জোয়ার আসলেই ছড়িয়ে পড়ছে আতংক: পাইকগাছার ভদ্রা ও কপোতাক্ষ নদের ভয়াবহ ভাঙ্গন

মঙ্গলবার ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৪:২৫


:: শেখ নাদীর শাহ্, পাইকগাছা (খুলনা) প্রতিনিধি ::


পাইকগাছায় ভদ্রা ও কপোতাক্ষের অব্যাহত ভয়াবহ ভাঙ্গণে এক প্রকার নির্ঘুম রাত কাটছে ভদ্রা তীরবর্তী উপজেলার দেলুটির কালিনগর ও দারুনমল্লিকসহ কপোতাক্ষ তীরবর্তী বোয়ালিয়া, রাড়–লী, আগড়ঘাটা, সোনাতনকাটি, কপিলমুনি, কাশিমনগরসহ বিস্তীর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের। দু’নদীর বির্স্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে নতুন করে ভয়াবহ ভাঙ্গন ও ফাঁটল শুরু হওয়ায় এসকল এলাকার বসত-বাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনার পাশাপাশি সর্বস্ব হারানোর আশংকায় রীতিমত আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। সমুদ্রে ঘণ ঘণ নি¤œচাপে নদীসমূহে জোয়ারের পানি বৃদ্ধি বিশেষ করে জোয়ার আসলেই ছড়িয়ে পড়ছে আতংক।

দুর্যোগে খুলনার অধিক ঝুঁকিপূর্ণ দ্বীপাঞ্চল বলে চিহ্নিত উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের কালিনগর এবং দারুনমল্লিকের নলডাঙা এবং গাইনের মল নামক এলাকার ওয়াপদা বেঁড়িবাঁধে ভয়াবহ ফাঁটল দেখা দিয়েছে। এতে যেকোন সময় সেখানকার বেঁড়িবাঁধসমূহ নদী গর্ভে বিলীন হয়ে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হওয়ার আশংকা ক্রমশ বেগবান হচ্ছে। এছাড়া কপোতাক্ষ নদের রাড়–লী, আগড়ঘাটা, রামনাথপুর, হাবিবনগর, সোনাতনকাটি, মাহমুদকাটি, রহিমপুর,কপিলমুনি ও কাশিমনগর এলাকায় সম্প্রতি নদীভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ক’ বছর আগেও নদের চরম নাব্যতা হ্রাসে জনপদের লাখ লাখ মানুষের জীবন-জীবিকার তাগিদে আন্দোলনের ফলে সরকার ২৬২ কোটি টাকা ব্যায়ে নদী খনন করে জোয়ার-ভাটা ফিরিয়ে আনে। অথচ মাত্র এক বছরে নদের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙ্গন ভয়াবহ রুপ নিয়েছে।

ইতোমধ্যে খনন পরবর্তী নিয়ন্ত্রণ বাঁধে নেয়া বনায়ন প্রকল্পের সিংহভাগ গাছ কপোতাক্ষ গিলে ফেলেছে। চরম হুমকির মুখে রয়েছে তীরবর্তী জেলে পল্লীসহ কাশিমনগর হাট-বাজার। প্রতিদিন ভাঙ্গনের প্রসারতা বৃদ্ধি পেয়ে বাজারের মসজিদ বরাবর গিয়ে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে এলাকাবাসীর ভাঙ্গন প্রতিরোধে সরকারের জরুরী পদক্ষেপ গ্রহনের দাবি জানিয়ে আসলেও কার্যত তা আমলে আসছেনা।

এলাকাবাসী জানান, দ্বীপ বেষ্টিত উপজেলার দেলুটি ইউনিয়নের চার পাশেই নদী। পর্যায়ক্রমে প্রাকৃতিক দূর্যোগ সিডর, আইলা ও সর্বশেষ আম্ফানের আঘাতে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় সেখানকার বির্স্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ। তার উপর ২/৩ দশক ধরে ভদ্রার অব্যাহত ভাঙ্গন যেন কোনক্রমেই পিছু ছাড়ছে না তীরবর্তী মানুষের। দফায় দফায় ভদ্রার ভয়াবহ ভাঙ্গনে পাইকগাছার মানচিত্র থেকে হারাতে বসেছে এলাকাটি। ভদ্রার ভয়াবহ ভাঙ্গনে ইতোমধ্যে নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে শত শত একর ফসলি জমি, বসতঘর-বাড়িসহ মৎস্য ঘের। দেুলুটির এক সময়ের জীবিকার প্রাণ আজ পরিণত হয়েছে অভিশাপে।

আম্পানের ভাঙ্গনে বির্স্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হলে কোটি কোটি টাকার ফসলের ক্ষতি হয়। ভেসে যায় অসংখ্য বাড়ী- ঘর। চলতি মৌসুমের ভয়াবহ ভাঙ্গন কৃষকের মাঠ ভরা আমনের ক্ষেত, সব্জির ক্ষেত-মাচা নিয়ে আতংকে রয়েছেন সেখানকার কৃষকরা।
এমন পরিস্থিতিতে তাদের একটাই চাওয়া ত্রাণ নয়, চাই টেঁকসই বেঁড়িবাঁধ।

বেঁড়িবাঁধের গাঁ ঘেঁষে বসতি স্থানীয় অবিনাশ মন্ডল জানান, আগ্রাসী ভদ্রার ভয়াল থাবায় ইতোমধ্য তার জমা-জমি গ্রাস করেছে। বসত-বাটি টুকু বাকি থাকলেও ঝুঁকিতে রয়েছে তাও। এটুকু চলে গেলে মাথা গোঁজার একমাত্র ঠাঁই হারিয়ে নিশ্চিত উদ্বাস্তু হবেন তারা। এসময় তিনি আরো বলেন, বিপজ্জনক ভাঙ্গনের মুখে রাতে ঠিকমত ঘুম হয় না। বিশেষ করে নদেিত জোয়ার আসলে রাত জেগে পাহারা দিতে হয়। এরপর নদীতে ভাটা লাগলে ঘুমাতে যান তারা।

নবনির্বাচিত স্থানীয় ইউপি সদস্য পলাশ রায় বলছিলেন, ১০/১৫ বছর ধরে একতৃতীয়াংশ জমির মাথায় স্থানীয়রা বাড়ি করে বসবাস করছে। প্রতিনিয়ত দুর্যোগের সাথে লড়াই করে টিকে আছে এলাকার মানুষের। তিনি টেঁকসই বেঁড়িবাঁধের জন্য সরকারের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সর্বশেষ রবিবার (২৬ সেপ্টেম্বর) বিকালে দেলুটির নবনির্বাচিত ইউপি চেয়ারম্যান রিপন কুমার মন্ডল ভাঙ্গন কবলিত এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন। পাউবোর সহযোগিতায় তাৎক্ষণিক কয়েকশ’ জিও ব্যাগের ব্যবস্থা করেন।

এদিকে আরো ভয়াবহ অবস্থা করছে কপোতাক্ষ তীরবর্তী ভাঙ্গনকবলিত অঞ্চলগুলোতে। বিভিন্ন হাট-বাজার, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি, বসত-বাড়ি চরম ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে। ভাঙ্গন প্রতিরোধে অতিদ্রুত ব্যবস্থা নানিলে চরম ক্ষতির আশংকা করছেন কপোতাক্ষ তীরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলের বাসিন্দারা।

 

এমএসি/আরএইচ