কেশবপুরে ড্রাগন চাষ করে সাম্বলম্বি সাইফুল

মঙ্গলবার ৩১ আগস্ট ২০২১ ১২:৩৫


:: ঝন্টু, কেশবপুর (যশোর) প্রতিনিধি ::

 

যশোরের কেশবপুরে বাণিজ্যিকভাবে ড্রাগন ফলচাষ করে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন  সাবেক চেয়্যারমানের ছেলে  ববিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। তাঁর বাগানে ড্রাগনফল চারা রোপণের ৮-৯ মাসেই ফল ধরেছে। রোপনের পর অল্পদিনে উৎপাদন ও অধিক লাভজনক হওয়ায় কেশবপুরসহ পাশ্ববর্তী উপজেলার অনেক কৃষক ও ব্যবসায়ীরা ড্রাগন চাষে ঝুঁকে পড়েছেন।

শুরুর বছরেই ৪ বিঘা জমিতে সাইফুল ৫ লক্ষ টাকার ড্রাগনফল বিক্রি করেছেন। যা এখনও চলমান। গাছের বয়স যত বৃদ্ধি পাবে ফলনও তত বাড়বে। আর এভাবে উৎপাদন অব্যাহত থাকলে আগামী দশ বছরে কোটি টাকারও বেশী ফল উৎপাদন হবে বলে তিনি জানান। সাধারণত এ গাছে রোপনের ১২ থেকে ১৮ মাস পর ফল ধরে। এ প্রজাতির গাছ প্রায় ১০০বছর বাঁচে। ৫০ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত ভালোভাবে ফল উৎপাদন হয়। পরে উৎপাদন কমতে থাকে। সাইফুলের স্বপ্ন উপজেলাব্যাপি ড্রাগন চাষ ছড়িয়ে দিয়ে দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানি করা।

তাঁর সাফল্যের খবর পেয়ে পাশের কলারোয়া উপজেলার কওসার আলী নামের এক ব্যক্তি সাইফুলের বাগান থেকে গাছের কান্ড সংগ্রহ ও পরামর্শ নিয়ে ১১ বিঘা জমিতে চাষ শুরু করেছেন। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকার ছোটবড় কৃষক ও ব্যবসায়ীরা সাইফুলের পরামর্শে দামী ফল ড্রাগনচাষে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন।

জানাগেছে, উপজেলার সাতবাড়িয়া গ্রামের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আতিয়ার রহমানের ছেলে সাইফুল ইসলাম যশোরের পলাশীর রুদ্রপুর পার্কের পাশে সাবেক এক সেনাকর্মকর্তার ৫’শ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ দেখে উদ্বুদ্ধ হন। পরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ইউটিউব দেখে পরিকল্পনা নেন ড্রাগন চাষের। ঐ বছরই সামরিক কর্মকর্তার বাগান থেকে ড্রাগন গাছের কান্ড সংগ্রহ করে ৪ বিঘা জমিতে রোপন করে।

আড়াই হাজার সিমেন্টের তৈরী পিলার যা সোজা করে মাটিতে পুতে দিতে হয়, তার উপর মোটর সাইকেলের পুরাতন টায়ার বেঁধে চাষ এবং নিয়মিত পরিচর্যা শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে সব মিলিয়ে ৪ বিঘা জমিতে ড্রাগন চাষ শুরু করতে খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ লক্ষ টাকা। এছাড়া তিনি সৌদি খেজুর, লটকন, মাল্টা, থাই নারকেল, আম ও সিডলেস লেবুর আলাদা আলাদা চাষ করছেন।

সাইফুলের বাগান সার্বক্ষনিক দেখাশুনা করেন শহিদুল ইসলাম নামের এক মালী। প্রায় ২২ বছর ধরে  আতিয়ার চেয়্যারমানে আমল থেকে তিনিআছেন। বর্তমানে  সাইফুলের বিভিন্ন ফল ফলাদির বাগান দেখাশুনা করেন। তিনি জানান, ড্রাগন গাছ রোপণের পর ১২ থেকে ১৮ মাস সময় লাগে ফল আসতে। কিন্তু তাদের বাগানে ফল এসেছে ৮ থেকে ৯ মাসের মধ্যে। বছরে প্রায় ১০ মাসই ফল ধরে। একবার রোপন করলে প্রায় একশত বছর বেঁচে থাকে গাছ। তবে ৫০ বছর পর্যন্ত ভাল ফলন পাওয়া যায়। প্রাথমিকভাবে ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের একটি ড্রাগন গাছে ৫ থেকে ২০টি ফল এবং ৫-৬বছর পর একটি গাছে ২৫ থেকে ১০০টি ফল উৎপাদন হয়।

মালী শহিদুল আরও বলেন, সুস্বাদু ও বিভিন্ন রোগের উপকার হয় বলে বর্তমানে ড্রাগন ফলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ব্যবসায়ীরা ফল ক্রয় করার জন্য অগ্রীম অর্ডার করেন। বাগান থেকে প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩৫০ টাকা দরে বিক্রি করা হয়। ৮-৯ মাসে বিঘা প্রতি প্রায় ১৫০ মন ফল পাওয়া যায়। অতিবৃষ্টি না হলে ৪ বিঘা জমিতে বছরে ৬’শ মন ফল পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যার বর্তমান বাজার মূল্য প্রতিমন বারো হাজার হিসেবে বাহাত্তর লক্ষ টাকা।

জানাগেছে, ড্রাগন ফলের জন্ম মধ্যআমেরিকায়। দক্ষিণ এশিয়ার মালেশিয়ায় ফলটির উৎপাদন হয় বিংশ শতাব্দীর দিকে। বর্তমানে ভিয়েতনামে বেশি চাষ হচ্ছে। ভিয়েতনাম ছাড়া তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, শ্রীলঙ্কা, মালেশিয়া, চীন, ইসরাইল, অস্ট্রলিয়াতেও চাষ হচ্ছে।

২০০৭ সালে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্ম প্লাজম সেন্টারের প্রফেসর ড. এম.এ. রহিম গবেষণার উদ্দেশ্যে ড্রাগন ফলের কয়েকটি জাত নিয়ে আসেন থাইল্যান্ড থেকে। ঐ প্রথম এ দেশে ড্রাগন ফলের গাছ নিয়ে আসা হয়। তাঁর গবেষণা সফল হয় এবং সেসব গাছে ফলন আসে। এ সফলতার ওপর ভিত্তি করে গবেষণা সেন্টার থেকে এখন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ড্রাগন ফলের উন্নত জাতের চারা সরবরাহ করা হচ্ছে।

ড্রাগনফল দু’রকমের- টক ও মিষ্টি স্বাদের। মিষ্টি স্বাদের ড্রাগন ফলের আবার তিনটি জাত রয়েছে। যেমন-লাল ড্রাগনফল বা পিটাইয়া: এ প্রজাতির গাছের ফলের খোসার রঙ লাল, শাঁস সাদা। আমাদের দেশে এ প্রজাতির ফলই বেশি উৎপাদন হয়। কোস্টারিকা ড্রাগন ফল: এ ফলের খোসা ও শাঁসের রঙ লাল। হলুদ ড্রাগন ফল: এ ফলের খোসা হলুদ রঙের ও শাঁসের রঙ সাদা।

এরিই ধারাবাহিকতায় আশেপাশের গ্রামগুলাতে কমবেশি সবাই বড়িতে লাগাতে শুরু করেছেন ড্রাগন ফল গাছের চারা। 

 

এমএসি/আরএইচ