কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় এসিড পানে আত্নহত্যা

শনিবার ১ এপ্রিল ২০২৩ ১৩:২৮


মীর্জা অপু, পাবনা
পাবনায় কিস্তির টাকা পরিশোধ করতে না পারায় 'প্রতিশ্রুতি' নামের একটি এনজিওর লোকজন দ্বারা অপমান-অপদস্ত হয়ে এসিড পানে আত্নহত্যা করেছে কিস্তির জ্বালায় জর্জরিত রোজিনা খাতুন নামের এক গৃহবধূ।এসিড পানে অসুস্থ হয়ে আড়াই মাস বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসার পর অবশেষে গত ২৮ মার্চ নিজ বাড়িতে মারা যান তিনি।
অভিযোগ রয়েছে ‘পাবনা প্রতিশ্রুতি’ নামের একটি এনজিওর শাখা ব্যবস্থাপক ও মাঠ কর্মিরা তাকে অপমান অপদস্ত করেন। তাদের এই দূর্ব্যবহার সইতে না পেরে  এসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টা করেন পাবনা সদর উপজেলার দোগাছি ইউনিয়নাধীন আরিফপুর গ্রামের আমজাদ হোসেনের স্ত্রী রোজিনা খাতুন। 
বুধবার(২৮ মার্চ) লাশের ময়নাতদন্ত শেষে বিকেলে তার দাফন সম্পন্ন হয়।নিহতের স্বামী আমজাদ হোসেন জানান এ ঘটনায় আমার ছেলে হৃদয় হোসেন বাদী হয়ে পাঁচজনকে এজাহারভুক্ত আসামী করে গত ১৫জানুয়ারি পাবনা থানায়  একটি  মামলা দায়ের করে। পুলিশ ২ জনকে গ্রেফতার করে আদালতে সোপর্দ করেছিলো। এরা হলেন  প্রতিশ্রুতির শাখা ব্যবস্থাপক এহিয়া খান ও মাঠ কর্মী শাহিদা খাতুন। কয়েক দিনের মধ্যে তারা জামিনে মুক্তি  পান।  বাকিদের  গ্রেপ্তারে কোন তৎপরতা নেই।
পাবনা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কৃপা সিন্ধু বালা বলেন, পূর্বের ঘটনার প্রাথমিক সত্যতা মেলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। এ ঘটনার তদন্ত চলছে। আইনানুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।
'পাবনা প্রতিশ্রুতি'র নির্বাহী পরিচালক মমতা চাকলাদার বলেন, কিস্তির টাকা দিতে না পারায় অপমান অপদস্ত করার বিষয়টি সঠিক নয়। তারপরও মানবিক দিক ভেবে আমাদের পক্ষ থেকে তার চিকিৎসা সহায়তার কমতি করা হয়নি।
একটি বিশ্বস্ত সূত্র জানায়, শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়া এই এনজিও কর্তৃপক্ষ  শুরু থেকেই  ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা চালিয়ে আসছেন। ইতোমধ্যে তারা একটি সাংবাদিক সম্মেলন করে তাদের পক্ষের অবস্থান জানান দিলেও প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেয়া  সম্ভব হচ্ছেনা। এলাকার মানুষের মুখে মুখে ব্যাপকভাবে  আলোচিত হচ্ছে এই ঘটনা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও  বিষয়টি ভাইরাল হয়ে গেছে। 
টাকা দিয়ে ম্যানেজ করা ও ঘটনাটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন বিষয়ে জানতে চাইলে মমতা চাকলাদার বিষয়টি হেসে উড়িয়ে দেন। তিনি কোন সদ্যুত্তর দেননি।
এদিকে এনজিওর গ্রাহক এসিড পানে আত্মহত্যার চেষ্টার ঘটনায় অভিযুক্ত কর্মকর্তা ও কর্মিকে তাদের পুর্বের কর্মস্থল দোগাছি শাখা থেকে বদলি করে অন্য শাখায় স্থানান্তর করা হয়েছে।
পারিবারিক ভাবে জানা যায়, ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে রোজিনা খাতুন পাবনা প্রতিশ্রুতি এনজিও'র দোগাছি শাখা থেকে ৪৫ হাজার টাকা ঋণ নেন। নানা অভাব অনটনের মধ্যেও তিনি নিয়মিত ভাবে ১৩০০ টাকা হারে ২৩ কিস্তি পরিশোধ করেন। পরবর্তী কিস্তির টাকা যথা সময়ে দিতে না পেরে কিছুদিন বাড়ির বাইরে অন্যত্র অবস্থান করেন। গত ১১ জানুয়ারি তিনি নিজ বাড়িতে ফিরলে প্রতিশ্রুতির মাঠ কর্মি শাহিদা খাতুন লোকজন নিয়ে তার বাড়িতে যান। এনজিও কর্মির নিকট রোজিনা খাতুন কিস্তির টাকা কিছুটা কমিয়ে দিতে অনুরোধ করেন। এতে রাজি না হয়ে উল্টো রোজিনা খাতুনকে অফিসে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়। দোগাছি শাখার ব্যবস্থাপক এহিয়া খানের কাছেও একই দাবী জানান রোজিনা। কিন্তু তার দাবী না মেনে উল্টো অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ ও অপমান-অপদস্ত করা হয়। রাগে ক্ষোভে অপমানে বাড়ি ফিরে রোজিনা খাতুন আত্মহত্যার  উদ্দেশ্যে এসিড পান করেন। বাড়ির লোকজন টের পেয়ে তাকে দ্রুত পাবনা জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে যায়। অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। সেখান  থেকে রোজিনা খাতুনকে গত ১৮ জানুয়ারি স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে। সেখান থেকে চিকিৎসকরা তাকে বাড়িতে পাঠান। বাড়িতে আসার পর গত ২৮মার্চ রোজিনা মারা যান।

এমএসি/আরএইচ