কলারোয়ায় আসন্ন ইউপি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তের প্রচারণায় ব্যস্ত

শনিবার ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২১ ১১:৫০


:: এস, এম, হাবিবুল হাসান, সাতক্ষীরা প্রতিনিধি ::

 

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীরা শেষ মুহুর্তের গণসংযোগ, কর্মীসভা, বৈঠক, মতবিনিময়, ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ভোট প্রার্থনায় ব্যস্ত সময় পার করছেন। ব্যানার, পোস্টোর শোভা পাচ্ছে সবখানে গোটা ইউনিয়ন জুড়ে। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর কলারোয়ার ১২টি ইউনিয়নের মধ্যে ১০টি ইউনিয়ন পরিষদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারদের ভাবনা জনমত, জনমন, জনভাষ্যে কোন প্রার্থী জিততে পারে তার সবকিছুই নির্ভর করছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর।

উপজেলা নির্বাচন অফিস সুত্রে জানা গেছে, ১০টি ইউপিতে চেয়ারম্যান প্রার্থী ৩৮জন, সাধারণ ওয়ার্ডের সদস্য পদে ৩৮৫জন ও সংরক্ষিত মহিলা মেম্বর পদে ১২৪জন প্রার্থী নির্বাচনে অংশ গ্রহন করছেন। আসন্ন ১০টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৫জন সরকারি কর্মকর্তাকে ২টি করে ইউনিয়নের রিটার্নিং অফিসারের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা হলেন- ১নং জয়নগর ও ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে উপজেলা সমাজসেবা অফিসার মো.নুরে আলম, ৩নং কয়লা ও ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস, ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ও ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে উপজেলা কৃষি অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম, ৬নং সোনাবাড়িয়া ও ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল হামিদ এবং ১১নং দেয়াড়া ও ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসার এসএমএ সোহেল।

উপজেলার নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, কলারোয়ায় উপজেলার জয়নগর, জালালাবাদ, কয়লা, লাঙ্গলঝাড়া, কেঁড়াগাছি, সোনাবাড়িয়া, চন্দনপুর, হেলাতলা, দেয়াড়া ও  যুগিখালি ইউনিয়নে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। এই ১০টি ইউনিয়নে মোট ভোটকেন্দ্র ৯১টি। তারমধ্যে একটি ইউনিয়নে ০৯টি ভোটকেন্দ্রের ৪৪টি ভোটকক্ষে এবারই প্রথম ইলেকটোরাল (ইভিএম মেশিনে) ভোট দেবেন ভোটাররা। উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে মোট ভোটার ১ লক্ষ ৪৪ হাজার ৪৭০ জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৭১৭৭৪ ও মহিলা ভোটার ৭২৬৯৬।

উপজেলা নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস আরও জানান, ‘আসন্ন ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটার রয়েছে ১নং জয়নগর ইউনিয়নে ১২৭৫৫জন, এর মধ্যে পুরুষ ৬৩৪৯ ও মহিলা ৬৪০৬, ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে ১৫৬১২জন, এর মধ্যে পুরুষ ৭৮৮০ ও মহিলা ৭৭৩২, ৩নং কয়লা ইউনিয়নে ৭৫৭৪জন, এর মধ্যে পুরুষ ৩৭৬১ ও মহিলা ৩৮১৩, ৪নং লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নে ৯৬২৭জন, এর মধ্যে পুরুষ ৪৭৪১ ও মহিলা ৪৮৮৬, ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে ১৯২২৪জন, এর মধ্যে পুরুষ ৯৬৬২ ও মহিলা ৯৫৬২, ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে ২২২০৫জন, এর মধ্যে পুরুষ ১১১৬৭ ও মহিলা ১১০৩৮, ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে ১৮১৫১জন, এর মধ্যে পুরুষ ৯০৯৮ ও মহিলা ৯০৫৩, ১১নং দেয়াড়া ইউনিয়নে ১৭৯৮৭জন, এর মধ্যে পুরুষ ৯০৪৮ ও মহিলা ৮৯৩৯ এবং ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে ১৩৪৪৬জন, এর মধ্যে পুরুষ ৬৭৬৯ ও মহিলা ৬৬৭৭জন।’

নির্বাচন অফিসার মনোরঞ্জন বিশ্বাস জানান, ১নং জয়নগর ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১৫জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪০জন, ২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১৪জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪০জন, ৩নং কয়লা ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১০জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩১জন, ৪নং লাঙ্গলাঝাড়া ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ২৭জন, ৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১০জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৫জন, ৬নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৭জন, ৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ৯জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৭জন, ৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১৮জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৮জন, ১১নং দেয়াড়া ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ৪৫জন, ১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য পদে ১২জন, সাধারণ সদস্য পদে ৩৬জন।

এ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী সিংহভাগ প্রার্থী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের। সর্বশেষ অবস্থানুযায়ী কোন প্রার্থীর জিততে পারে, নির্বাচনী পরিবেশ কেমন ইত্যাদিকে ছাড়িয়ে জনমনে শংকা আদৌ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা সেটা নিয়েই। ইতোমধ্যে কয়েকটি ইউনিয়ন প্রতিপক্ষের নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর, প্রার্থীসহ প্রতিপক্ষের কর্মী-সমর্থকদের মারপিট, হুমকি, প্রচার মাইক ভাঙচুর ইত্যাদি পরিলিক্ষত হয়েছে। বিএনপি ও শক্তিশালী অনেক প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করায় নির্বাচনী উৎসব-আগ্রহ কিছুটা হলেও হ্রাস পেয়েছে।

নারীঘটিত কেলেঙ্কারি, বীর মুক্তিযোদ্ধাসহ অনেককে মারপিট-লাঞ্ছিত কারী, অবৈধভাবে খাস জমি দখলকারী, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী, চোরাকারবারি, চোরাচালানি সিন্ডিকেটের প্রত্যক্ষ মদদদাতা, চরম দুর্নীতিবাজ, ত্রাসী, অপরাধচক্রে সম্পৃক্ততা, গত কয়েক বছরে আঙুল ফুলে কলাগাছ হওয়া ‘কতিপয় নেতা’ চেয়ারম্যান-মেম্বরের প্রার্থী তালিকায় থাকায় উষ্মা প্রকাশ করেছেন কেউ কেউ।

নির্বাচনী আচরণবিধিকেও অনেক স্থানে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখানো হয়েছে। দেয়ালে পোস্টার সাটানো নিষেধ থাকলেও প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় আটা দিয়ে দেয়ালে, গাছে পোস্টার সাটানো বা লাগিয়ে রাখা দেখা গেছে। এছাড়াও পোস্টারে প্রার্থী ও দলীয় প্রধানের ছবি ছাড়া আর কোন ছবি ব্যবহারের অনুমতি না থাকলেও কয়েকজন নৌকার প্রার্থীদের পোস্টারে এর ব্যতয় দেখা গেছে।

অন্যদিকে, অর্থের ছড়াছড়ি আর কর্মী-সমর্থকদের বাড়াবাড়িও উদ্বেগজনক। নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া ইউনিয়নগুলোর বিভিন্ন এলাকাযর নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে কথা বলে এমনটাই জানা গেছে।
তারা জানান, ‘ভোট নিরপেক্ষ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়েই তাদের আশঙ্কা। নিরপেক্ষ হলে যে প্রার্থী যোগ্য ও জনপ্রিয় এবং জনগণ যাকে চাই সেই নির্বাচিত হলে কোন প্রশ্নই ওঠে না। কিন্তু জোর করে, প্রভাব খাটিয়ে, বিভিন্ন মেকানিজম প্রয়োগ করে ফলাফল অনুকূলে নিলে সেটা জনগণ ভালো চোখে দেখে না, সেই প্রার্থীকেও জনগণ সারা জীবনের জন্য মনে মনে ধিক্কার জানাই।’

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অনেক প্রান্তিক আওয়ামী লীগের মানুষেরা জানান, ‘ইউপি নির্বাচনে প্রার্থীরা মূলত উপজেলা আওয়ামী লীগের দুই গ্রুপের প্রত্যক্ষ আশীর্বাদপুষ্ট ও সমর্থিত। একপক্ষ চাচ্ছে না অপর পক্ষের সমর্থিত প্রার্থীরা জিতুক। এমনকি উপজেলা আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা তাদের নিজেদের স্বপক্ষের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীর কর্মীসভায় একাধিকবার অংশগ্রহণ করলেও অপরপক্ষের নৌকা প্রতীকের প্রার্থীদের কর্মীসভায় যাওয়া তো দূরে থাক, সেসব ইউনিয়নেও একটিবার তাদের পক্ষে দেখা যায়নি।’

তারা আরো বলেন, ‘কতিপয় নেতারা নিজেদের ব্যক্তিগত স্বার্থে কখনো নৌকা প্রতীকের পক্ষে ঢাকঢোল পেটান, আবার একইভাবে ব্যক্তিগত স্বার্থে বিদ্রোহী প্রার্থীর পক্ষেও পক্ষপাতিত্ব করেন। তবে আমরা নিরপেক্ষ ভোট আশা করছি। যোগ্য প্রার্থী ও ভালো মানুষ দেখেই ভোট দিব। কারণ প্রায় সকল প্রার্থী আওয়ামী লীগের ঘরনার।’

অতিসম্প্রতি ভালো অবস্থানে থাকা প্রার্থীদের টাকা নিয়ে দৌড়ঝাপ করতে দেখা গেছে বলে তাদের ঘনিষ্ঠজনরা জানিয়েছেন। তারা বলছেন, ‘প্রার্থীরা তাদের উপরের কতিপয় নেতাদের টাকা দিয়েছেন, আবার সেই কতিপয় নেতাদের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রশাসনের কতিপয় ব্যক্তিদের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করার জন্য চেষ্টা চালানো হচ্ছে।’

তবে এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে নারাজ। এমনকি প্রশাসনের কাদের টাকা দিচ্ছেন তার সত্যতা যাচাই করাও সম্ভব হয়নি।

জামায়াতের অনেক ব্যক্তিরা জানান, ‘কট্টরপন্থী জামাতের মহিলা ও পুরুষ ভোটাররা নৌকার বিপক্ষেই ভোট দিবেন।’ তারা আরো জানান, ‘নৌকার প্রার্থী যেমন আওয়ামী লীগের তেমনি নৌকার বিরুদ্ধে দাঁড়িয়েছেন সেই বিদ্রোহী প্রার্থীও আওয়ামী লীগের। তাহলে ভোট দিলে তো সেই আওয়ামী লীগেরই যাবে। সেক্ষেত্রে তারা ভোট দিতে গেলে বা ভোট দিতে পারলে এমন ভালো প্রার্থীকে ভোট দিবেন যাদের কারণে শান্তিতে বসবাস করতে পারেন বা অযথা হয়রানি না করেন।’

বিএনপি’র প্রান্তিক পর্যায়ের ব্যক্তিরা জানান, ‘বিভিন্ন ইউনিয়ন বিএনপি’র নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা বিভিন্ন প্রার্থীর পক্ষে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে কাজ করছেন বা সমর্থন যুগিয়েছেন। দলগতভাবে কোন একক প্রার্থীর পক্ষে যাননি। এমনও দেখা গেছে ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি এক প্রার্থীর পক্ষে, সাধারণ সম্পাদক আরেক প্রার্থীর পক্ষে, সাংগঠনিক সম্পাদক বা অন্য নেতারা অন্য আরেক প্রার্থীর পক্ষে।’ তবে তাদের বক্তব্যও একই। বলছেন, ‘আদৌ ভোট সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হবে কিনা? ভোট যাকেই দেই অমুক প্রার্থীই তো পাস করবে বা পাস দেখাবে।’

আসন্ন ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে জনমতে এগিয়ে যারা সেটার হিসাব-নিকাশ বেশ জটিল। নানান পরিসংখ্যন, দিক, হিসাব-নিকাশ, লাভ-লোকসান, অর্থের ছড়াছড়ি, কর্মী-সমর্থকদের বাড়াবাড়ি, প্রতিদ্বন্দ্বি প্রার্থীদের ইমেজ, রাজনৈতিক বিশ্লেষন, গ্রুপিং, স্থানীয় অবস্থান ইত্যাদির আলোকে জয়-পরাজয় নির্ভর করে। তবে অনেক ইউনিয়নে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে আভাস পাওয়া যাচ্ছে। জনমত আর জনমনের মনোভাবে এমনটাই উঠে আসছে। তবে এটি সম্পূর্ণই ধারণা নির্ভর, এই ধারণা মিলতেও পারে আবার মিলতে নাও পারে। জনমত, জনমন, জনভাষ্যে কোন প্রার্থী জিততে পারে তার সবকিছুই নির্ভর করছে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের উপর।

সেই জনমতের জনভাষ্যে ১নং জয়নগর ইউনয়নের ৫জন প্রার্থীর সকলেই আ.লীগ। সেখানে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়দেব কুমার সাহার (আনারস প্রতীক) সাথে মূল লড়াই হতে পারে আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ছিদ্দিকুর রহমান (চশমা প্রতীক) ও আ.লীগের প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান শামছুদ্দিন আল মাসুদ বাবুর (নৌকা প্রতীক)। পাশাপাশিই আছেন সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত তপন সাহার স্ত্রী আ.লীগ নেত্রী বিশাখা সাহাও (অটো রিকসা)। তবে একেবারে ফেলে দেয়া যাচ্ছে না আরেক আ.লীগ নেতা আব্দুল আজিজ বিশ্বাসকেও (মোটর সাইকেল)। শেষমেশ এখানে জয়দেব অথবা ছিদ্দিকুরের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

২নং জালালাবাদ ইউনিয়নে একই গ্রামের ৩ প্রার্থীর মধ্যে আ.লীগের সভাপতির ছেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহাফুজুর রহমান মিশানের (আনারস প্রতীক) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পরে নৌকার প্রার্থী অধ্যাপক আমজাদ হোসেনের। পরপরই থাকতে পরেন দলটির বিদ্রোহী প্রার্থী বর্তমান ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদও (চশমা)। শেষমেশ এখানে মিশানের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৩নং কয়লা ইউনিয়নে ৩ প্রার্থীর মধ্যে আ.লীগ স্বতন্ত্র প্রার্থী শেখ সোহেল রানার (মোটর সাইকেল) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে বিএনপি স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.রফিকের (আনারস)। এই দুই প্রার্থীর মধ্যে যে কেউ জিততে পারেন খুব অল্প ভোটের ব্যবধানে। বেশ পিছিয়েই থাকতে পারেন আ.লীগের প্রার্থী আসাদুল ইসলাম (নৌকা)। শেষমেশ এখানে সোহেল রানা বা রফিকের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৪নং লাঙ্গলঝাড়া ইউনিয়নে প্রার্থী দু’জনই আ.লীগ। সেখানেও হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে জনমতে নৌকার প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবুল কালাম দলমত নির্বিশেষের ভোটে জিততে পারেন। আ.লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মাস্টার নুরুল ইসলামের (আনারস) মূল ভরসা জামাতের ভোট। শেষমেশ এখানে আবুল কালামের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৫নং কেঁড়াগাছি ইউনিয়নে ৩জন আ.লীগ প্রার্থীদের মাঝে ত্রি-মুখি প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে। ইতিবাচক-নেতিবাচক, আলোচিত-সমালোচিত নানান কথামালা রয়েছে সীমান্তের চোরাচালানের অভয়ারণ্যখ্যাত ওই ইউনিয়নটিতে। ইউনিয়ন আ.লীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মারুফ হোসেন (মোটরসাইকেল) ও আরেক বহিষ্কৃত নেতা বর্তমান চেয়ারম্যান আফজাল হোসেন হাবিলের (আনারস) সাথে মূল লড়াই হতে পারে। সঙ্গে যুক্ত থাকবেন নৌকার প্রার্থী ভুট্টোলাল গাইনও। তবে ওই এলাকার জনপ্রিয় নেতা সাবেক চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন লাল্টু প্রবাসে থাকায় একটু বেকায়দায় পড়তে পারেন তার ভাই আফজাল হোসেন হাবিল। তেমনটা হলে মারুফ হোসেন ও ভুট্টোলাল গাইনের প্রতিদ্বন্দ্বিতাও হতে পারে। শেষমেশ এখানে মারুফ বা হাবিলের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৬নং সোনাবাড়িয়া ইউনিয়নে ৪জন প্রার্থী থাকলেও মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে দ্বি-মুখি। স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক চেয়ারম্যান বিএনপি নেতা এসএম শহিদুল ইসলামের (মোটর সাইকেল) সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী বেনজির হোসেনের। অপর দুই প্রার্থী আকবর আলী (আনারস) ও আলমগীর আজাদ (চশমা) থাকবেন বেশ পিছিয়ে। শেষমেশ এখানে শহিদুল ইসলামের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৭নং চন্দনপুর ইউনিয়নে আ.লীগ ঘরণার ৩ প্রার্থীর মধ্যে দ্বি-মুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। আ.লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী ইউনিয়ন যুবলীগের সাবেক সভাপতি ডালিম হোসেনের (আনারস) সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতে পারে স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল লতিফ মিঠুর (মোটরসাইকেল)। কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও ফেলে দেয়া যাবে না নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মনিরুল ইসলাম মনিকেও। শেষমেশ এখানে মিঠু বা ডালিমের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

৯নং হেলাতলা ইউনিয়নে ৫জন প্রার্থীর মধ্যে হতে পরে দ্বি-মুখি। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন একসময়ের বিএনপি ও বর্তমানে আ.লীগ ঘনিষ্ঠ স্বতন্ত্র প্রার্থী মোয়াজ্জেম হোসেনের (মোটর সাইকেল) সাথে জামায়াত প্রার্থী আবু তালেব সরদারের (চশমা)। নৌকার আনছার আলী সরদার, আ.লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী মাজেদ বিশ্বাস (আনারস) রয়েছেন পিছিয়ে। আর আরেক প্রার্থী ইকবাল হোসেন (ঘোড়া) কাগজে-কলমে। শেষমেশ এখানে মোয়াজ্জেম হোসেনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১১নং দেয়ড়া ইউনিয়নে ৬জন প্রার্থীর মধ্যে ত্রি-মুখি লড়াইয়ের সম্ভাবনা রয়েছে। মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পারেন স্বতন্ত্র প্রার্থী বিএনপি নেতা ইব্রাহিম হোসেন (মোটর সাইকেল), আ.লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী আব্দুল মান্নান (চশমা) ও নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মাহবুবুর রহমান মফের। অপর স্বতন্ত্র প্রার্থী আবু বককার সিদ্দিক (টেলিফোন), নাজমা পারভীন (টেবিল ফ্যান) ও মিনাজ উদ্দীন (আনারস) থাকবে বেশ পিছিয়ে। শেষমেশ এখানে ইব্রাহিম হোসেনের জয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

১২নং যুগিখালী ইউনিয়নে ৪ প্রার্থীই আ.লীগ। ব্যালটে নাম-প্রতীক থাকলেও ইতোমধ্যে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আলোচিত-সমালোচিত জাহাজমারি এবি পার্কের মালিক আবুল বাশার (ঘোড়া)। বাকী ৩ প্রার্থীর মধ্যে লড়াই দ্বি-মুখি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। আ.লীগের বিদ্রোহী স্বতন্ত্র প্রার্থী এরশাদ আলীর সাথে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে নৌকার প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান রবিউল হাসানের। পরপরই থাকতে পারেন আরেক স্বতন্ত্র প্রার্থী ওজিয়ার রহমানও (চশমা)। ওজিয়ার ও এরশাদ প্রায় সমানতালে ভোট পেলে বিজয়ী হবেন রবিউল হাসান। আর ওজিয়ার রহমান যদি কিছুটা ভোট কম পান তবে সেখানে জিতে যেতে পারেন এরশাদ আলী।

নিজের ভোট নিজে দিতে পারবেন’- এমন প্রত্যাশার কথা জানিয়ে সাধারণ ভোটাররা বলছেন, ‘যোগ্য প্রার্থীকেই তারা ভোট দিতে চান। নির্বাচন মূলত সকল ধর্ম-বর্ণ-গোষ্ঠির তথা সার্বজনীন আনন্দ উৎসব। সেই উৎসব যেনো অটুট থাকে। হার-জিত যেটাই হোক, সংশ্লিষ্ট প্রশাসন, প্রার্থী ও রাজনৈতিক দলগুলোর সদিচ্ছা থাকাটা জরুরী। আমরা সবাই কলারোয়ার সন্তান, দিন শেষে আমরা আমরা-ই।’


এমএসি/আরএইচ