ঘাটাইল আশ্রয়ণকেন্দ্র ছেড়ে যাচ্ছে অনেকেই, বসবাসের অনুপযোগী 

রবিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৮


:: নজরুল ইসলাম, ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি ::

তিন বছর আগে এই আশ্রয়ণকেন্দ্র থেকে সেলিম নামে এক বাসিন্দা চলে গেছেন। তাঁর ছেলে বড় হয়েছে। এখানের পরিবেশ দেখে কেউ মেয়ে (বিয়ের জন্য) দিতে চান না। তিনি তাঁর ভাইয়ের দেওয়া দুই শতাংশ জমিতে ঋণ নিয়ে করেছেন বাড়ি। দিয়েছেন ছেলেকে বিয়ে। ভাঙা ঘর, চাল দিয়ে পানি পড়ে, স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই। এখানে মানুষের থাকার মতো অবস্থা নেই। এত কষ্ট সহ্য করতে না পেরে বানেছা বেগমের পরিবারও চলে গেছেন।’

আক্ষেপের সুরে এ কথা বলছিলেন টাঙ্গাইলে ঘাটাইল উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের কাজলা আশ্রয়ণকেন্দ্রের বাসিন্দা নূরজাহান বেগম (৩৫)। স্বামী-সংসার নিয়ে দীর্ঘ ২০ বছর ধরে এই আশ্রয়ণকেন্দ্রে বাস করছেন তিনি।

নূরজাহান বলেন, ‘এই কেন্দ্রে ৫০টি পরিবারের থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। শুরুতে এখানে ৫০ ঘর বসতি ছিল। চার-পাঁচ বছর পর থেকে মানুষজন চলে যেতে শুরু করে।’

২০ বছর আগে ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য ঘাটাইল উপজেলায় কাজলা আশ্রয়ণ প্রকল্প হাতে নেয় স্থানীয় প্রশাসন। তবে এই দীর্ঘ সময়ে আশ্রয়ণকেন্দ্রে কোনো সংস্কার করা হয়নি। প্রয়োজনীয় সংস্কার না হওয়ায় টিনের চাল ও বেড়া মরচে ধরে ভেঙে গেছে। একটু বৃষ্টি হলেই ঘরে জমে যায় বৃষ্টির পানি।

বৃষ্টির পানিতে ভিজে নষ্ট হচ্ছে আসবাব। বাধ্য হয়ে পলিথিন, কাঁথা, কলাপাতা দিয়ে ছাউনি দিয়েছেন আশ্রয়ণকেন্দ্রে থাকা পরিবারগুলো। এ ছাড়া কেন্দ্রে নেই কোনো স্বাস্থ্যসম্মত টয়লেট ও সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ফলে আশ্রিত পরিবারগুলো ধীরে ধীরে ছাড়ছে কেন্দ্র। ইতিমধ্যে ৫০টি পরিবারের মধ্যে ৪১টি পরিবার আশ্রয়ণকেন্দ্র ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছে।

সরেজমিনে কাজলা আশ্রয়ণকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ২০০১ সালে নির্মিত আশ্রয়ণকেন্দ্রটিতে রয়েছে পাঁচটি ব্যারাক। প্রতিটি ব্যারাকে ১০টি করে মোট ৫০টি পরিবার থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। আশ্রয়ণের বাসিন্দা এক্কাবর হোসেন বলেন, ‘আশ্রয়ণটি কেন্দ্র নির্মাণের পর আর সংস্কার করা হয়নি। ব্যারাকের প্রতিটি রুমের টিনের চাল ও বেড়া মরচে ধরে ভেঙে গেছে।

একটু বৃষ্টি হলেই ঘরের ভেতরে পানি পড়ে। পলিথিন মুড়িয়ে বৃষ্টি ফেরাতে হয়। সংস্কার না করায় কক্ষগুলো থাকার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নলকূপ না থাকায় দূর থেকে পানি আনতে হয়। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে সংস্কারের জন্য বারবার আবেদন করেও কোনো লাভ হয়নি। যাওয়ার জায়গা না থাকায় আমরা কয়েক ঘর এখানে পড়ে আছি।’

বৃদ্ধ ছফর আলী বলেন, ‘অন্য কোথাও মাথা গোঁজার ঠাঁই থাকলে আমরা এখানে থাকতাম না। মানুষ হিসেবে বসবাসের জন্য এখানে কোনো সুযোগ-সুবিধা নেই। এখান থেকে পশ্চিম দিকে সাড়ে চার কিলোমিটার দূরে একটি ও পূর্বে চার কিলোমিটার দূরে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে ছোট ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না। ভ্যান, রিকশা চালিয়ে জীবন চললেও সন্তানদের জন্য দুর্দিন অপেক্ষা করছে।’

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা এনামুল হক বলেন, "কেন্দ্রটি সংস্কারের জন্য স্থানীয় উপজেলা প্রকৌশলী অধিদপ্তরের মাধ্যমে প্রকল্প তৈরি করে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে ২০১৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর চিঠি দেওয়া হয়েছে। এখনো কোনো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি"।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সোহাগ হোসেন বলেন, "আমি উপজেলায় সদ্য যোগদান করেছি, তাই এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত নই। আশ্রয়ণ প্রকল্পগুলো পরিদর্শন করে এবং আগের নথিগুলো দেখে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব"।

 

এমএসি/আরএইচ