কর্মস্থলে না এসেই বেতন নিচ্ছেন বিদ্যালয়ের দপ্তরি ইমরান 

বৃহস্পতিবার ৩ নভেম্বর ২০২২ ১৯:৩৩


:: শেখ সোহেল, বাগেরহাট জেলা প্রতিনিধি ::

বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জ উপজেলার ৯৭ নং একরামখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দপ্তরি  ইমরান খান তিনি স্কুলে হাজির না হয়ে ও বেতন তুলে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। এমনকি সময়মত হাজিরা খাতায়ও স্বাক্ষর করেন না ইমরান।

তার স্থানে মাসিক পাঁচ হাজার টাকায় মোঃ রায়হান জজ নামের এক যুবক দায়িত্ব পালন করে আসছে। দীর্ঘদিন ধরে মোঃ ইমরান খানের এসব অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে শিক্ষকরাও কথা বলেনা ভয়ে। কেউ যদি তার বিরুদ্ধে কথা বলে তার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেন ইমরান।
এমনকি প্রতিবাদকারীকে মারধরের অভিযোগও রয়েছে দপ্তরি মোঃ ইমরান খানের বিরুদ্ধে।

এছাড়াও এলাকায় প্রভাব বিস্তার, মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি ও প্রতিপক্ষকে মারধরসহ নানা অভিযোগ রয়েছে মোঃ ইমরান খানের বিরুদ্ধে। মোরেলগঞ্জ থানায় বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ৬টি মামলা রয়েছে মোঃ ইমরান খানের নামে। একটি মামলায় ২০২১ সালের ২৩ নভেম্বর থেকে ২০২২ সালের ২০ ফেব্রুয়ারী পর্যন্ত কারাগারে ছিলেন মোঃ ইমরান খান।

বৃহস্পতিবার (০৩ নভেম্বর) বেলা ১১টায় ৯৭ নং একরামখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার ও সহকারি শিক্ষক নিয়াজ পারভেজ দায়িত্ব পালন করছে। যখন জানতে চাওয়া হয় তখন দপ্তরি কোথায়  ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার বলেন, বাজারে গেছে, আবার বলেন মোরেলগঞ্জ ব্যাংকে গেছে।

দপ্তরির হাজিরা খাতা দেখতে চাইলে বলেন, উর্দ্ধোতন কর্মকর্তার অনুমতি লাগবে। পরবর্তীতে সহকারী উপজেলা শিক্ষা অফিসার সজল মহোলী হাজিরা খাতা দেখানোর নির্দেষ দিলে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার হাজিরা খাতা দেখান।

হাজিরা খাতায় দেখাযায়, দপ্তরি মোঃ ইমরান খান সর্বশেষ ২৭ সেপ্টেম্বর স্বাক্ষর করেছেন। পুরো অক্টোবর মাস এবং নভেম্বরের ৩ তারিখ পর্যন্ত হাজিরা খাতায় কোন স্বাক্ষর করেননি তিনি। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে পুরো ৩০ দিন এবং অক্টোবরে ৩১ দিন দায়িত্ব পালন করেছেন মর্মে প্রতিবেদন দিয়ে পূর্নাঙ্গ ১৪ হাজার ৪৫০ টাকা বেতন প্রদানের জন্য সুপারিশ করেছেন ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার।

এসব বিষয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিরঞ্জন কুমার বলেন, স্বাক্ষর দেওয়ার নিয়ম ছিল, কিন্তু সে স্বাক্ষর দেয়নি। স্বাক্ষর ছাড়াই কেন পূর্নাঙ্গ বেতন পাওয়ার প্রতিবেদন প্রদানের সুপারিশ করেছেন এমন প্রশ্নে কোন সদুত্তর দিতে পারেননি এই শিক্ষক।

চান মিয়া শিকদার নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমাদের ছেলে-মেয়ে যখন ভর্তি হইছে, তখন তো দেখছি সব কাজ রায়হান জজ করেছে। রায়হানইতো স্কুলে দায়িত্ব পালন করেন। ইমরান তো বিভিন্ন জায়গায় রাজনীতি করে বেড়ায়। স্থানীয় অনেকে জানেই না যে ইমরান খান এখানের দপ্তরি।

বিদ্যালয়ের বিভিন্ন নথি ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানাযায়, ২০১৫ সালের ২২ জানুয়ারি মোরেলগঞ্জ উপজেলার চন্দনতলা গ্রামের মোঃ ইউসুফ আলী খানের ছেলে মোঃ ইমরান খান ৯৭ নং একরামখালী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি হিসেবে যোগদান করেন। যোগদানের পর স্থানীয় মোঃ আমিনুল ইসলাম ২ বছর ৬মাস নামের এক যুবক মাসিক ২ হাজার ৫০০ টাকা।

বেতনে ইমরানের বদলি দায়িত্ব পালন করেছেন। পরবর্তীতে মোঃ রাসেল স্বর্নমদ নামের আরেক যুবক মাসিক ৪ হাজার টাকা বেতনে দায়িত্ব পালন করেছেন তিন বছর। বর্তমানে মাসিক ৫ হাজার টাকা বেতনে স্থানীয় মোঃ রায়হান জজ নামের এক যুবক দায়িত্ব পালন করছেন। আট বছরের চাকুরী জীবনে কখনও নিজের দায়িত্ব পালন করেননি স্থানীয়ভাবে প্রভাবশালী এই মোঃ ইমরান খান।

বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক গোপাল কৃষ্ণ মন্ডল বলেন, ২০১৫ সালের পরে আমি দুই বছর দায়িত্বে ছিলাম। এই সময়ে ইমরান কখনও দায়িত্ব পালন করেনি। সে রাজনৈতিক কাজে দৌড়াতৌড়ি করত। তাকে দায়িত্ব পালন করতে অনুরোধ করায় আমাকে লাঞ্চিত হতে হয়েছে।

বিদ্যালয়ের সাবেক সভাপতি মোঃ সোহাগ বলেন, ঝড়-বন্যাসহ বড় ধরনের বিপদ আপদেও ইমরানকে ফোন করলে সে স্কুলে আসেনি। তার লোক পাঠিয়ে দিত।

এ বিষয়ে জানতে বর্তমান সভাপতি মোঃ জাহিদকে ফোন করলে তিনি সবকিছু শুনে পরে কথা বলব বলে ফোন কেটে দেন।

বদলি দায়িত্ব পালনকারী মোঃ রায়হান জজকে ফোন করা হলে তার মুঠোফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।টিএনও (উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা)‘র উপরে আদালত রয়েছে। আদালতের উপরে হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট রয়েছে। আমরা সেখানে বুঝব।

এ বিষয়ে বাগেরহাট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মুঃ শাহ আলম বলেন, বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সঠিক দতন্ত পূর্বক সত্যতা পেলে দপ্তরির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। 

এমএসি/আরএইচ