এলাকাবাসীর 'দুঃখ' এখন মানিকগঞ্জের নদী

সোমবার ২১ মার্চ ২০২২ ২০:৪৫


:: মোঃ আরিফুর রহমান অরি, মানিকগঞ্জ  প্রতিনিধি ::
 
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া কোল ঘেষে বয়ে যাওয়া গাজীখালি নদীতে নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে শত শত কোটি টাকা ব্যয় করা হলেও এর সুফল পাচ্ছে না এলাকাবাসী। অব্যাহত দূষণ এর কবলে এক সময়ের আশীর্বাদস্বরূপ এসব নদী এখন এলাকাবাসীর 'দুঃখ' হয়ে উঠেছে।
 
মানিকগঞ্জের নয়াডিঙ্গীতে অবস্থিত তারাসিমা রাইজিং এর অপরিশোধিত বজ্র  এবং নদীর পাশেই রয়েছে ধামরাই এর ইনসেপ্টা ,আকিজ ফুড এন্ড বেভারেজ ¸বেইজ পেপারস মিল, গ্রাফিক্সা টেক্সটাইল মিল, পাল পেপার বোর্ড মিলসহ কয়েকটি শিল্পকারখানা। এসব কারখানার বর্জ্য সরাসরি গাজীখালি নদীতে গিয়ে পড়ছে।
 
অভিযোগ রয়েছে, এসব কারখানায় ইটিপি থাকলেও ব্যবহার করা হয় না। এর ফলেই গাজীখালি ভয়াবহ দূষণের কবলে পড়েছে।গাজীখালি নদীর বিষাক্ত পানি মিলিত হয়ে দূষিত হচ্ছে ধামরাইয়ের ধলেশ্বরী নদীর পানিও। বিষাক্ত পানির দুর্গন্ধে নদীতীরের মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণের স্বাভাবিক চলাচলও ব্যাহত হচ্ছে।
 
এলাকাবাসী জানান, বাপ-দাদার আমল থেকেই গাজীখালি নদীতে প্রচুর মাছ পাওয়া যেত। বহু পরিবার নদীকে কেন্দ্র করেই জীবিকা নির্বাহ করতো। কিন্ত কোম্পানির বর্জ্যের কারণে নদীজুড়ে এখন নোংরা পানি। পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা শূন্যের কোঠায় ঠেকেছে। তাই এই পানিতে এখন কোনো জলজ প্রাণীর পক্ষে বেঁচে থাকা অসম্ভব। কচুরিপানাও কয়েকদিনেই মরে যায়। মাছ একেবারেই নেই। এসব পানি গায়ে লাগলে খোস-পাঁচড়া হয়ে যায়।শিল্পকারখানার বর্জ্যে এই নদীর পানির এমন দশাই হয়েছে যে, মাছ তো দূরের কথা সাপ, ব্যাঙ, কীটপতঙ্গসহ জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হয়ে গেছে।
 
শিল্পকারখানার বর্জ্যের দুর্গন্ধে গ্রামের ভেতর দিয়ে প্রবাহিত গাজীখালি নদীর দু'পাশের বসবাসকারীরা নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এসব নদীর পানি কেউ ব্যবহার করতে পারছে না।
 
ঢাকা জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের এর সূএ থেকে জানা যায় ¸ইটিপি ব্যবহার না করে শিল্পকারখানার বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলার কারণে মাঝেমধ্যে পরিবেশ অধিদপ্তর অভিযান চালিয়ে কারখানা মালিকদের জরিমানা করলেও তাদের থামানো যাচ্ছে না। এতে শিল্পকারখানার বিষাক্ত বর্জ্যে গাজীখালি নদীই এখন এলাকার কৃষি পরিবেশ ও জীববৈচিত্র্যের জন্য হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।
 
নদী দূষণ বিষয়ে জানতে চাইলে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কাদের মোল্লা এবিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে অপারগতা প্রকাশ করে ড্রেন তৈরিকারী কোম্পানী ইনসেপটার সাথে যোগাযোগ বলেন।
 
ইনসেপটা ফার্মার ধামরাই প্রজেক্টে বারবার ফোন করা হলেও দায়িত্বশীল কারও বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
 
তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রতিষ্ঠানটির এক কর্মকর্তা জানান, জন্মনিয়ন্ত্রণ পিল এবং বাচ্চাদের ডায়াপার প্রজেক্টের বর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে। তিনি বলেন, স্থানীয় লোকজনকে 'ম্যানেজ করেই' প্রজেক্ট করা হয়েছে। এর সঙ্গে অনেকেই জড়িত আছেন।
 
পরিবেশ আইন অনুযায়ী, পরিশোধন ছাড়াই নদীতে বর্জ্য ফেলা নিষিদ্ধ হলেও তরল বর্জ্য বিভিন্ন নদ-নদী, খাল-বিল ও উন্মুক্ত জলাশয়ে ছেড়ে দেয়ায় নদীর পানি যেমন দূষিত হচ্ছে। খাল-বিল ও জলাশয় পরিণত হয়েছে বিষের খনিতে।
 

এমএসি/আরএইচ