কুয়াকাটায় ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক পর্যটক হেনস্তা

বৃহস্পতিবার ৩ মার্চ ২০২২ ১৫:২৪


:: মহিপুর -কুয়াকাটা ::

‘ট্যুরিস্ট পুলিশের জয় হোক! আর যাবো না কুয়াকাটা’ ফেইসবুকে ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিক রনজক রিজভী’র এমন একটি লেখা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঝড় তুলেছে। ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক পর্যটকদের সাথে অশোভন আচরণের প্রতিবাদ জানিয়ে গত ৪ দিন ধরে সামাজিক যোগাযোগে চলছে নিন্দার ঝড়। পর্যটন নির্ভর ব্যবসায়ীরা এমন অশোভন আচরণে হয়েছেন বিষ্মিত।

ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাংবাদিক মহলসহ বিভিন্ন শ্রেণীর মানুষ। সামাজিক যোগাযোগে এমন লেখা ভাইরাল হওয়ার পর ট্যুরিস্ট পুলিশের আচরণে ক্ষুব্ধ পর্যটকসহ ভূক্তভোগীরা মুখ খুলতে শুরু করেছে। তুলে ধরেছেন তাদের প্রতিক্রিয়া। সেখানে ফুটে উঠেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ কর্তৃক অযাচিতভাবে হয়রানীর চিত্র। ভূক্তভোগিরা ট্যুরিস্ট পুলিশের কর্তৃত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন তাদের সেবা ও নিরাপত্তা নিয়ে।

পর্যটকদের নিরাপত্তায় নিয়োজিত ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের বেপরোয়া আচরণে আগত পর্যটকরা নেতিবাচক ধারনা নিয়ে কুয়াকাটা ত্যাগ করেন। এতে প্রভাব পড়ছে কুয়াকাটা পর্যটনে। সামাজিক যোগাযোগে তারা ট্যুরিস্ট পুলিশকে পর্যটক বান্ধব হওয়ার আহবান জানিয়েছেন।

ট্যুরিস্ট পুলিশের বিরুদ্ধে পর্যটকদের গায়ে হাততোলা, পান থেকে চুন খসলেই অশ্লীল আচরণ, হয়রানী সহ নানা অভিযোগ রয়েছে। এতে ট্যুরিস্ট পুলিশের সাফল্যের চেয়ে দুর্নাম ছড়াচ্ছে বেশি।

এনিয়ে কর্মকর্তাদের সাথে কথা বললেও লাভ হয়নি কোন। উল্টো আরও হেনস্তার শিকার হতে হয়েছে তাদের।

এ বিষয়ে কুয়াকাটা ট্যুরিজম ম্যানেজমেন্ট এসোশিয়েশন (কুটুম) ও কুয়াকাটা প্রেসক্লাবের সভাপতি নাসির উদ্দিন বিপ্লব বলেন, এখানকার ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যদের কোন প্রশিক্ষণ নেই। ট্যুরিস্টদের সাথে কেমন আচরণ করা হবে, তাদের সেবার মান এবং নীতি নৈতিকতা নিয়ে একাডেমিক্যাল প্রশিক্ষনের অভাব রয়েছে। প্রশিক্ষণ ছাড়াই বিভিন্ন দপ্তর থেকে এনে ট্যুরিস্ট পুলিশে দেয়া হয়।

তিনি আরও বলেন, অনেক ট্যুরিস্ট পুলিশ সদস্যরা এখানে থাকতে চায় না তাই ইচ্ছা করেই পর্যটকসহ স্থানীয়দের সাথে অশোভন আচরণ করে থাকেন। যাতে তাদেরকে এখান থেকে সরিয়ে অন্যত্র নেয়া হয়। তিনি বলেন, এর পরিত্রাণ হওয়া প্রয়োজন। ট্যুরিস্ট পুলিশকে ট্যুরিস্ট বান্ধব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যথায় এর প্রভাব পড়বে পর্যটনের উপর। কুয়াকাটা বিমুখ হবে পর্যটকরা।

এ ব্যাপারে ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের সহকারী পুলিশ সুপার আঃ খালেক বলেন, ট্যুরিস্টদের সাথে অশোভন আচরণ করা আমাদের কাম্য নয়, ট্যুরিস্টদের সেবা দেয়াই আমাদের কাজ। তারপরও অজান্তে কোন কোন পুলিশ সদস্যের সাথে পর্যটকদের তর্কাতর্কি কিংবা কথা কাটাকাটির মত অনাকাঙ্খিত ঘটনার খবর এসেছে। বিষয়টি আমলে নিয়ে আমরা কিভাবে সেবার মান বাড়ানো যায় সে বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের পরামর্শ নিয়ে কাজ করছি। কোন পুলিশ সদস্য পর্যটকদের সাথে অশোভন আচরণ করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

ঢাকার সিনিয়র সাংবাদিক রনজক রিজভীর ফেইসবুক টাইম লাইনে কুয়াকাটায় ট্যুরিস্ট পুলিশের আচরণ নিয়ে লেখাটি হুবাহুব তুলে ধরা হলো- “ট্যুরিস্ট পুলিশের জয় হোক! আর যাবো না কুয়াকাটা” সাংবাকিদকদের ট্রেনিং করাতে কুয়াকাটা গিয়ে দেখে এলাম ট্যুরিস্ট পুলিশের বাহাদুরি। ২৫ ফেব্রুয়ারি (শুক্রবার) সমুদ্র সৈকতের লেম্বুরচর পার হয়ে ঝাউবনে ঘুরতে গিয়েই পড়লাম ঝামেলায়।


দেখলাম ঝাউবনের শেষপ্রান্ত দিয়ে অনেকেই সৈকতে গেছেন। আমরা সেখানে একটি ভিডিওতে সুন্দরবনের পূর্ব প্রান্ত দেখানোর চেষ্টা করলাম। দূর থেকে বাইক চালক (গাইড) জলিল আমাদের ডেকে সেখান থেকে বের হওয়ার পরামর্শ দিলেন। বের হয়ে আসতেই ট্যুরিস্ট পুলিশের কনস্টেবল (নেমপ্লেট ছিল না) গাইডকে যেভাবে আক্রমণ করলেন, তার চিৎকার আর হিংস্রতা দেখে কয়েকশো পর্যটক রীতিমতো হতভম্ব।

এরপর সেখানে এলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের এসআই জুয়েল। তার ক্ষমতার দম্ভ প্রদর্শনীতে পরিস্থিতি আরো ঘোলাটে হয়ে উঠলো। সূর্য তখন অস্তমিত প্রায়। কনস্টেবলকে আমরা সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে তাদের শান্ত হতে অনুরোধ করলাম। যেহেতু আমাদের দ্রুত ফিরতে হবে। এবার কনস্টেবল আমার কার্ড দেখতে চেয়ে বললেন 'কিসের সাংবাদিক আপনি! কার্ড দেখান! কার্ড আছে আপনার!'

বললাম এখানে কোনো অফিসার আছেন, কথা বলতে চাই। এলেন এসআই জুয়েল। বললেন- 'আপনি জানেন, নির্বাহী ক্ষমতায় এখন আপনাকে গ্রেফতার করতে পারি।' বিনয়ের সঙ্গে বললাম- প্লিজ আমাকে গ্রেফতার করুন।' তিনি বললেন, গ্রেফতার করবেন না। তবে বাইক চালক নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে আপনাদের সৈকতে নিয়ে গেছে। তাই মোটর সাইকেলসহ চালক জলিলকে আটক করে নিয়ে যাবেন।
কয়েকশো পর্যটক দেখলেন আমাদের চালককে তারা নিয়ে যাচ্ছেন। আমরা বিপাকে পড়লাম! সেখান থেকে কীভাবে ফিরব! কুয়াকাটা জিরো পয়েন্ট থেকে ওই জায়গার দূরত্ব ৮ কিলোমিটার।

নিরুপায় হয়ে আমরা তিনজন সেখান থেকে হাটতে শুরু করলাম। এক পর্যায়ে অন্য চালকরা পর্যটকদের নামিয়ে দিয়ে লেম্বুরবনের ফিসফ্রাই জোন থেকে আমাদের কুয়াকাটা জিরো পয়েন্টে পৌঁছে দেন।

এরই মধ্যে স্থানীয় সাংবাদিকরা বিষয়টি জেনে ঘটনাটি ট্যুরিস্ট পুলিশের ইন্সপেক্টরকে অবহিত করেন। সন্ধ্যার পর পুলিশ বক্সে ইন্সপেক্টর সাহেব চায়ের নিমন্ত্রণ দিলেন। সাংবাদিকদের অনুরোধে সেখানে গিয়ে দেখলাম আরেক চিত্র।

ইন্সপেক্টর সাহেব পুরো বিষয়টি শুনে দু:খ প্রকাশ করলেন। এসআই জুয়েল এবং সেই কনস্টেবলকে ডাকলেন। সেখানে আবারও তারা যে দম্ভ এবং ঔদ্ধত্য দেখালেন, অবাক হলাম! মনে হলো, তারা কোনো শৃংখলাতেই নেই! দুই ট্যুরিস্ট পুলিশের হুংকার শুনে পুলিশ বক্সের সামনেও উৎসুক ও পর্যটকদের ভিড় বাড়তে থাকে। এক পর্যায়ে তাদের সরিয়ে দেয়া হয়। এসব ঘটনা যেসব পর্যটকের সামনে ঘটেছে, তাদের কাছে কী বার্তা গেল!


ট্যুরিস্ট পুলিশের আচরণ বদলাতে হবে। ট্যুরিস্ট পুলিশের হায়েনার মতো আচরণ নিশ্চয়ই পর্যটকরা পছন্দ করেন না। এই অবস্থা স্থায়ী হলে কতিপয় ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা সৈকতের বাঘ প্রমাণ করতে পারবে ঠিকই, পর্যটনখাত ক্ষতিগ্রস্ত হবে, ক্ষতি হবে দেশের।

এমএসি/আরএইচ