ঐতিহ্যবাহী খেজুরের রস এখন বিলুপ্তপ্রায়

সোমবার ৩১ জানুয়ারী ২০২২ ১২:২৭


রাহাত হোসেন, শিবচর:

একদিকে গাছির সংকট; অন্যদিকে খেজুর গাছ ব্যবহার হচ্ছে ইটভাটার জ্বালানি হিসেবে। এ কারণে দাকোপ থেকে হারিয়ে যেতে বসেছে খেজুরের রস। বর্তমান প্রজন্ম ভুলতে বসেছে এ রসের স্বাদ।

এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, ৯০ এর দশকের শুরু থেকে দাকোপ থেকে খেজুর গাছ বিলুপ্ত হওয়া শুরু হয়। ফলে খেজুর গাছ থেকে রস বের করা বেশিরভাগ গাছি গাছ কাটা মৌসুমে কাজ না পেয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। যেসব গাছ অবশিষ্ট আছে সেগুলো এখন পড়ে রয়েছে গাছির অভাবে।

এখন আগের মতো চোখে পড়েনা সারিবদ্ধভাবে ভেড়িবাঁধের ওপর, জমির আইলের ওপর ও বাড়ির আঙিনায় দাঁড়িয়ে থাকা সারি সারি খেজুর গাছ। দেখা যায় না শীতের কুয়াশাভেজা সকালে যুবক, বৃদ্ধ, ছোট ছেলে মেয়েদের খেজুরের রস খেতে। পাওয়া যায় না মাটির কলস ভরা খেজুরের রসের ঘ্রাণ।

সরেজমিনে উপজেলার সন্যাসীরচর, বন্দরখোলা, ভদ্রাসন, কাঠালবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা গেছে, এসব এলাকায় খেজুর গাছের সংখ্যা তুলনা মূলক কম। যা আছে তার বেশিরভাগ পড়ে আছে চরম অবহেলায়। অল্প কিছু সংখ্যক খেজুর গাছ কাটা হয়েছে। অনেকে বলছেন আগে শীত এলে গ্রামে গ্রামে খেজুরের রসে ভিজানো পিঠা খাওয়ার যে ধুম পড়ত তা এখন খুব কম চোখে পড়ে।

খেজুর গাছ চলে যাচ্ছে বিভিন্ন ইট তৈরির ভাটায়। সেখানে খেজুর গাছ পুড়িয়ে তৈরি করা হচ্ছে ইট। এ ছাড়া খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় এই গাছ কাটার কাজে নিয়োজিত গাছিরা চলে যাচ্ছে অন্য পেশায়। এ অবস্থা চলতে থাকলে অচিরেই গ্রাম বাংলা থেকে হারিয়ে যাবে এই খেজুরের রস।

কুতুবপুর এলাকার মাসুদুর রহমান বলেন, আগে পতিত জমি ছিল। সেখানে অবহেলা অযত্নে খেজুর গাছ জন্মাত। গ্রামীণ রাস্তার পাশেও সারিবদ্ধভাবে খেজুরগাছ দেখা যেত। সেসব গাছ পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতো। ওই খেজুর গাছ থেকে বাংলার নবান্ন উৎসবের জন্য গাছিরা খেজুর রস আহরণ করতো। এখন আর তেমন গাছ দেখা যায় না। অন্তত পরিবেশের ভারাসাম্য রক্ষায় রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিটি সড়কের পাশে খেজুরগাছ লাগানো উচিত।

কথা হয় কাদিরপুর এলাকার গাছি আজগর সরদারের সঙ্গে। তিনি জানান, এখন এলাকায় খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। যা দুই একটা আছে তা নিজেদের পরিবারের মানুষের জন্য কাটছি। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে যদি বেশি থাকে তা বিক্রি করি। প্রতি কলস রস ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হয়।

রাজারচর এলাকার গাছি মিন্টু মিয়া জানান, আগে শীতকালে শত শত গাছ কেটেছি। অনেক রস পেতাম। রস বাজারে বিক্রি করতাম। রস দিয়ে গুড় বানাতাম। গুড় বাজারে বিক্রি করতাম। শীতের মৌসুমে বেশ টাকা আয় করতাম। পরিবার পরিজন নিয়ে ভালোই দিন কাটত। কিন্তু বর্তমানে এলাকায় খেজুর গাছ নেই বললেই চলে। এখন গাছ যা আছে তা মালিকেরা নিজেদের জন্য কাটাচ্ছে। ফলে এই পেশায় নিয়োজিত মানুষ দিন দিন কাজ হারাচ্ছে। তারা অন্য পেশায় চলে যাচ্ছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা অনুপম রায় বলেন, শীত মৌসুমের শুরুতেই আমরা গাছিদের রস সংগ্রহের জন্য বিভিন্ন পরামার্শ দিয়ে যাচ্ছি। দাকোপে খেজুর গাছের সংখ্যা দিন দিন হ্রাস পাচ্ছে। খেজুর গাছ কমে যাওয়ার কারণে গাছ কেটে যারা রস বের করত সেই গাছিরা অন্য পেশায় চলে যেতে শুরু করেছে।

এমএসি/আরএইচ