জন্মনিবন্ধন অনলাইন করতে শিক্ষার্থীদের কাছে থেকে নেওয়া হচ্ছে ২শ' থেকে ৬শ টাকা 

বুধবার ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ২৩:০৩


:: অহিদুল ইসলাম, নওগাঁ প্রতিনিধি ::
 
নওগাঁর মহাদেবপুরের ৯নং চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধন অনলাইন ও সংশোধন করতে গিয়ে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। বিশেষ করে ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সী শিক্ষার্থীদের করোনা'র ভ্যাকসিন (টিকার) আওতায় আনার পর ও ইউনিক আইডির জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গুলো থেকে অনলাইন (ইংরেজি-বাংলা) জন্মনিবন্ধন সনদ চাওয়ায় শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকরা অনলাইন জন্মনিবন্ধন সনদ সংগ্রহে ভীর জমান। এমনকি ইতিপূর্বেও অনলাইন করতে টাকা নিয়েছে, তারপর ইংরেজি কপি দরকার সেই জন্য আবারও টাকা নিচ্ছেন।
 
আর একারনে সনদ সংগ্রহ বৃদ্ধি পাওয়ার পর থেকেই সার্ভার সমস্যাসহ বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকার স্থলে ১শ' টাকা থেকে শুরু করে  ২শ' টাকা আর পিতা-মাতারসহ ৬শ' টাকা নেওয়া অভিযোগ রয়েছে হিসাব সহকারি সঞ্জয় কুমার প্রামানিকের বিরুদ্ধে। অতিরিক্ত টাকা নেওয়াসহ দিনের পর দিন ঘুরানোর কারনে চরম দূর্ভোগের স্বীকার হচ্ছেন ভুক্তভোগীরা। শুধু ইউনিক আইডি ও করোনা ভ্যাকসিন 'টিকা'র ক্ষেত্রে নয় প্রশাসনিক সব কর্মকাণ্ড ডিজিটাল পদ্ধতিতে ব্যবহার হওয়ায় জন্মনিবন্ধন অপরিহার্য। পাসপোর্ট, আইডি কার্ড, জমি রেজিস্ট্রেশন, বিয়ে এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তিসহ ১৭টি সেবার ক্ষেত্রে জন্মসনদ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
 
ঘটনার সত্যতা যাচাই করতে সম্প্রতি জনৈক সাংবাদিক নিজে তার সপ্তম শ্রেণীতে পড়ুয়া ছেলে (বাংলা অনলাইন করা আছে সংশোধন ইংরেজি করতে হবে), ও অষ্টম শ্রেণীতে পড়ুয়া ভাতিজা (বাবা ও মা'র অনলাইন করা আছে, শুধু ''শিক্ষার্থীর'' অনলাইন করতে হবে) কে সাথে নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদ কার্যালয়ে প্রবেশ করার পরই পরিষদের একজন গ্রাম পুলিশ সাথে থাকা দু'জন শিক্ষার্থীকে দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাস করেন, আপনি যদি জন্মনিবন্ধনের জন্য এসে থাকেন তাহলে ''একটি রুম দেখিয়ে'' বলেন, জন্মনিবন্ধন বা সংসোধন করতে ঐরুমে যান, ভালো করে কাজ করে দিবেন। 
 
এসময় সেই সাংবাদিক নিজেও দেখতে পান পরিষদের একই বিল্ডিংয়ে ইউনিয়ন তথ্যসেবা'র ঘরে ভীড় কম আর গ্রাম পুলিশের দেখানো ঘরে লোকজনের ভীর তুলনামূলক অনেক বেশী। ঘরে ঢুকেই তিনি শিশু ও শিক্ষার্থীদের সাথে আসা তাদের অভিভাবকদের ''জন্মনিবন্ধন অনলাইন'' করতে টাকা নিয়ে দেন-দরবারের চিত্র। এক পর্যায়ে সেবা প্রদানকারী তাকে দেখতে পেয়ে বসতে এবং ঘরে ভীর জমানো লোকজনকে বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করতে বলেই তার নিজ ছেলেরটা সংসোধন করতে সরকার নির্ধারিত টাকা নিলেও তার ভাতিজা'র নিবন্ধন করতে ২৫০ টাকা চাইলেও পরে ২শ' টাকা নেয়। ওই মহূর্তে কোলে শিশুসহ জনৈক এক নারী ঘরে প্রবেশ করেই প্রশ্ন করলেন, আমার এক বছর বয়সী এক শিশুর জন্য আপনি ৬ টাকা নিলেন?, ১শ' টাকা কম নিতে বললাম শুনলেন না তাও বলছেন কয়েক দিন পর। নারীর এমন কথা শুনে কিছুটা  বিরক্তবোধ করেই সেবা প্রদানকারী বললেন, আপনার সন্তানের বয়স ৪৫ দিনের মধ্যে হলে ফি দিতে হবে না, এমন বিরক্তিকর কথা শুনে জনৈক নারী ঘর থেকে বাহিরে যান।
 
এসময় জনৈক সাংবাদিকের প্রশ্ন ৬শ' টাকা কেন?, তখন তিনি বলেন, অনেক ঝামেলার কাজ, সব সময়ই লোকজনের ভীর, তার মধ্যে ''সার্ভার সমস্যা''র কারনে দীর্ঘ দিন ধরে গভীর রাত জেগে কাজ করতে হচ্ছে, রাত জাগার কারনে শরীর শুকিয়ে ওজনও কমেছে আমার। এমন নানা কথা বলতে বলতে জড়ো হওয়া কগজপত্র বের করে দেখান এবং বলেন, উপজেলাতে টাকা দিয়ে কাজগুলো রাত জেগে করে নিচ্ছি, না হলে মহাদেবপুর ঘুরতে ঘুরতে মানুষের পায়ের চামড়া ওঠে যেত বলেও দাবি করেন তিনি।
 
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন ভুক্তভোগী জানান, এরপূর্বে সন্তানকে স্কুলে ভর্তি'র সময়ও অনলাইন করতে ২/৩ শত টাকা করে দিতে হয়েছে, সেগুলোই আবারও পুনরায় অতিরিক্ত টাকা দিয়ে নতুন করে ইংরেজি বাংলা কপি বের করে নিতে হচ্ছে।
 
এব্যাপারে চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের সচিব অজিত কুমার বর্মন বলেন, আমার জানা মতে একটি নিবন্ধন সংশোধন করতে ৬শ টাকা নেওয়া হয়নি। তাহলে কত টাকা নেওয়া হচ্ছে এমন প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে তিনি বলেন, আমার নিকট আত্মীয় মারা গেছে তাই আমি ফোনে কোন কথা বলতে পারছিনা। আপনি আগামীকাল আমার অফিসে আসেন সেখানে সামনা সামনি কথা হবে বলে ফোন কেটে দেন।
 
হিসাব সহকারী সঞ্জয় কুমার বলেন, আমি কারও কাছে ২শ টাকা নেইনি। আমি ১শ টাকা করে নিয়েছি। সরকার নির্ধারিত ফি ৫০ টাকা তাহলে আপনি কিভাবে ১শ টাকা নিলেন এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তর দিতে না পেরে ফোন কেটে দেন।
 
এ বিষয়ে চেরাগপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান শিবনাথ মিশ্র কাজে বাইরে ''নওগাঁতে'' আছেন জানিয়ে বলেন, সরকার নির্ধারিত ফি'র বাইরে অতিরিক্ত ফি আদায় করা যাবে না। এমন কোনো অভিযোগ আমার কাছে আসে নাই। বা আমি জানিনা, তবে বিষয়টি আমি দেখছি।
 

এমএসি/আরএইচ