অপার সম্ভাবনাময় রৌমারী ও রাজিবপুর

বৃহস্পতিবার ২৫ মে ২০২৩ ১৬:০০


জাকির হোসেন:
মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের মুক্তাঞ্চল কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর। ভৌগলিকভাবে প্রমক্তা ব্রহ্মপুত্র নদ দ্বারা বিচ্ছিন্ন এ দুটি উপজেলা পূর্ব ও উত্তর দিকে ভারত সীমান্ত বহুমুখী কারণে দেশের অন্যান্য উপজেলা থেকে অনেক পিছিয়ে পড়া জনপদ এটি। নদী বেষ্টিত দু'টি উপজেলার যোগাযোগ ব্যবস্থা এবং অর্থনৈতিক অবস্থা দেশের আর উপজেলা থেকে আলাদা। বিবিসি রিপোর্ট অনুযায়ী রাজিবপুর দেশের সবচেয়ে দরিদ্রতম উপজেলা কিন্তু বাস্তব চিত্র হচ্ছে এই উপজেলা দুটি অপার সম্ভাবনাময়।
যোগাযোগ ব্যবস্থার উপর বর্তমান সরকার খুবই জোড় দিচ্ছে। জেলা সদরের সাথে যোগাযোগের ব্যবস্থা করলে মানুষের দুর্ভোগ অনেক কমে যাবে। এ জন্য প্রয়োজন ব্রহ্মপুত্র নদের ওপর একটি সেতু যা এ অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। রৌমারী থেকে রাজিবপুর হয়ে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জ পর্যন্ত রেললাইন চালু করলে মানুষ খুব সহজেই রাজধানীর সাথে সম্পৃক্ত হতে পারবে। বর্তমান সরকারের একটু সুদৃষ্টি থাকলেই তা সম্ভব হবে। ব্রহ্মপুত্র নদের মাঝে অসংখ্য দ্বীপচর রয়েছে এই চরাঞ্চলের সাথে উপজেলা সদরের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতি করা এখন সময়ের দাবি। এই অঞ্চলের মানুষ কৃষি নির্ভর। কৃষিভিত্তিক কৃষি পণ্য সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে না। দ্বীপ চরগুলোতে ব্যাপক পরিমাণ ধান,গম,ভুট্টা,চিনা বাদাম,পিঁয়াজ,মসুর,মরিচ,সরিষা ও ডাল জাতীয় শসা উৎপন্ন হয় যা স্থানীয় প্রয়োজন মিটিয়েও দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হয়। কৃষি পণ্যের যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে কৃষকেরা তাদের ন্যায্য মূল্য পাবে এবং জাতীয় অর্থনীতিতে সম্পৃক্ত হওয়া সম্ভব।
সরকারি ব্যবস্থাপনায় দ্বীপচর গুলোতে ডেইরি ফার্ম স্থাপন করে কৃষকদের স্বাবলম্বী করা সম্ভব। চরের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে গরু,মহিষ, ছাগল,ভেড়ার ফার্ম করে দেশের দুগ্ধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। আর এজন্য সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার প্রয়োজন। বিভিন্ন বেসরকারি সংস্থা এ সকল দ্বীপচরের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের জন্য কাজ করলে ও বাস্তবে এর চিত্র ভিন্ন। চরাঞ্চলের উন্নয়নের নামে দাতাদের কোটি কোটি টাকা জলে যাচ্ছে। স্থায়ী কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। বিভিন্ন এনজিওদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে এ জনপদ এর কপালে দারিদ্র্যের তীলক লেগে আছে। বাস্তবে অপর সম্ভাবনাময় এ অঞ্চলে রয়েছে কর্মঠ জনশক্তি, রয়েছে খামার স্থাপনের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা আর দৃঢ় মনোবল। একটু সুযোগ পেলেই এ অঞ্চল হয়ে উঠবে বিশাল অর্থনৈতিক অঞ্চল। শুধু দরকার সরকারের সহযোগিতা আর সঠিক তদারকি। ব্রহ্মপুত্র নদের বিশাল বালিরাশিতে রয়েছে মূল্যবান খনিজ পদার্থ। এক গবেষণায় দেখা গেছে এখানকার বালি অতি উৎকৃষ্ট। এতে মহামূল্যবান জিরকোনিয়াম,এন্টিমনি ট্যাংস্টোন এর মত উপাদান বিদ্যমান। এ  বাংলা বিভিন্ন শিল্পের কাঁচামাল ও কন্ট্রাকশনের কাজে ব্যবহার করার অপার সম্ভাবনা রয়েছে। দ্বীপচরের কৃষি পণ্য ,ডেইরি খামার, দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাতকরণ, নদীর উন্নত মিলিকা বালি কৃষিজাত শিল্প স্থাপন,নদী খনন ও স্থায়ীভাবে তীর সংরক্ষণ ইত্যাদি সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করলে জাতীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখা সম্ভব বলে এ অঞ্চলের মানুষের ধারণা, আর মঙ্গার তিলক চিরতরে মুছে যাবে বলে তারা বিশ্বাস করে।যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হলে রৌমারী স্থলবন্দর এবং বালিয়ামারী কালাইয়েরচর বর্ডার হাট দিয়ে ভারতের সাথে বাংলাদেশের বৈদেশিক বাণিজ্যের প্রসার ঘটবে। ফলে এই জনপদের কর্মহীন মানুষ কাজ করার সুযোগ পাবে,কর্মহীন থাকবে না কেউ।

এমএসি/আরএইচ