চুপচাপ রাবেয়ার যে গল্প শুনলেন ইউএনও

শনিবার ২৩ এপ্রিল ২০২২ ১৩:৫৫


তিমির বনিক, মৌলভীবাজার  ::
সত্তরোর্ধ রাবেয়া বেগম মৌলভীবাজার উপজেলা অফিসে এসেছেন শহরতলী থেকে। নতুন একটি ঘরের আশায় তিনি এসেছেন এই সরকারি দপ্তরে। রাবেয়া বেগম সরাসরি এসে উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তার কাছে গিয়ে সব বলতে শুরু করলেন। আর সরকারের এই কর্মকর্তা চুপ চাপ মনোযোগ দিয়ে সব শুনলেন। 

বুঝিয়ে শান্তনা আর আশ্বাস দিলেন। শুধু রাবেয়া নয়। এভাবে প্রতিদিন উপজেলায় আসেন একের পর এক সমস্যাগ্রস্ত নারী-পুরুষ। উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তাও ধৈর্য নিয়ে শুনছেন তাদের সুখ-দুঃখের কথা। তাৎক্ষনিক কিছু করতে না পরলেও বুঝিয়ে শান্তনা দিচ্ছেন। কারো প্রতি নেই বিরক্তিবোধ, রূঢ় আচরণ। পাশাপাশি সারাদিন নিজের প্রশাসনিক কাজ করেই চলছেন। 

তিনি আর কেউ নন ক্লোজ আপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ সেরা দশের একজন দেশ কাঁপানো শিল্পী বাঁধন অর্থাৎ সাবরিনা রহমান বাঁধন। মৌলভীবাজার সদর উপজেলার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তিনি। একজন জনবাদ্ধব প্রশাসনিক অফিসারও বলা যায়। তাঁর প্রশাসনিক, সাংস্কৃতিক ও  মানবিক কাজগুলো প্রশাসনের প্রতি মানুষের দীর্ঘ দিনের বদ্ধমূল ধারণা পাল্ট দিচ্ছে। একসময় যেখানে যেতে মানুষ ভয় পেতো সেই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় এখন যেনো অসহায় মানুষের আশ্রয়স্থল।

সাবরিনা রহমান বাঁধনের জন্ম বনলতা সেনের নাটোরের নলডাাঙা উপজেলার প্রত্যন্ত পল্লী ঠাকুর লক্ষীভোল গ্রামে। বাবা ছিলেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (অতিরিক্ত সচিব)। ৩ বোন আর একমাত্র ভাইয়ের মধ্যে বড় বাঁধন শিক্ষা জীবনে ছিলেন অনেক মেধাবী। স্টার মার্ক পেয়ে ১৯৯৯ সালে রাজশাহী বোর্ড থেকে এসএসসি এবং সমান নম্বর পেয়ে ২০০১ সালে ঢাকা বোর্ড থেকে এইচএসসি পাস করেন বাঁধন। 

স্বপ্ন ছিলো বড় ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার। ভর্তি হন দেশের সেরা বিদ্যাপীঠ বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট)। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিএসসি করে ৩২ তম বিএসিএসে অংশ নেন। সুপারিশপ্রাপ্ত  হন প্রফেশনাল ক্যাডারের সড়ক ও জনপদ বিভাগে। কিন্তু বাবার ইচ্ছে পুরণে ৩৩ তম বিএসিএসে অংশ নেন। এডমিনে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়ে প্রশাসনিক চাকুরী জীবনের প্রথম পোস্টিং চট্টগ্রাম কালেক্টোরেটে সহকারী কমিশনার পদে। 

সাবরিনা রহমান বাঁধন জানান, নিজে ইঞ্জিনিয়ার হওয়া স্বপ্ন দেখলেও বাবা চাচ্ছিলেন তিনি যেনো প্রশাসনে যোগ দেয়। তাই এই ক্যাডার পরিবর্তন। আর পিছু হঠতে হয়নি তাকে। সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ের সহকারী সচিব থেকে ২০২১ সালের পহেলা জুন  মৌলভীবাজার সদর উপজেলার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পদে যোগ দেন সাবরিনা রহমান বাঁধন। অবশ্য ইউএনও সাবরিনা রহমানকে দেশের অধীকাংশ মানুষ চিনে শিল্পী হিসেবে।

২০১০ সালে জনপ্রিয় টিভি অনুষ্ঠান ক্লোজআপ ওয়ান তোমাকেই খুঁজছে বাংলাদেশ দ্বিতীয় আসরে সেরা ১০ ফাইনালিস্টের একজন বাঁধন। প্রশাসনে যোগ দিলেও থেমে নেই তার লেখালেখি আর সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড। গান গাওয়া, বই পড়া। লিখেন গল্প-কবিতা ও উপন্যাস। সাবরিনা রহমান বাঁধনের 'শেষের কবিতা পরে' কাব্যগ্রন্থ আর 'কমলো মেঘের ওজন' উপন্যাস  ২০২২ সালের বই মেলায় মোড়ক উন্মোচিত হয়।

মৌলভীবাজারে যোগ দিয়ে অনেকগুলো ভালো কাজের মধ্যে সকল স্কুল কলেজ মাদ্রসার ১৪০০ শিক্ষার্থীর জন্য আয়োজন করেছিলেন শুদ্ধসুরে জাতীয় সংগীত প্রশিক্ষণ। মুজিববর্ষে তার ব্যতিক্রম আয়োজন চা বাগানে নিয়ে শিশুদের হাতে কলমে  আর্টক্যাম্প অনেক প্রশংসিত হয়।

এছাড়াও উদ্যোক্তা নারীদের জন্য সপ্তাহে দুদিন তাদের পন্য বিক্রীর জন্য চাঁদনীঘাটে চালু করেছেন হাট। এমন অসংখ্য ভালোকাজ  আয়োজনসহ আরও কতো কিছু ? বলা যায় ছাত্রী শিল্পী হিসেবে যেমন ছিলেন তারকা ঠিক তেমনি প্রশাসনেও সেরাদের সেরা সাবরিনা রহমান বাঁধন।

ফুঁটফুঁটে ২ পুত্রের জননী সাবরিনা রহমান বাঁধনের স্বামী সড়ক বিভাগ মৌলভীবাজার নির্বাহী প্রকৌশল জিয়াউদ্দিন আহমেদকে নিয়ে অনেক সুখী। জানালেন যেমন মা বাবার কাছ থেকে পেয়েছেন অনুপ্রেরণা  ঠিক তেমনি প্রকৌশলী স্বামীর দিক থেকে নেই কোনো বাধাঁ।

এমএসি/আরএইচ