আজমিরীগঞ্জে ‘শিলং তীর’ জুয়া খেলায় নিঃস্ব পাঁচশ'র বেশি পরিবার

মঙ্গলবার ৩১ আগস্ট ২০২১ ১৬:২১


:: হবিগঞ্জ প্রতিনিধি ::
 
হবিগঞ্জের আজমিরীগঞ্জ উপজেলায় ‘শিলং তীর’ নামের জুয়া খেলায় নিঃস্ব পাঁচশ'র বেশি পরিবার। আজমিরীগঞ্জ পৌরসভায় ৩টি সিন্ডিকেট এই জুয়া খেলা নিয়ন্ত্রণ করছে। এই সিন্ডিকেটের হয়ে অন্তত ৩০ জন সেল্সম্যান সক্রিয় রয়েছে। এ ছাড়া উপজেলার বাইরে বিভিন্ন ইউনিয়ন ও গ্রামে রয়েছে অন্তত ৭ থেকে ৮টি সিন্ডিকেট। হেরে যাওয়া জুয়াড়িদের কাছ থেকে আদায় করা টাকা হুন্ডির মাধ্যমে পাঠানো হচ্ছে ভারতে।
 
স্থানীয় প্রশাসন শিলং তীর জুয়ার ভয়াবহতা জানলেও কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ার অভিযোগ করছেন স্থানীয়রা। তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করছে প্রশাসন। প্রশাসন বলছে শিলং তীরের বিরুদ্ধে আজমিরীগঞ্জে জিরো টলারেন্স ঘোষণা করা হয়েছে।
 
আজমিরীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নূরুল ইসলাম বলেন, ‘সম্প্রতি আবারও শিলং তীর খেলা শুরু হয়েছে বলে আমাদের কাছে খবর এসেছে। তবে এ ব্যাপারে আমরা তৎপর রয়েছি। আমাদের বিভিন্ন বিটের কর্মকর্তাদের এ ব্যাপারে কঠোর নজর রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত এমন কোনো তালিকা তৈরি করা হয়নি। তবে আমরা তাদের তালিকা তৈরি করে ব্যবস্থা নেব।’
 
আজমেরীগঞ্জ উপজেলায় বাজারের চালের ব্যবসা করতেন গোপাল রায়। পুরো বাজারে ব্যবসার দাপট ছিল। চালের ব্যবসা করে বাড়ি ও জমিজমা কিনেছেন তিনি। কিন্তু হঠাৎ করেই গোপাল রায় জড়িয়ে পড়েন ভারতের শিলং নিয়ন্ত্রিত ‘তীর’ জুয়া খেলায়। ‘তীর’ খেলার ফাঁদে পরে ধীরে ধীরে ব্যবসা লাটে উঠেছে। হয়েছেন নিঃস্ব। এখন তিনি ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়েছেন। ঋণের চাপে কোটি টাকা মূল্যের জমি, বাড়ি ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বিক্রি করে পরিবার নিয়ে দেশ ছাড়েন।
 
শুধু গোপেশ রায় নন। ‘শিলং তীর’ এর ফাঁদে পরে নিঃস্ব হয়েছে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার পাঁচ শতাধিক পরিবার। এই খেলায় মজে জমিজমা বিক্রি করে এখন তাঁরা নিঃস্ব। এলাকা ছেড়েছে অন্তত শতাধিক পরিবার।
 
অনুসন্ধানে জানা যায়, ‘তীর’ খেলা মূলত ভারতের শিলং থেকে পরিচালিত হয়। সেখানকার ক্লাবের মধ্যস্বত্বভোগীরা বাংলাদেশে এজেন্ট নিয়োগ দেয়। বাংলাদেশি এজেন্টরা আবার বিভিন্ন এলাকায় তাদের সেলসম্যান নিয়োগ করে। এই সেলসম্যানদের মাধ্যমে সাধারণ মানুষকে বিভিন্ন ধরনের লোভ দিয়ে শিলং তীরে আসক্ত করে।
 
এ খেলার জন্য ভারতের শিলংভিত্তিক ওয়েবসাইটে ১ থেকে ৯৯ পর্যন্ত নম্বরগুলো বিক্রি করা হয়ে থাকে। এই নম্বরগুলো যাঁরা কেনেন তাদের সঙ্গে সেলসম্যানরা (স্থানীয় ভাষায় মুহরী) যোগাযোগ করেন। তখন জুয়াড়িরা সেলসম্যানের কাছে নম্বর ও বিভিন্ন অঙ্কের টাকা দেন। সেলসম্যানরা বিক্রীত এই নম্বরের বিপরীতে টাকা এজেন্টের কাছে পাঠিয়ে দেন।
 
ভারতের শিলংয়ে শনি ও রোববার ব্যতীত সপ্তাহের পাঁচ দিন বিকেলে এই জুয়া খেলার প্রথম রাউন্ড ও দ্বিতীয় রাউন্ড নামে দুটি ড্র অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১ থেকে ৯৯ এর মধ্যে একটি নম্বর বিজয়ী হয়। বিজয়ীরা নম্বরের ক্রয়মূল্যের ৭০ গুণ টাকা এজেন্টের মাধ্যমে পেয়ে থাকেন। কিন্তু বেশির ভাগ জুয়াড়ি বিজয়ী হতে না পেরে তাদের পুঁজি হারিয়ে ফেলেন।
 
সিলেটের সীমান্তবর্তী ভারতের শিলং ও গুয়াহাটি এলাকায় ১৯৯০ সালে চালু হয় ‘শিলং তীর’ নামের এই জুয়া খেলা। পরবর্তীতে অনলাইনের মাধ্যমে এটি সিলেটে বিস্তার লাভ করে।
 
 ২০১৪ সালে আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামের কিছু যুবক সিলেটের জাফলং পাথর খোয়ারিতে কাজে যান। সেখান থেকেই তারা এই খেলা রপ্ত করেন।
 

এমএসি/আরএইচ