আর্থিক সঙ্কটে হবিগঞ্জে বন্ধ হয়ে যেতে পারে শতাধিক বেসরকারি স্কুল

রবিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১৮:২৭


:: শেখ আব্দুল হাকিম, হবিগঞ্জ ::
 
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুললেও শিক্ষার্থী ও আর্থিক সঙ্কটে হবিগঞ্জে বন্ধ হয়ে যেতে পারে শতাধিক বেসরকারি স্কুল। এরই মধ্যে অন্তত ৩০টি স্কুল একেবারেই বন্ধ হয়ে গেছে। কোথাও প্রতিষ্ঠা পেয়েছে মাদরাসা। আবার কোথাও ঘিরে রয়েছে ঝোপঝাড়ে। অনলাইন ক্লাসে শিক্ষার্থীদের সাড়া না পাওয়া, শিক্ষার্থীদের অধিকাংশ সরকারি স্কুলে চলে যাওয়া, শিক্ষকদের বেতন দিতে না পারা, বাড়িভাড়া মেটাতে না পারাসহ বেশ কয়েকটি করণে স্কুল বন্ধ হওয়ার উপক্রম দেখা দিয়েছে।
 
জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, জেলায় মোট ৪৩৩টি কিন্ডারগার্টেন স্কুল রয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় ১২২টি, বাহুবলে ৩৯টি, লাখাইয়ে ১১টি, আজমিরীগঞ্জে আটটি, শায়েস্তাগঞ্জে ২৪টি, মাধবপুরে ৬৭টি, নবীগঞ্জে ৬৩টি, বানিয়াচংয়ে ২৭টি এবং চুনারুঘাটে ৭২টি বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে বেশ কিছু বিদ্যালয় বন্ধ হয়ে গেছে। তবে কতগুলো বন্ধ হয়েছে তার সঠিক হিসাব পাওয়া যাবে যখন তারা নতুন বছরে বই নিতে আসবে।
 
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গত বছর করোনা শুরু হওয়ার পর থেকেই শহরের নিউ মুসলিম কোয়ার্টার এলাকায় প্রতিষ্ঠিত ম্যাক কিন্ডারগার্টেন বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ স্থানে এখন ভাড়া দেওয়া হয়েছে একটি হাফিজিয়া মাদরাসাকে। মুসলিম কোয়ার্টার এলাকায় নিয়াস মডেল স্কুলে তালা ঝুলছে। ভেতরে ঝোপঝাড় তৈরি হয়েছে। ভেঙে যাচ্ছে জানালাগুলো। এটিও দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ রয়েছে।
 
ম্যাক কিন্ডারগার্টেনের প্রতিষ্ঠাতা সাদত হোসেন বলেন, করোনা আসার পর থেকেই আমার প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। এখন শিক্ষার্থী আসে না। ভাড়া মেটানো, শিক্ষকদের বেতন দেওয়া সর্বোপরি অর্থনৈতিক সঙ্কটের কারণেই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ হচ্ছে।
 
এ বিষয়ে জেলা কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ নূর উদ্দিন জাহাঙ্গীর বলেন, প্রাইভেট স্কুল চালাতে অর্থনৈতিক বিষয় জড়িত থাকে। এ ক্ষেত্রে গত দেড় বছর বন্ধ থাকা মানে দুটি বছর বন্ধ থাকা। এ সময়ে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আয় একেবারে বন্ধ ছিল। কিন্তু খরচ থেমে নেই। প্রায় সবাই বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্কুল পরিচালনা করেন।
 
তিনি আরও বলেন, করোনাকালে তারা অনেকেই হয়তো স্কুল খোলার পর ভাড়া পরিশোধ করবেন বলে মালিককে জানিয়েছিলেন। কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখন শিক্ষার্থী পাওয়া যাচ্ছে না। এ অবস্থায় অর্থনৈতিক সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে। কর্তৃপক্ষ শিক্ষকদের বেতন দিতে পারছে না। ফলে এ বছর অন্তত ১০০ স্কুল জেলায় বন্ধ হওয়ার আশংকা রয়েছে।
 
অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি সাইনিং স্টার কেজি অ্যান্ড হাইস্কুলের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ এবাদুল হাসান বলেন, স্কুল খোলার পর দেখা যাচ্ছে অবস্থা অত্যন্ত করুণ। শিক্ষার্থী আসছে না। বছরের শেষ সময় বলেই এ সমস্যা দেখা দিচ্ছে। তবে আশা করা যাচ্ছে নতুন বছরে কিছু শিক্ষার্থী পাওয়া যাবে।
 
তিনি আরও বলেন, অনেক শিক্ষার্থী সরকারি স্কুলে চলে গেছে। অনেকে আবার বছরের শেষ সময় এসে টাকা দেওয়ার ভয়ে স্কুলে পাঠাতে চাচ্ছেন না। এ অবস্থায় প্রাইভেট স্কুলগুলোকে টিকে থাকা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমার যেখানে দুই বছরে ৪ লাখ আয় হওয়ার কথা সেখানে ক্ষতি হয়েছে ৫ লাখ টাকা।
 

এমএসি/আরএইচ