কাতার বিশ্বকাপে প্রযুক্তি'ই ঘটাবে আরও অঘটন

বুধবার ২৩ নভেম্বর ২০২২ ২৩:১৬


স্পোর্টস ডেস্ক:
দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন আর্জেন্টিনাকে ২-১ গোলে হারিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল সৌদি আরব। আর আজ বুধবার (২৩ নভেম্বর) চারবারের চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে একই ব্যবধানে হারাল এশিয়ার আরেক দেশ জাপান। আল রাইয়ানের খলিফা ইন্টারন্যাশনাল স্টেডিয়ামে ই গ্রুপের ম্যাচে দুর্দান্ত জয় দিয়েই বিশ্বকাপ যাত্রা শুরু করল এশিয়ান দলটি।কাগজে কলমে জার্মানি,জাপান থেকে ভালো দল হলেও,র‍্যাঙ্কিংয়ে জাপানের অবস্থান ২৪,আর জার্মানির অবস্থান ১১তে। খেলোয়াড়দের নাম,ধারে-ভারে দুই দলের তুলনা চলে না। সেই জাপানই আজ হারিয়ে দিলো চারবারের চ্যাম্পিয়নকে।
কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলে এবার এসেছে বিপুল পরিবর্তন। ফুটবল থেকে ফুটবলারদের প্রতি মুভমেন্টে কড়া নজর রাখছে ফিফা। এবারের ফুটবল বিশ্বকাপে যা কিছু পরিবর্তন করেছে ফিফা,তা শতভাগ নির্ভেজাল খেলা উপহার দিবে ফুটবল প্রিয়দের। যেমন;-গ্রুপ পর্বে পয়েন্ট সমান হলে বরাবরের মতো বিশ্বকাপের এবারের আসরেও আটটি গ্রুপে ভাগ হয়ে ৩২টি দল অংশ নেবে। প্রতি গ্রুপে রয়েছে চারটি করে দল,যেখানে প্রতি দল খেলবে তিনটি করে ম্যাচ। তিন ম্যাচ শেষে পয়েন্ট টেবিলের সেরা দু’দল পাবে শেষ ষোলোর টিকিট। গ্রুপ পর্বের ম্যাচ শেষে দুই দলের পয়েন্ট সমান থাকলে প্রথমেই দেখা হবে তাদের গোল পার্থক্য। সেখানে এগিয়ে থাকা দল যাবে পরের পর্বে। যদি গোল পার্থক্য সমান হয়,তখন দেখা হবে কোন দল বেশি গোল করেছে। সেখানে এগিয়ে থাকা দল পাবে কোয়ার্টার ফাইনালের টিকিট। যদি এই তিনটি দেখার পরও সমাধান না হয়,তবে হিসেব হবে হেড টু হেড ম্যাচের গোল পার্থক্য। সেটিতেও যদি নিষ্পত্তি না হয়, তাহলে হিসেব করা হবে কার্ডের। যে দল কম কার্ড দেখেছে তারা যাবে পরের পর্বে। কিন্তু তাতেও যদি ফলাফল নিষ্পত্তি না হয় তাহলে শেষ উপায় হিসেবে বিবেচনায় আসবে ফিফার র‍্যাঙ্কিং। যেই দল এগিয়ে থাকবে সেই দল নিশ্চিত করবে শেষ ষোল।

সেমি অটোমেটেড অফসাইডঃ-
আর এদিকে বহুল আলোচিত অফসাইডের বিষয়ে ফিফার নির্দিষ্ট নিয়ম আছে। একদম নির্ভুল সিদ্ধান্তের জন্য কাতার বিশ্বকাপে প্রযুক্তির সহায়তায় অফসাইড নির্ধারণ করার ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ২০১৮ বিশ্বকাপে ভিএআর প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছিল। এবারে কাতার বিশ্বকাপে আরও উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করেছে ফিফা। এবারের আসরে অফসাইডের জন্য রাখা হয়েছে সেমি অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি।

ক্যামেরাঃ- প্রতিটি স্টেডিয়ামের ছাদের নিচের অংশে ১২টি ট্র্যাকিং ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। কোন অফসাইড হলেই ভিডিও ম্যাচ অফিশিয়ালদের কাছে অফসাইড সংকেত চলে যাবে।

বদলি খেলোয়াড়ঃ- খেলোয়াড় পরিবর্তনগত বিশ্বকাপেও বদলি খেলোয়াড় হিসেবে তিনজন ফুটবলারকে নামাতে পারতো দল। করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে সেটি বাড়িয়ে পাঁচজন করে ফিফা। এখন করোনার প্রকোপ কমে গেলেও বদলি হিসেবে পাঁচজনের নিয়ম বহাল আছে। তবে কিছুটা পরিবর্তন এসেছে সেই নিয়মে। এবারের বিশ্বকাপে পাঁচ জন ফুটবলার পরিবর্তন করা গেলেও সেটি করতে হবে তিন বারের মধ্যে। বিরতির সময় বাদ দিয়ে তিন বারের মধ্যে পাঁচ জন ফুটবলার পরিবর্তন করা যাবে। এটি খেলোয়াড়কে সতেজ রাখতে এবং কোচকে কৌশল পরিবর্তন করতেও সাহায্য করবে। একইসঙ্গে আরও একটি পরিবর্তন আসছে খেলোয়াড় বদলের ক্ষেত্রে। পেনাল্টি শুটআউটের আগে মূল একাদশে পরিবর্তন বা গোলকিপারে পরিবর্তন করা যাবে এবারের বিশ্বকাপ থেকে।

পেনাল্টি কিকঃ- পেনাল্টির সময় লাইনে পা রাখতে হবে গোলকিপারকে ইউরোপের অনেক লিগে এই নিয়ম চালু আছে। বিশ্বকাপে এই নিয়ম চালু না থাকলেও এবারের আসর থেকে সে পথে যাচ্ছে ফিফা। পেনাল্টি কিকের আগে গোলকিপারের একটি পা অবশ্যই লাইনে থাকতে হবে।

বেঞ্চের তালিকাঃ- ম্যাচ চলাকালীন বেঞ্চের তালিকা বিশ্বকাপের স্কোয়াডে ন্যুনতম ২৩ থেকে সর্বোচ্চ ২৬ জন ফুটবলার রাখার নিয়ম। ম্যাচ চলাকালীন বেঞ্চে কোচিং স্টাফ,সাপোর্ট স্টাফ,বদলি খেলওয়াড় সহ ২৬ জনের বেশি বসতে পারবেন না এবারের বিশ্বকাপে। ১৫ জন বদলি ফুটবলার এবং ১১ কর্মকর্তাদের মধ্যে একজনকে অবশ্যই দলের চিকিৎসক হতে হবে।

নারী রেফারিঃ- নারী রেফারি প্রথমবারের মতো পুরুষ ফুটবল বিশ্বকাপে নারী রেফারিদের দেখা যাবে কাতারে। বছরের পর বছর এর উল্টোটা দেখা গেছে বিশ্ব ফুটবলে। নারীদের ফুটবলে পুরুষ রেফারি ছিল। এবার পুরুষ বিশ্বকাপে থাকছেন ৬ নারী রেফারি।

সেন্সরঃ- অফসাইড ধরতে এবারই প্রথম সেমি অটোমেটেড প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে। বিশ্বকাপের বলগুলোর ভেতরে লাগানো থাকবে এক ধরনের সেন্সর। এরমধ্যে রেফারির খেলোয়াড়দের স্পর্শের সঙ্গে বিচার করে বলের পজিশন যাচাই করতে পারবেন। ফিফার কয়েকটি টুর্নামেন্টে এই প্রযুক্তি প্রয়োগ করে দেখা হয়েছে। ২০২১ সালের ফিফা আরব কাপ ও ফিফা বিশ্ব ক্লাব কাপ ফুটবলে এটি পরীক্ষিত হয়। ভিএআর’কে আরও দ্রুত গতির করার পদ্ধতিকে সেমি-অটোমেটেড অফসাইড প্রযুক্তি বলা চলে। এটাকে ভিডিও ম্যাচ রেফারিও বলা যায়। এর মাধ্যমে ভিডিও অপারেশন রুম অফসাইড হলে অটোমেটিক একটি সিগনাল পাবে। প্রযুক্তি অটোমেটিক অফসাইড লাইন এঁকে দেবে। এমনকি ফাউল,অফ সাইড বা হ্যান্ডবলের ক্ষেত্রে ‘কিক স্পট’ চিহ্নিত করে দেওয়া হবে। এখন ভিএআর চেক করা হয় সম্প্রচার স্বত্ত্ব পাওয়া প্রতিষ্ঠানের ক্যামেরার মাধ্যমে। সেমিঅটো অফসাইড প্রযুক্তির জন্য স্টেডিয়ামে বেসপোক ক্যামেরা বসানো হবে। যে ক্যামেরা মাঠে থাকা ২২ খেলোয়াড়ের একদম সঠিক অবস্থান জানান দেবে। এমনকি তাদের পা,হাতের আঙুল,মাথার অবস্থান সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য দেবে। এছাড়া কাতার বিশ্বকাপের অফিসিয়াল বল ‘আল রিহলা’তে থাকবে সেন্সর। যা প্রতি সেকেন্ডে ৫০০ সেন্সর পাঠাবে। যার মাধ্যমে বলে পাস দেওয়ার সময় খেলোয়াড় অফসাইড কিনা তার সঠিক তথ্য পাওয়া যাবে।

দর্শক অফসাইড বুঝবে যেভাবে;- ভিএ আগের মতোই বিষয় থাকবে। গোল লাইনের মতো এনিমেশন করে ফুটবলারের অবস্থান,শট নেওয়ার সময় ও লাইন দেখানো হবে। তবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় অ্যাকশন রিপ্লে করা হবে না। বরং রেফারিকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়ার পরে দেখানো হবে।
পূর্বের মতোই সহকারী রেফারি বা লাইন্স ম্যান থাকবেন। সেমি-অটো প্রযুক্তি ভিএআর রুমকে প্রতিটি অফসাইডের সিগনাল দেবে। কিন্তু গোল, পেনাল্টি বা কার্ডজনিত ব্যাপার কিংবা রেফারি ম্যাচের জন্য গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত মনে না করলে ভিডিও রুম রেফারিকে জানাবে না। দৃশ্যমান অফসাইডের ক্ষেত্রে রেফারি ফ্লাগ উঠাবেন এবং সেক্ষেত্রে ভিডিও রুমের সহায়তা নেওয়া হবে না। ফিফার কর্মকর্তা আর্সেন ওয়েঙ্গারের চাওয়া, প্রত্যেকটি অফসাইডের সিদ্ধান্ত অটোমেটিক হোক। অর্থাৎ প্রযুক্তির সাহায্যে লাইন্স ম্যানকে ভিএআর রুম প্রতিটি অফসাইডের অ্যালার্ট দেবে এবং অফসাইড ধরা হবে। কিন্তু প্রযুক্তি তো ভুলের বাইরে নয়! প্রযুক্তি একটা সেট করা নিয়মে চলে। আইনের মধ্যের ‘কিন্তু’ বোঝে না। বিবেচনা বোঝে না। যেমন;- কোন খেলোয়াড় লাইনের বাইরে থাকতে পারেন। কিন্তু বল ধরার ক্ষেত্রে বা গোল করায় তার অংশগ্রহণ ছিল না। নিয়ম অনুযায়ী,যা অফসাইড না। প্রযুক্তি তা বুঝবে না। বরং খেলোয়াড় লাইনের বাইরে গেলেই সিগনাল দেবে। যেটা গতির খেলাকে বিরক্তিকর করে তুলবে।

এমএসি/আরএইচ