কাফনের কাপড় পরে উপাচার্যের পদত্যাগ চাইলেন শাবি শিক্ষার্থীরা

শনিবার ২২ জানুয়ারী ২০২২ ১৭:২৩


নিজস্ব প্রতিনিধি:
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে টানা তিন দিন ধরে আমরণ অনশন করছেন ২৪ জন শিক্ষার্থী। অনশনরত শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জনকে এরই মধ্যে অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের গোলচত্বর থেকে থেকে কাফনের কাপড় পরে মৌন মিছিল বের করেন প্রায় অর্ধশতাধিক শিক্ষার্থী। এ সময় প্রতিকী লাশ কাঁধে নিয়ে সামনে নিয়ে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়ক প্রদক্ষিণ করেন। পরে একই স্থানে এসে প্রতিকী লাশ সামনে রেখে শিক্ষার্থীরা কয়েক মিনিট সেখানে অবস্থান করেন।

এদিকে অনশনকারী শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা ক্রমের খারাপের দিকে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন অনশনস্থলে কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. মো. নাজমুল হাসান। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত অসুস্থ ১৭ জন শিক্ষার্থীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বাকি ছয়জন শিক্ষার্থীকে স্যালাইন দেওয়া হয়েছে।

শিক্ষার্থীরা বলেন, আমরা এক দফা দাবিতে এখানে আন্দোলনে এসেছি। আমরা আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত কর্মসূচি চালিয়ে যাব। আমাদের আন্দোলনের অংশ হিসেবেই আজকের এই মৌন কাফন মিছিল। শিক্ষার্থীরাই স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিছিলে এবং আন্দোলনে অংশ নিচ্ছেন।

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগ দাবিতে গত বুধবার (১৯ জানুয়ারি) বিকেল ৩টা থেকে আমরণ অনশনে বসেছেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যের বাসভবনের সামনে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসেন।

এর আগে গত রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেলে তিন দফা দাবি আদায়ে উপাচার্যকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। পরে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। ওই সময় পুলিশ সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ারশেল ও রাবার বুলেট ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন।

এ ঘটনায় দুইশ থেকে তিনশ অজ্ঞাত শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করে পুলিশ। মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে- আন্দোলনরত দুইশ-তিনশ উচ্ছৃঙ্খল শিক্ষার্থী হঠাৎ কর্তব্যরত পুলিশের ওপর চড়াও হয়। তারা সরকারি আগ্নেয়াস্ত্র ধরে টানাটাানি করে ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। চারদিক থেকে বৃষ্টির মতো ইটপাটকেল নিক্ষেপসহ আগ্নেয়াস্ত্র থেকে গুলি ছোড়ে। এছাড়া পুলিশের ওপর ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ক্যাম্পাসে আতঙ্ক সৃষ্টি করে।

শিক্ষার্থীদের আন্দোলন শুরু হয় বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে। তখন শিক্ষার্থীদের অভিযোগ ছিল, হলে নানা সমস্যা রয়েছে। এসব সমস্যার সমাধান চেয়ে তারা বেগম সিরাজুন্নেসা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্ট সহযোগী অধ্যাপক জাফরিন আহমেদকে কল করেন। প্রভোস্টকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ‘বের হয়ে গেলে যাও, কোথায় যাবে? আমার ঠেকা পড়েনি।’ শিক্ষার্থীরা বিষয়টি জরুরি উল্লেখ করলে তিনি বলেন, ‘কীসের জরুরি? কেউ তো আর মারা যায়নি।’

পরে প্রভোস্টের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন ছাত্রীরা। এরই মধ্যে রোববার (১৬ জানুয়ারি) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন টেকনোলজি (আইআইসিটি) ভবনের সামনে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী আহত হন। তার আগে বিকেলে তিন দফা দাবি মেনে না নেওয়ায় উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদকে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইআইসিটি ভবনে অবরুদ্ধ করেন শিক্ষার্থীরা। উপাচার্যকে পুলিশ উদ্ধার করতে গেলে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ওই সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।

এরপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ শিক্ষার্থীদের হল ত্যাগের নির্দেশ দেয়। তবে ওই নির্দেশনা অমান্য করে আন্দোলন চালিয়ে যান শিক্ষার্থীরা। প্রভোস্টের পদত্যাগের দাবিতে শুরু হওয়া আন্দোলন শেষ পর্যন্ত উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে পরিণত হয়।

এমএসি/আরএইচ