মহাসড়ক দুটি দিয়ে ওই এলাকার মানুষ রাজধানীসহ দেশেরবিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করে।প্রতিদিন সড়ক দুটি দিয়ে ১৫ থেকে ২০ হাজার যাত্রীবাহী বাস চলাচল করে।প্রতিদিন লাখ লাখ পণ্য ও যাত্রীবাহী যানবাহন, ট্রাক, লরি এ পথ দিয়ে চলাচল করে।

মুসলমানদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর।ঈদের আনন্দ ভাগ করে নেওয়ার জন্য রাজধানী ও গাজীপুরে থাকা কয়েক লাখ মানুষ নাড়ির টানেগ্রামের বাড়ি ফিরে যান।আর এই ঈদযাত্রায় গাজীপুরের দুটি মহাসড়ক ও একটি আঞ্চলিক মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পায়।আর এ কারণেই ঢাকা থেকে যেসব যাত্রী ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক ধরে বাড়ি ফিরবেন তাদের মাথায় চিন্তার কারণ কেবল গাজীপুরের যানজট। প্রায় সময়ই আব্দুল্লাহপুর থেকে চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত যানজটে ঘণ্টার পর ঘণ্টা মানুষকে পথেই  থাকতে হচ্ছে।

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী সেতু থেকে জয়দেবপুর চান্দনা চৌরাস্তার দৈর্ঘ্য ১২ কিলোমিটার।এ অংশেই কয়েক বছর ধরে বাস র‌্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের কাজ চলমান আছে।ফলে নানা কারণে ১২ কিলোমিটার সড়ক অতিক্রম করতে এখন সময় লাগে ২-৪ ঘণ্টা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, বিআরটি প্রকল্পের অধীনে সড়কের ওপরে উড়ালসড়ক এবং নিচে কার্পেটিং এখনো সম্পন্ন হয়নি।নির্মাণের কাজ চলমান থাকায় মহাসড়কের অনেক স্থান কোথাও তিন লেন কোথাও কোথাও দুই লেন পরিণত হয়েছে।এতে ওই পথে যানবাহন খুবই ধীর গতিতে চলছে। ফলে সৃষ্টি হচ্ছে গাড়ির লম্বা সারি। 

এছাড়া বিআরটি প্রকল্পের অধীনে চলমান ড্রেনের নির্মাণ কাজ করতে গিয়ে মহাসড়কের ওপর এস্কেভেটর বসিয়ে বিকল্প ড্রেন স্থাপন করার সময় মাটি ও ময়লা মহাসড়কের ওপর রাখার কারণেও যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। যদিও বিআরটি প্রকল্পের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দাবি করছেন, ঈদের সাত দিন আগেই এ পথের নিচের অংশে সম্পূর্ণটা কার্পেটিং সম্পন্ন হবে। লেন ক্রসিংয়ের শৃঙ্খলা ফিরে আনা হবে।

এদিকে এবারের ঈদের সময় বৃষ্টিপাত হতে পারে বলে আবহাওয়ার পূর্বভাস ইতোমধ্যেই গণমাধ্যমে উঠে এসেছে।তবে বৃষ্টি হলে ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের ঢাকা থেকে প্রবেশদ্বার টঙ্গী থেকে চেরাগ আলী ৫ কিলোমিটার এলাকার চরম ভোগান্তি পোহাতে হবে বলে আশঙ্কা করছেন যাত্রীসাধারণ।কারণ বিগত দিনে বৃষ্টিপাতের সিজনে মহাসড়কের এ অংশের রাস্তায় সামান্য পানিতে সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতার।এর ফলে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে।

ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ এলাকার ঘুরে দেখা যায়, সড়কের আশপাশে যেসব গার্মেন্টস আছে তাদের গাড়ির জন্য নিজস্ব কোনো পার্কিং ব্যবস্থা নেই।গার্মেন্টসের পণ্যবাহী গাড়িগুলো মহাসড়কের পাশে পার্কিং করা হয়। টঙ্গী মিলগেট এলাকায় রয়েছে ঝুটা, গার্মেন্টস অবৈধ ট্রাক-বাস ওয়ার্স সেন্টারসহ একাধিক কারখানা গুদাম, টঙ্গীর চেরাগাআলী ট্রাকস্ট্যান্ডে ট্রাক-কাবার্ডভ্যান ইতোমধ্যেই দখল করে বসে আছে চেরাগআলী অংশের বিআরটি প্রকল্পের নির্মাণাধীন সেতুর নিচে। মহাসড়ক সরু হয়ে গেছে।

এছাড়াও কলেজ গেইট, বনমালা বাসস্ট্যান্ড, হোসেন মার্কেট, এরশাদনগর, গাজীপুরা, তাঁরগাছসহ এই সড়কের গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতে ছোটবড় রড-সিমেন্টের দোকান রয়েছে।এসব দোকানের সামনে বড় বড় গাড়ি থামিয়ে রড-সিমেন্ট লোড-আনলোড করতে গিয়েও মহাসড়কেযানজট সৃষ্টি হয়।

গাজীপুরে ভয়াবহ যানজটের মধ্যে মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে এসেছে অবৈধ থ্রি-হুইলার বা ইজিবাইক।অসংখ্য ইজিবাইকের কারণে অনেক সময় অন্য গাড়ি চলাতো দূরে থাক এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নড়তেও পারে না।

অপর দিকে এখানে গাজীপুরে পাঁচ সহস্রাধিক ছোট-বড় শিল্প কারখানা রয়েছে; যার অধিকাংশ তৈরি পোশাক শিল্প। পোশাকশিল্পের শ্রমিকরা অধিকাংশই ঈদে বাড়িতে যান এ ছাড়া তৈরি পোশাক কারখানার শ্রমিকদের সময়মতো বেতন দিতে না পারলে তারা রাস্তায় নেমে আসেন,এবারও তেমনটি হলে তাদের অবরোধেও যানজট সৃষ্টির আশঙ্কা আছে।

বিআরটি প্রকল্পের কাজের বিষয়ে সড়ক বিভাগের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী সবুজ উদ্দিন খান বলেন, ঈদের আগে বিআরটি প্রকল্পের অংশের কাজ বিশেষত নিচের কার্পেটিং সম্পন্ন করতে সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে সরেজমিন পরিদর্শন করা হয়েছে।ঈদের সাত দিন আগেই এ সড়ক সম্পূর্ণভাবে কার্পেটিংসহ চলাচল উপযোগী করা হবে, যাতে ঈদযাত্রায় যানজট নিয়ে কোনো ভোগান্তি না হয়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (ট্রাফিক) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে এবং ঈদযাত্রা স্বাভাবিক রাখতে পরিকল্পনা করেছি।স্বাভাবিক সময়ে আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ প্রায় ৩০০ পুলিশ সদস্য মহানগরী এলাকার মহাসড়কে যানজট নিয়ন্ত্রণে কাজ করেন।ঈদ সামনে রেখে আমরা অতিরিক্ত ১০০ জন পুলিশ সদস্য মহাসড়কে নিয়োজিত করব, যারা তিন শিফটে দায়িত্ব পালন করবেন।


গাজীপুরের জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান বলেন, ঈদ সামনে রেখে পোশাক কারখানার পরিস্থিতি যাতে স্বাভাবিক থাকে, মহাসড়কে যানজট তৈরি না হয় এবং বিআরটি প্রকল্পের অংশে ঈদের আগেচলাচল শুরু হয়, এ জন্য আমরা যোগাযোগ রক্ষাকরে চলেছি।ইতোমধ্যে মহানগর পুলিশ, জেলা পুলিশ, বিজিএমইএ, শিল্প পুলিশ, বিভিন্ন শ্রমিক সংগঠনসহ সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে একাধিকবার আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

তাছাড়া ঈদযাত্রা সহজ ও নিরাপদ করতে আমরা একটি সমন্বিত পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছি,যাতে সবাই যথাযথভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে এবং কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি না হয়,আশা করছি, ঈদের আগে সরকারের পক্ষ থেকেও কিছু নির্দেশনা পাওয়া যাবে।আমরা সেসব যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করব এবং ঈদযাত্রাকে যেকোনো মূল্যেই হোক নিরাপদ ও স্বাভাবিক রাখার সর্বাত্মক চেষ্টা করব।

এমএসি/আরএইচ