অবৈধ স্থাপনায় হাজারো প্রজাতির পাখির বিলুপ্তি

বুধবার ৯ ফেব্রুয়ারি ২০২২ ১৩:৩৩


:: তিমির বনিক, মৌলভীবাজার জেলা প্রতিনিধি ::
 
মৌলভীবাজারের বাইক্কা বিলে শীতকালীন জলচর পাখি শুমারি সম্পন্ন হয়েছে। এবার ৩৪ প্রজাতির তিন হাজার ২৩০টি জলচর পাখির দেখা মিলেছে। তবে গতবারের তুলনায় কমেছে অতিথি পাখির সংখ্যা। গত বছর শুমারিতে ৩৯ প্রজাতির সাড়ে ১১ হাজার জলচর পাখির দেখা মিললেও এবার তা কমে ৩৪ প্রজাতির তিন হাজার ২৩০টিতে নেমে এসেছে।
 
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ও পাখি বিশেষজ্ঞ ইনাম আল হক এসব তথ্য জানিয়ে নিশ্চিত করেছেন। ৩৪টি প্রজাতির তিন হাজার ২৩০টি জলচর পাখির মধ্যে অন্যতম ছিল ৯০০টি গেওয়ালা-বাটান, ৪৫২টি বেগুনি-কালেম ও ২৫০টি খয়রা-কাস্তেচরা। পরিযায়ী বুনোহাঁসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা গেছে, লালমাথা-ভুতিহাঁস ৭৩৩২টি, এরপর দেখা গেছে মরচেরঙ-ভুতিহাঁস ৭২০৫টি।
 
পাখি শুমারিতে অংশ নিয়েছিলেন- বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক, ড. পল থমসন, তারেক অণু, আইইউসিএন বাংলাদেশের সীমান্ত দীপু এবং জেনিফার আজমেরি।
 
পাখি গণনায় (দুয়ারী) সময় বন্যপ্রাণী প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা মো. রেজাউল করিম চৌধুরী, ডিএফও মিজানুর রহমান এবং এডিসি (রেভিনিউ) মেহেদি হাসান উপস্থিত ছিলেন।
 
এ সময় বাইক্কা বিলের সংরক্ষণের ওপরে ইতোমধ্যে গৃহীত বেশ কিছু পদক্ষেপ এবং সেই সঙ্গে সংরক্ষণকে আরও কার্যকরী করতে একাধিক নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়ে আলোচনা হয়।
 
আলোচনায় উঠে এসেছে, গত এক বছরে বাইক্কা বিলে কমেছে পাঁচ প্রজাতির অতিথি পাখি। বিলের আশপাশে অবৈধভাবে গড়ে উঠা জনবসতির কারণে কমেছে পাখির আনাগোনা।
 
২০০৩ সালে ১০০ একর জলাভূমির বাইক্কা বিলকে মাছের অভয়াশ্রম ঘোষণার পর থেকে এর দেখভাল করছে বড়গাঙিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটি। আগের চেয়ে পাখি কমে যাওয়ার কারণ কী তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন তারা। জেলেপল্লির বাসিন্দাদের জনবসতি ও অবাধ চলাচলের কারণে বিলে পাখির বিচরণ কমেছে বলে তাদের দাবি।
 
তবে অবৈধ বসতি গড়ে তোলা জেলেপল্লির বাসিন্দারা বলছেন, এখানে আমরা দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছি। সরকারিভাবে সহযোগিতা করে আমাদের অন্যত্র সরিয়ে দিলে আপত্তি নেই। এতে আয়-রোজগারের পথ তৈরি হবে। একটা ব্যবস্থা হলে আমরাও অন্যত্র যেতে চাই। বাইক্কা বিলে দেখভালের দায়িত্বে নিয়োজিত যারা আছেন, তারা আমাদের চলাচলে নানাভাবে বাধা দেন।
 
বড় বড়গাঙিনা সম্পদ ব্যবস্থাপনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক মিন্নত আলী বলেন, পানির ওপর শাপলা শালুক ও জঙ্গল না থাকায় পাখিগুলো নিরাপত্তার অভাব মনে করে। পাশাপাশি বাইক্কা বিল সংলগ্ন অবৈধ জনবসতি থাকায় বিলের ওপর দিয়ে পাখি আসা-যাওয়া করে। এটা পাখির জন্য বিরক্তিকর। ফলে এবার বিলে তুলনামূলক পাখি কম এসেছে।
 
মৌলভীবাজার জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, আমরা মৎস্য বিভাগ থেকে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছি। যাতে বাইরে থেকে কোনও লোকজন নৌকা নিয়ে ভেতরে যেতে না পারে। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, মাছের অভয়াশ্রম ও বাইক্কা বিলের স্বার্থে জেলেপল্লির বাসিন্দাদের দ্রুত সময়ের মধ্যে অন্যত্র সরিয়ে নেবো। ভূমিহীনদের ঘর নির্মাণ করে দেবো, সেখানে তাদের স্থানান্তর করা হবে।
 
সচেতন মহলের দাবি, বিলের আয়তন বাড়ানো, অগভীর স্থান খনন, নিরাপত্তাবেষ্টনী তৈরিসহ বেশ কিছু পদক্ষেপ নিলে বাইক্কা বিল আবারও অতিথি পাখির কলতানে মুখরিত হবে। বছর বছর বাড়বে পাখির আগমন।
 

এমএসি/আরএইচ