টাঙ্গাইলে লক্ষমাত্রার চেয়ে ২৫৬ ভাগ বেশী জমিতে আউশের আবাদ

সোমবার ২৩ আগস্ট ২০২১ ১৬:৫০


:: আব্দুল্লাহ্ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল প্রতিনিধি ::

 

আউশ ধানের পিঠা, চিড়া, মুড়ি, খৈ, পায়েসের স্বাদ অনেকের জিভে লেগে আছে আজও। ধারিয়াল, হাসিকলমি, পংখিরাজ, কটকতারাসহ স্থানীয় নানা জাতের আউশ ধান কর্তনের পর গ্রামের মা-বোনেরা সেই সব খাবার তৈরিতে ব্যস্ত হয়ে পড়তেন। সেই হারানো আউশ ধানের সুদিন আবার ফিরে আসছে টাঙ্গাইলে।

কৃষি মন্ত্রীর নির্দেশনায় আউশের হারানো দিন ফিরিয়ে আনতে কাজ করছে কৃষি বিভাগ। এরই সুফলে চলতি মৌসুমে টাঙ্গাইলে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে শতকরা ২৫৬ ভাগ বেশী জমিতে আউশের আবাদ হয়েছে। বন্যা না থাকায় ও আবহাওয়া অনুকুলে থাকায় ধানের ফলনও ভালো হয়েছে ।


৭০ দশকের আগে সারা দেশসহ টাঙ্গাইলেও আউশ ধানই ছিল প্রধান ফসল। আমন ছিল দ্বিতীয় অবস্থানে। ৭০ দশকের পর সেচনির্ভর বোরো আবাদের প্রচলন শুরু হয়। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণে বাড়তি মানুষের খাদ্যের জোগান দিতে গিয়ে অধিক উৎপাদনশীল সেচনির্ভর বোরো ধান চাষে মানুষ ঝুঁকে পড়ে। আর পরিবেশবান্ধব বৃষ্টিনির্ভর ফসল আউশ ধানের চাষ একেবারেই কমে যায়।

কৃষি মন্ত্রী ড. মো. আব্দুর রাজ্জাকের নির্দেশনায় ও টাঙ্গাইল কৃষি বিভাগের উদ্যোগে আবারো আউশ চাষে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা কর্মসূচি গ্রহন করা হয়। আউশ ধান আবাদের জন্য কৃষকদের বিনামূল্যে বীজ ও সার প্রদান করা হয়। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় আধুনিক কলাকৌশল ব্যবহার করে সঠিক নিয়মে জমির পরিচর্যা করায় ফলন হয়েছে ভালো। হারিয়ে যাওয়া আউশ ধান নতুন করে আবাদ করে বাড়তি লাভবান হওয়ায় খুশী কৃষকরা।


টাঙ্গাইল জেলা কৃষি অফিস সুত্রে জানা যায়, এ অঞ্চলের কৃষকরা জমিতে বছরে বোরো ও আমন এই দুই ফসল চাষ করতেন। এখন কৃষি বিভাগের পরামর্শে বছরে একই জমিতে বোরো ও আমনের মাঝে আরো একটি বাড়তি ধান আউশ চাষ করছেন। টাঙ্গাইলে ব্রিধান-৪৩, ৪৮, ৬৫, ৮২, ৮৩ ও ৮৫ জাতের চাষাবাদ করা হয়। এছাড়া স্থানীয় কিছু ধানের চাষাবাদও করা হয়।

এ ধান চাষে সময় কম লাগে, সেচ খরচ খুবই কম, সারও কম লাগে। ফলনও হয় তুলনামুলক ভালো। এটি দেশের বাড়তি একটি আয়। জেলা কৃষি অফিস সুত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জেলায় আউশ ধানের আবাদের লক্ষমাত্র ধরা হয় ৯শ’৫২ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ২৪শ’৫২ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে শতকরা ২৫৬ ভাগ বেশী। এ মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭ হাজার কৃষকের মধ্যে আউশ ধানের বীজ ও সার বিনামূল্যে বিতরণ করা হয়েছে।


টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চারাবাড়ী এলাকার কৃষক আব্দুল করিম জানান, আমরা কয়েকজন মিলে এখানে ৪-৫শ’ শতাংশ জমিতে আউশ ধান আবাদ করেছি। ধান খুব ভাল হয়েছে। পোকা মাকড় খুব কম আক্রমন করছে। জমি পতিত না রেখে আউশ আবাদে যদি বিঘায় ১০-১৫ মণ ধান পাওয়া যায় তবে তো সোনায় সোহগা। এ কারণেই সামনের বছর আউশ আবাদ বেশি করে করবো।


দেলদুয়ার সদর ইউনিয়নের কৃষক হায়দার আলী জানান, আউশ ধান আবাদে মাত্র ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। আমি এবার নতুন আবাদ করেছি। যেভাবে ধান হয়েছে তাতে ফলন খুব ভাল হবে। বাজারে এখন ১১৫০ টাকা করে ধানের দাম আছে। এ দাম যদি থাকে তবে আমরা খুব লাভবান হবো। কৃষি অফিস থেকে সার বীজ আমাগো মাগনা দিছে। আগামী বছর আমরা আরো বেশি করে আবাদ করবো।


টাঙ্গাইল সদর উপজেলার দ্যাইনা এলাকার কৃষক নজরুল জানান, সরকার থেকে আমাদের সার ও বীজ ফ্রি দিছে। আমি এবারই প্রথম এ ধান আবাদ করেছি। ফলন ভাল হয়েছে। এ ধান কেটে আমরা রোপা আমন ধান লাগাবো। এক জমিতেই আমারা তিন বার ধান আবাদ করতে পারতাছি এত আমি খুব খুশি।


টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আরিফুর রহমান জানান, এবছর আমাদের টাঙ্গাইল জেলায় আউশ ধানের আবাদের লক্ষমাত্র ছিল ৯শ’৫২ হেক্টর জমি। কিন্তু আবাদ হয়েছে ২৪শ’৫২ হেক্টর জমিতে। যা লক্ষমাত্রার চেয়ে শতকরা ২৫৬ ভাগ বেশী। এপর্যন্ত প্রায় ৩৫ ভাগ জমির ধান কর্তন হয়েছে। ৩.৮৭ মে.টন ধান প্রতি হেক্টর জমিতে উৎপদিত হয়েছে। চালের হিসেবে ২.৫৮ মে.টন প্রতি হেক্টরে। ফলন খুব ভাল হয়েছে বলে আমি মনে করি।

 

 

এমএসি/আরএইচ